জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই ব্যয় ছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ব্যয় বাড়ছে ১২৯ শতাংশ। ব্যয় বিবেচনায় দ্বাদশ নির্বাচন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
মূলত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভাতা, প্রশিক্ষণ, পরিবহন, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন খাতে এই অর্থ ব্যয় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় হবে প্রায় ৬৮০ কোটি টাকা। বাকি প্রায় ৯২০ কোটি টাকা ব্যয় হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে। নিরাপত্তা খাতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৭৪ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, পাঁচ বছরে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভাতা বেড়েছে। পরিবহন খরচ বেড়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘এটি বরাদ্দ। বরাদ্দ মানেই যে সব খরচ হবে তা নয়। জিনিসপত্রগুলো নির্দিষ্ট। খরচও নির্দিষ্ট। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য কম প্রয়োজন হলে সেই অনুপাতে খরচও কমবে।
পরিস্থিতি কেমন হবে সেটা অনুমান করা কঠিন। তাই নিরাপত্তায় বড় প্রস্তুতি রাখতে হচ্ছে।’
এদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামের কাছে এই খরচ বেশি বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘খরচটা একটু বেশি বেড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। ভাতা একেবারে দিগুণ কিভাবে হয় সেটা আমি বুঝতে পারছি না।’
নির্বাচনী ব্যয় বাড়ার পেছনে কারণ বলতে গিয়ে ইসি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নির্বাচনের প্রায় ২০০ খাত-উপখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া গত নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ বেড়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোটকেন্দ্র এবং দুই লাখ সাত হাজার ৩১৯টি ভোটকক্ষ ছিল। তখন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ছিলেন ছয় লাখ ৬২ হাজার ১১৯ জন। আর ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ছয় লাখ আট হাজার।
এবার ভোটার বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও দুই লাখ ৬০ হাজার ভোটকক্ষ ধরে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে ইসি। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রয়োজন হবে প্রায় ৯ লাখ। গত নির্বাচনে বিজিবি ৯০০ প্লাটুন নিয়োজিত থাকলেও এবার বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ প্লাটুনের চিন্তা রয়েছে। একইভাবে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যসংখ্যাও বাড়বে। যদিও এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে কতজন সদস্য মোতায়েন করা হবে, সেসংক্রান্ত পরিপত্র এখনো জারি করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নির্বাচনে ৪৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা চেয়েছে পুলিশ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের চাহিদা ছিল ১২৪ কোটি টাকা। গত জাতীয় নির্বাচনে চাহিদা কাটছাঁট করে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১২৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এবার আনসার ও ভিডিপি চেয়েছে ৩৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। গত নির্বাচনে এই বাহিনীকে দেওয়া হয় ২৪২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বিজিবি চেয়েছে ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত নির্বাচনে বিজিবি পেয়েছিল ৭৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
নির্বাচনে র্যাব চেয়েছে ৫০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা গত নির্বাচনে ছিল ২২ কোটি ১২ লাখ টাকা। সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা এখনো পাওয়া যায়নি।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দুই দিনের সম্মানি পাবেন। তাঁদের দায়িত্বের অংশ হিসেবে এই বরাদ্দ দেওয়ার চিন্তা করছে কমিশন। কর্মকর্তাদের মধ্যে এক দিনের জন্য ভাতা বাবদ প্রিজাইডিং অফিসার পাবেন আট হাজার টাকা, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার পাবেন ছয় হাজার টাকা এবং পোলিং অফিসার পাবেন চার হাজার টাকা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ টাকা। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয় ১৬৫ কোটি ৫০ হাজার ৬৮৭ টাকা।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ