সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের পর থেকেই মামলা তুলে নিতে কলেজছাত্রী ও তার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়ি ফিরতে পারছেন না কলেজছাত্রী। তাকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী ওই কলেজ ছাত্রী। ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি যুবলীগ নেতাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়কে স্থানীয় একটি পত্রিকা অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করে ধর্ষণের স্বীকার কলেজছাত্রী বলেন, মামলার আসামি যুবলীগ নেতা আসলাম প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ আমি মামলার বাদী হয়ে আসামির হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার বাড়িতে কেউ নাই। শুধু আমার মা বাড়িতে আছে। মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন যুবলীগ নেতা ও তার লোকজন। একারনে বাড়ির সবাই পলাতক। আমি বাড়িতে ফিরতে পারছি না। অথচ, আলী আসলাম প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না।
ভুক্তভোগী ওই নারী আরও বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে কাজিপুর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজীসহ উপজেলার শীর্ষনেতারা মামলা তুলে নিতে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এর উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী ওই যুবলীগ নেতা আলী আসলামের স্ত্রীর বান্ধবী ও উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের মো. আব্দুর রশিদের মেয়ে ও সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। অভিযুক্ত আলী আসলাম কাজিপুর সদর ইউনিয়নের সিংড়াবাড়ি গ্রামের শাহ আলীর ছেলে।
মামলার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, কাজীপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম আমার (কলেজ ছাত্রী) বান্ধবির স্বামী। সেই সুবাদে আসলাম আমার পরিচিত। আলী আসলাম যুবলীগের নেতা হওয়ায় সে বিভিন্ন সময় সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাতো। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল যুবলীগ নেতা আলী আসলাম কলেজছাত্রীকে কাগজপত্র নিয়ে তার বাড়িতে আসতে বলেন। পরে তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে যুবলীগ নেতা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কলেজছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে বিয়ের প্রলোভন ও সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে যুবলীগ নেতা আলী আসলাম কলেজ ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এরই একপর্যায়ে কলেজছাত্রী বিয়ের জন্য যুবলীগ নেতাকে চাপ সৃষ্টি করলে সে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেয়।
এরপর গত ১১ নভেম্বর বিয়ের দাবীতে যুবলীগ নেতা আলী আসলামের বাড়িতে অনশন করে কলেজছাত্রী। রাতে বিয়ের জন্য কাজী অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে যুবলীগ নেতা আসলাম তার এক পরিচিত ছোট ভাই আরিফের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে যুবলীগ নেতা ভয়ভীতি দেখিয়ে কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক হয়নি এই মর্মে স্বীকারোক্তিমূলক একটি ভিডিও ধারণ করে। পরে এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে। মিথ্যা স্বীকারোক্তি ফেসবুকে প্রচার ও ওই কলেজ ছাত্রীর পরিবারের প্রতি ভয়ভীতি চলমান থাকায় গত ৯ ডিসেম্বর বিকেলে কলেজছাত্রী আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে বিষপান করে। পরবর্তীতে তাকে চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১০ ডিসেম্বর যুবলীগ নেতা আলী আসলামকে একমাত্র আসামি করে কাজীপুর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন কলেজছাত্রী। মামলার তিনদিনেও যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ