সৌদি আরবের টাকার ঝনঝনানি চলতি গ্রীষ্মে ফুটবল বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। ইউরোপিয়ান একাধিক ক্লাবের কোচ এবং কর্তাব্যক্তিরা সৌদি ক্লাবগুলোর এমন স্বেচ্ছাচারী আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল। যে তালিকায় ছিলেন লিভারপুলের কোচ ইউর্গেন ক্লপের মত বড় নামও। আবার ইতালিয়ান কোচ মাউরিজিও সারিও জানিয়েছেন, আর্থিক প্রস্তাব বড় হলে তিনি নিজেও সৌদি আরবে পা রাখতে রাজি।
প্রাপ্য অর্থের চেয়ে অনেক বেশি বেতনে ইউরোপের বিভিন্ন দল থেকে তুরুণ এবং পরিণত খেলোয়াড়দের দলে টেনেছে সৌদি ক্লাবগুলো। অর্থের কারণে সেখানে পাড়ি জমিয়েছেন ফুটবলের অনেক নামী তারকাই। যেখানে আছে করিম বেনজেমা, নেইমার বা ফিরমিনো-কান্তেদের মত খেলোয়াড়।
এর একটা প্রভাবও দেখা গিয়েছে ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্পোর্টস স্টাডিজ (সিআইইএস) এর পরিসংখ্যানে। স্কোয়াড সাজানোর খরচের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্লাবের তালিকায় উঠে এসেছে সৌদি ক্লাব আল-হিলালের নাম। নেইমার জুনিয়ারকে দুলে নিতেই ১০০ মিলিয়ন ইউরো খসিয়েছে ক্লাবটি। অ-ইউরোপীয় ক্লাবের বিচারে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্কোয়াড তাদের।
প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ লিগ হিসেবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের জুড়ি মেলা ভার। ট্রান্সফারের ক্ষেত্রেও তাদের খরচের পরিমাণ চোখ কপালে তোলার মতোই। সেটারই প্রভাব দেখা গেল সম্প্রতি প্রকাশিত এই তালিকায়। ২০২৩-২৪ মৌসুম শুরুর আগে পর্যন্ত স্কোয়াডে থাকা খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে ১.১৫ বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে রেড ডেভিলরা।
হ্যারি ম্যাগুয়ার, রাসমুস হয়লান্ড, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, ক্যাসেমিরো, ম্যাসন মাউন্ট, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, অ্যান্টোনিসহ আরও অনেকেই এসেছেন ৫০ মিলিয়নের বেশি দামে।
মূলত পুরো ইংলিশ লিগের চিত্রটাই এমন। শীর্ষ ১০ ক্লাবের ৮টিই ইংল্যান্ডের। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটির পর আছে আর্সেনাল, টটেনহাম হটস্পার, লিভারপুল, নিউক্যাসল ইউনাইটেড এবং ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের নাম।
মহামারি করোনার সময় থেকে আর্থিক সংকটে পড়েছিল স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। লিওনেল মেসিকে আরও একবার দলে টানতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে এই আর্থিক কাঠামোর জন্য। নতুন খেলোয়াড় কেনার দিক থেকেও পিছিয়ে কাতালুনিয়ান জায়ান্টরা। তালিকায় তারা আছে ১৯ নম্বরে। শীর্ষে থাকা ইউনাইটেড শুধু ডিফেন্ডার কিনতেই বার্সার পুরো স্কোয়াডের চেয়ে বেশি খরচ করেছে।
বার্সেলোনার এমন পতনের সময়ে উত্থান ঘটেছে সৌদি ক্লাবগুলোর। ৩৮২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে শীর্ষে বিশে একমাত্র অ-ইউরোপিয় ক্লাব হয়েছে আল-হিলাল। সেরা পঞ্চাশেই আছে এই লীগের আরও তিন ক্লাব। আল-আহলি স্কোয়াড মূল্যের তালিকায় ৪৪তম স্থানে রয়েছে। ক্রিশ্চিয়ান রোনালদোর আল-নাসর আছে ৪৬তম স্থানে। আর আল-ইত্তিহাদের অবস্থান ৫০তম স্থানে।
গ্রীষ্মের বড় চমক ছিল ইন্টার মায়ামি। লিওনেল মেসিকে দলে ভিড়িয়ে চমক উপহার দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবটি। দলে এসেছেন সার্জিও বুসকেতস এবং জর্ডি আলবার মত বড় নামও। তবে সিআইইএস এর গবেষণায় সেরা ১০০ তেও জায়গা হয়নি মায়ামি শহরের ক্লাবটির। ক্লাবটি বোনাস, ভাতা ও ক্লাবের লক্ষ্য পূরণ সাপেক্ষে অন্যান্য আর্থিক পুরস্কারসহ দলবদলের খরচে অনেকটাই পিছিয়ে আছে বলে জানিয়েছে সিআইইএস।
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বের মোট ১৯টি দেশের ক্লাব সিআইইএসের এই শীর্ষ ১০০-এর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯টি ক্লাব ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের। তালিকায় জায়গা হয়নি শুধু নবাগত লুটন টাউনের।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পর আছে ইতালিয়ান সিরি-আ এর মোট ১৫টি ক্লাব জায়গা পেয়েছে এই তালিকায়। স্প্যানিশ লা লিগা থেকে জায়গা পেয়েছে ১২টি ক্লাব। ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ ও জার্মান বুন্দেসলিগা আছে যৌথভাবে চারে। দুই লিগেরই ১১টি করে ক্লাব সিআইইএসের শীর্জাষ তালিকায় রয়েছে।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ