প্রতিনিধি ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১০:৩২:৫৯
জাহান্নামী মানুষ ২ রকম
ক) যারা অমুসলিম, মুসলিম নয় তারা যাবেই।
খ) যারা মুসলিম হয়েও জাহান্নামে যাবে এমন ১৭ শ্রেনীর লোক পাওয়া যায় বিভিন্ন সহীহ হাদিসে এসেছে, আল্লাহ কোন কালে মাফ করলে পরে তারা জানাতে যাবে। কিন্তু যে একবার জান্নাতে প্রবেশ করবে সে আর জান্নাত থেকে বের হবেনা, বা তাকে বের করা হবেনা।
আসুন জেনে নিই সেই ১৭ শ্রেনীর মানুষদের পরিচয়,
হয়তো সতর্ক হয়ে যেতে পারবো আমরা ———–
১। যে শরীর হারাম দিয়ে গঠিত। অর্থাৎ হারাম উপায়ে অর্থ অর্জন কারী ব্যক্তি। তা দিয়ে জামা কাপড় কেনা, কিছু কিনে খাওয়া, কিছু কিনে অন্যত্র জমা রাখা, জমি কেনা ও হতে পারে।
২। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।
শরিয়তের কোন কারণ ছাড়া কথায় বার্তা – উঠা বসা বন্ধ করে দেওয়া।
৩। প্রতিবেশী কে যে কস্ট দেয় যে। কোন ময়লা, আবর্জনা, কিছুর পচা গন্ধ বা চিৎকারের কথা বার্তা, বা গান বাজানোর দ্বারা।
৪। মা বাবার অবাধ্য সন্তান। কোন কুফুরী বা শিরকী কাজের আদেশ মানবেন না, এটা ছাড়া যে কোন আদেশ আপনি মানতে হবে। তবে ব্যবহার খারাপ করা যাবেনা।
৫। উগ্র মেজাজের মানুষ, সকলকে দমায়ে রাখতে চায় যে, কঠিন স্বভাবের মানুষ, বিনয় বিনম্রতা হীন, খটমট করে সারাক্ষন।
৬। যে সকল মনিবেরা তাদের অধিনস্থ দেরকে ধোকা দেয়। সে কোন কোম্পানীর মালিক ও হতে পারে, কোন লিডার ও হতে পারে।
৭। অন্যের সম্পদ কে অন্যায়ভাবে আত্মসাত কারী ব্যক্তি।
৮। উপকার করে খোটা দান কারী ব্যক্তি।
৯। চোগলখোর ব্যক্তি। এর দোষ ওর কাছে, ওর দোষ এর কাছে বলে, মানুষের মধ্যে “লাগিয়ে দেয়”। এর মাধ্যমে সবার কাছে ভালো থাকতে চায় এমন লোকও।
১০। অন্যের বাবা কে নিজের বাবা হিসেবে পরিচয় দেওয়া। অনেক সময় পালক সন্তান রা এরকম করতে পারে, যে জন্ম দিলো তাকে না বলে যে পালন করে তাকে বাবা বলে পরিচয় দেয়।
১১। যার মনের ভেতর অহংকার আছে, যে গর্ব। অহংকার করে। অহংকার পড়াশোনা, পোশাক, চেহারা, মান সম্মান, কর্ম বা বেতনের ক্ষেত্রেও করতে পারে। অন্যকে নিজের চেয়ে এসকল দিক থেকে কোন একটিতে বা কয়েকটিতে ছোট ভাবা / নিজেকে বড়, ভালো , উন্নত ভাবা ই অহংকার।
১২। যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ফলো করেনা, তার নির্দেশকে মান্য করেনা ।
১৩। যে মহিলা অকারনে তালাক কামনা করে / তালাক চায় সেই মহিলা। কআরণ, শয়তান সবচাইতে খুশী হয় সেই যায়গাতে যেখানে ২ জনের সংসারে বিচ্ছেদ ঘটে যায়। আর তালাক চাওয়া ও সেই অথের উপায় ই।
১৪। দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে যারা এলেম শেখে। যেমন – লোকে মাওলানা বলবে, দাওয়াত টাওয়াত খাওয়া যাবে, লোকে ভাও বলবে ও কথা শুনবে, এরকম উদ্দেশ্য থাকিলে । আলাহকে খুশি করা ছাড়া অন্য কোন ধান্ধায় এলেম অর্জন করলে। বা যে কোন আমল করলে।
১৫। দাড়ি বা চুলে কোন মেহেদী মিশ্রন ছাড়া পিউর কালো কলপ ব্যবহার করলে।
১৬। যে কোন ভালো কাজ করে তা ফলাও ও প্রচার করা।
১৭। ওয়ারিশদেরকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে ।
আমরা যাচাই করি, আমরা যেন এই ১৭ শ্রেনীর ভেতর না পড়ী, পড়ে থাকলে মাফ চাই আল্লাহর কাছে ও দূরে চলে যাই সেই গুনাহ থেকে, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে জান্নাত আশা করতে পারি ইন শা আল্লাহ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘২ শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামে যাবে। যাদের আমি এখনো দেখি নি। (রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে তাদের আত্মপ্রকাশ হয়নি) তারা হল-
> এমন কিছু লোক যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের মত লাঠি। তারা তা দিয়ে জনগণকে মারধর করবে।
> আর ওই সব উলঙ্গ-অর্ধ উলঙ্গ বেপর্দা নারী যারা (নিজেদের চলাফেরা ও বেশ-ভূষায়) মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং নিজেরাও অন্য মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা উটের মত উঁচু হবে এবং একপাশে ঝুঁকে থাকা চূড়ার মতো কেশ রাশি শোভা পাবে। এ সব নারী জান্নাতে তো যাবেই না বরং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না অথচ বহুদূর থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (মুসলিম)
তবে আশার বাণী হলো-
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের সব গোনাহ মাপ করে দিবেন। যদিও উপরোক্ত কাজগুলো কবিরাহ গোনাহের অন্তর্ভূক্ত।
যারা উল্লেখিত কাজগুলো থেকে তাওবাহ করে আল্লাহর পথে ফিরে আসবে। আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাওবাকারী বান্দাদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। উল্লেখিত গোনাহে জড়িত ব্যক্তি যদি এ গোনাহ থেকে ফিরে আসে এবং এর প্রতিকারমূলক কাজ করে এবং পুনরায় এসব গোনাহ না করে যথাযথভাবে তাওবাহ করে তবে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন। কেননা মহান আল্লাহ তাওবাহকারীকে ভালোবাসেন। বান্দাহকে ক্ষমা করতেও ভালোবাসেন।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তাআলা নিজ দয়া ও ইনসাফের ভিত্তিতে এদের মধ্যে যাকে খুশি ক্ষমা করে দেবেন যদি সে শিরক থেকে দূরে থাকে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে শরিক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)
তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেল যে, (জীবিত অবস্থায়) সে ভালো করে জানত, ‘আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো সত্য মাবুদ নেই, সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম)
আবার পরকালের ফয়সালার সময় ঈমান থাকা সত্বেও আল্লাহ তাআলা যাদেরকে ক্ষমা করবেন না তাদেরকে তিনি জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। পাপের শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
কবিরা গোনাহে জড়িত ব্যক্তিরা প্রথম পর্যায়ে জান্নাতে প্রবেশকারীদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে না বরং জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করে পরিশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কোনো তওহীদপন্থী ব্যক্তিই কাফেরদের মতো চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে না। আর এটাই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদাহ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসে ঘোষিত জান্নাতের অন্তরায় কাজগুলো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ বিধান যথাযথ বাস্তবায়ন করে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।