প্রতিনিধি ১ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৯:১৯:১১
সরকার পতনের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত জোরদারের কথা ভাবছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। ইতিমধ্যে তারা এর প্রস্তুতিও নিচ্ছে। এজন্য নিজেদের গুছিয়ে নিতে কিছুটা সময় নিচ্ছে তারা। এরই অংশ হিসেবে গত ৩০শে নভেম্বর রাজধানীর তোপখানায় শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বৈঠক করেছে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক দলগুলো। বৈঠকে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই এই কর্মসূচি নির্ধারণ করে তারা রাজপথে নামবে। তবে এই কর্মসূচি এখনো নির্ধারিত হয়নি। সামনে যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আরও বৈঠক ও আলোচনা করবে বিএনপি। ওই সব বৈঠকে চূড়ান্ত কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। কর্মসূচি নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিই চলবে।
নির্বাচনের প্রচারণায় প্রথম দিন ১৮ই ডিসেম্বর থেকে ভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিয়ে দলটি রাজপথে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের জন্যই মূলত এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে কর্মসূচির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সেখানে ঘেরাও, গণমিছিল ও বিক্ষোভসহ জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দেয়ার কথা বলেছেন নেতারা।
এই প্রসঙ্গে সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনরত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান এবং তল্লাশিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে বিএনপি এখন তছনছ। তারা আগের মতো রাস্তায় নামতে পারছে না। এজন্য বিকল্প কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে। কারণ বিএনপি’র রাজপথে নামতে না পারলে এসব কর্মসূচি সফল হবে না। এজন্য যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলো নতুন কর্মসূচির বিষয়ে চিন্তা করতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচন জনগণ মেনে নিবে না। বৈঠক থেকে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধীরা। মূলত এজন্যই বৈঠকটি হয়েছে।
তবে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, নতুন কর্মসূচির বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। শিগগিরই এই কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। এজন্য আগামীতে আমরা আবারো বসবো।
গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, বৈঠকে জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সামনে যুগপৎ আন্দোলনে দলগুলো আবারো বৈঠকে বসবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বৈঠকে বলা হয়েছে যে, আমরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার অনেক চাপের মধ্যেও বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ। তারা ন্যূনতম ফাটল ধরাতে পারেনি। আর বৈঠকে আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি।
বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনা করেই কর্মসূচি দিচ্ছে জামায়াত ইসলামি: সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও আলোচনার ভিত্তিতেই কর্মসূচি দিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আর দলটি আগামী রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ পর্যন্ত এই কর্মসূচিতেই থাকতে চায়। এরপরে বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনা করে আবারো পরবর্তী কর্মসূচি করবে তারা।
জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ মানবজমিনকে বলেন, আমরা যে কর্মসূচি দিচ্ছি, এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। কারণ সভা ও সমাবেশের সময় পার হয়ে গেছে। আর বিএনপি’র সঙ্গে রাজপথে একই মঞ্চে না থাকলেও তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা অভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছি। আর আগামী রোববার থেকে অবরোধ আছে। এরপরে বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনা করেই আবারো কর্মসূচি দেয়া হবে।
বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনা করছে ইসলামী আন্দোলন: নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গত ২৮শে নভেম্বর বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতীয় সংলাপ করেছে দলটি। এই সংলাপে বিএনপিসহ দেশের প্রায় ৫০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছিল। সেখানে তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন, সরকারের পতন এবং রাষ্ট্র মেরামতে জাতীয় ঐক্য গঠনের বিষয়ে একমত পোষণ করে। এই সংলাপের আগে থেকেই বিএনপি’র সঙ্গে বিভিন্নভাবে কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা করছে ইসলামী আন্দোলন। কিন্তু এখনো তারা বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেনি। তবে আন্দোলনের বিষয়ে এখন ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা বিএনপি’র সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনকে গঠনমূলকভাবে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি’র সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। কিন্তু এখন তো বিএনপি’র কারও সঙ্গে ফ্রি ভাবে আলোচনা করা যায় না। আর আন্দোলনকে আরও জোরদারভাবে এগিয়ে নেয়ার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে।
গত ২৮শে অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেলে পরদিন হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ১৬ দিন অবরোধ এবং চারদিন হরতাল করেছে দলটি।