প্রতিনিধি ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১০:৩৫:৩৯
নির্বাচনের আগে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে বিরোধীদলকে ঘায়েল করতে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে ভুয়া ভিডিও এবং খবর প্রচার করেছে সরকারের মদদপুষ্ট কিছু মিডিয়া। এর পেছনে প্রতি মাসে ডলারও খরচ করা হচ্ছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে হাতিয়ার বানিয়ে এবং ডলার খরচ করে বানোয়াট অপপ্রচার চালানোর এই মিশন নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে বৃটেনের পত্রিকা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
পত্রিকাটির এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী বছর পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেখানে কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং বিভক্তির লাগাম টানা যায় সেটা নিয়ে নীতিনির্ধাকরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে এসব বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং বিভক্তির কাজ শুরু হয়ে গেছে।
বিগত কয়েক মাসে সরকার সমর্থিত বেশ কিছু মিডিয়া এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ কিছু প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা বলে দিচ্ছে নির্বাচনের সময়টাতে কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির অপব্যবহার হতে পারে এবং ছোট বাজার গুলোতে এটা নিয়ন্ত্রণ করা কতটা কঠিন হতে পারে। এ ঝুঁকির বিষয়টি আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো উপেক্ষা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ভিত্তিক মিডিয়া গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তবুও এটি দেখিয়েছে এটা কীভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে। গতানুগতিক ছবি এবং ভিডিও এডিটিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এসব ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, কারো হাতে যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তি থাকে এবং তা দিয়ে ভুল ও মিথ্যা তথ্য গণহারে ছড়ানো হয় তখন সেটা কত বড় হুমকি হতে পারে সেটা হয়তো অনুমান করতে পারছেন।
বাংলাদেশে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী জানুয়ারি মাসের নির্বাচনকে সামনে রেখে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোটা দেশটির সংকটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলবে। শেখ হাসিনা বিরোধীদলের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে, যেভাবে বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটা প্রমাণ করে যে শেখ হাসিনা কারচুপির মাধ্যমে পরিস্থিতি তার অনুকূলে রাখতে চাইছেন। আর এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনসম্মুখে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে এক্সের একটি ভিডিও পোস্ট করে বিডি পলিটিকো নামের একটি অনলাইন পোর্টাল। এতে দেখা যায় ওয়ার্ল্ড নিউজের একটি নিউজ স্টুডিও যেখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে বিক্ষোভের দৃশ্য প্রচার করা হয় এবং সংবাদ উপস্থাপক বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং সহিংসতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে দায়ী করে।
লস এঞ্জেলেস ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি প্রতিষ্ঠান হেই জেন এই ভিডিওটি বানিয়েছে। এরকম ভিডিও বানানোর জন্য এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মাসে ২৪ ডলার পরিশোধ করতে হয়। এ বিষয়ে এক্স, হেই জেন এবং বিডি পলিটিকোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো উত্তর দেয়নি।
এরকম ভুয়া তথ্য ছড়ানোর আরেকটি উদাহরণ ফেসবুকে পোস্ট করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তৈরি করা একটি ডিপফেইক ভিডিও। এ ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে তারেক রহমান দলের নেতা-কর্মীদেরকে বলছেন গাজা নিয়ে কোনো কথা না বলতে যাতে যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট না হয়। দ্য টেক গ্লোবাল ইন্সস্টিটিউট এবং উইটনেস নামের দুইটি প্রতিষ্ঠান ভিডিওটি পর্যালোচনা করে বলেছে এটি ভুয়া এবং সম্ভবত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এটি বানানো হয়েছে।