প্রতিনিধি ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১২:১৪:৫৪
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের বাকি আর মাত্র ৮ দিন। এর আগে নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন দেশবাসী। তবে নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশ ঘিরে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। গত ২৮ অক্টোবর থেকেই রাজনীতির মাঠে অস্থিরতা। অবরোধ-হরতাল, নাশকতা-সহিংসতা যেমন চলছে, তেমনি আটক-গ্রেফতারসহ কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন আবার ভোটকে ঘিরে প্রচারণা-জনসংযোগসহ নানা তৎপরতা চলছে সারা দেশে। এসবের মধ্যেই দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপিত হবে।
সার্বিক দিক বিবেচনায় থার্টি ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে এবারও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এসব বিধিনিষেধ মেনে না চললে বা নিয়মের বাইরে গেলেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ঘটেছে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা। মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ঘটে অগ্নিকাণ্ড।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে ফানুস ওড়াতে গিয়ে রাজধানীর অন্তত ১০টি স্থানে আগুন লাগে। এর মধ্যে মাতুয়াইল স্কুল রোডের একটি বাড়িতে ফানুস থেকে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। একই রাতে ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৯০টি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, সব ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ফানুস ওড়ানো বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে সংস্থাটি। এসব বিধিনিষেধ না মেনে যদি কেউ নিয়মের বাইরে গিয়ে ফানুস ওড়ায় বা আতশবাজি ফোটানো অবস্থায় হাতেনাতে ধরা পড়ে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইটে মাঠে থাকবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সংস্থাটির একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউনিফর্ম পরা র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা নজরদারি করবেন। প্রস্তুত থাকবে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে নজরদারি করবে। সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহন ও পথযাত্রীদের তল্লাশি করা হবে।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, ভিআইপি, কূটনৈতিক মিশন এলাকায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।
এবার ইংরেজি নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষে মেট্রোরেল এলাকার আশপাশ থার্টি ফাস্টে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটি অনুরোধ করেছে, মেট্রোরেলের উভয় পাশে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারীদের ৩১ ডিসেম্বর উদযাপন উপলক্ষে ঘুড়ি, ফানুসসহ যেকোনও বিনোদন সামগ্রী না ওড়াতে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অন্যান্য বারের মতো এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে র্যাব। কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা শিগগিরই জানানো হবে।
ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার ( ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের নামে কেউ যদি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি কিংবা আতশবাজি, পটকা কিংবা ফানুস বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনলাইনে অথবা সরাসরি যারাই আতশবাজি, পটকা কিংবা ফানুস বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চলমান। আগামীতেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। কয়েকজনকে হাতেনাতে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কারও আনন্দের ফল যেন কারও কান্নার কারণ না হয়। ফানুস উড়ে গিয়ে কোনও বস্তি অথবা কারও বাসাবাড়িতে পড়লে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। এছাড়া অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানকে এ ব্যাপারে সচেতন করা। ফানুস-আতশবাজির পরিবর্তে ঘরোয়া কোনও অনুষ্ঠান করার কথা বলেন তিনি।
থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, সব সময়ই নগরবাসীকে নিরাপদে রাখতে যেকোনও উৎসবেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এবারও আমাদের নিরাপত্তার কমতি নেই। ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। অন্যান্য বারের মতোই এবারও নিরাপত্তাবলয় সাজানো হয়েছে। যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখা হবে।