অন-লাইন

দক্ষিন এশিয়ার রাজনৈতিক বলয় কোন দিকে যাচ্ছে? আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসাবে ভারতের অবস্থান

  প্রতিনিধি ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ , ৭:২৩:১৯

শেয়ার করুন

দক্ষিন এশিয়ার রাজনৈতিক বলয় কোন দিকে যাচ্ছে? আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসাবে ভারতের অবস্থান
===============================
(পাঠকবৃন্দ লিখাটি পড়তে যাবার আগে ম্যাপটা দেখে নিয়ে বাকী দেশ গুলোর অবস্থান দেখলে বুজতে সুবিধা হবে।)

দক্ষিন এশিয়ায় পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ মানুষ বাস করে। জনসংখ্যার বিচারে এক বিশাল জন গোষ্ঠি এই অঞ্চলে বাস করে। স্বাভাবিক ভাবেই অর্থনৈতিক রাজনীতির এক বিরাট মারপ্যাচ এই অংশে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বৃহৎ দেশ হিসাবে ভারত আঞ্চলিক পরাশক্তি। কিন্তু যেভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোর সাথে ভারতের বন্ধুত্ব সুলভ পররাষ্ট্রনীতি হবার কথা তাতে ভারত অনেকাংশে ব্যার্থ। যদিও প্রায় দেশ গুলোতে ভারতের সমর্থনপুষ্ঠ রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, কিন্তু সাধারন জনগন এর প্রতিফলন প্রায় উল্টো।

ভারতের পরই এ অঞ্চলে যে দেশটি ক্ষমতাবান সেটা হল পাকিস্তান, কিন্তু অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তান কোন দিন ভারতের সমকক্ষতা তো দূরে থাকুক তার ধারে কাছেও আসে নি। এর জন্য দায়ী পাকিস্তানের রাজনীতিতে অলিখিত সামরিক হস্তক্ষেপ, যেটা এই রাষ্ট্র গঠিত হবার পরই পরই ধারাবাহিক সমস্যা। পাকিস্তান, ভারত তৈরিই হয় ধর্মীয় আচ্ছাদনের নীচে। জাতিগত ভাবে ভারতকে সব সময়ই পাকিস্তানের মোকাবেলা করে যেতে হচ্ছে আর পাবলিক সেন্টিমেন্টের প্রায় সব টুকুই ভারত বিরোধী। ওদিকে পাকিস্তান ভারতের চিরশত্রু চীনের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক রেখে যাচ্ছে।

নেপাল ধর্মীয়ভাবে হিন্দু রাষ্ট্র এবং আকারে অতি ক্ষুদ্র দেশ হবার পরো নেপালি জন গোষ্ঠীর এক বিশাল অংশ ভারত বিদ্বেষী। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ভারতের সাথে নেপালের সম্পর্কের অবনতি ঘটে সেই ২০১৫ সালে। ফলশ্রুতিতে ,ভারত নেপালে জ্বালানি ব্লকেড দেয়। নেপাল বাধ্য হয়ে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে। এখানে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে নেপাল ছোট দেশ হলেও এর সীমান্ত ভারত এবং চীনের সাথে। এক পর্যায়ে উভয় দেশ আপোষে আসে। বিশ্বের স্থল বিশিষ্ট রাষ্ট্র হবার পরও ২০১৬ সালে চীন তার সমুদ্র বন্দরকে নেপালের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। ভারতের অত্যন্ত মিত্র দেশ নেপালকে বলতে গেলে মুফতে নিজের বলয়ের অংশ করে নেয় চীন।

শ্রীলংকা অনেকটাই অনেক আগে চীনের পেটের ভেতর ঢুকে গেছে। ঋন করে ঘি খেতে খেতে। ঋন করতে গেলে সবার আগে ঋন দাতাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হয়। আর এক্ষেত্রে ভারত চীনের ধারে কাছেও নেই। চীনের অর্থনৈতিক সামঞ্জস্যতা ভারতকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে দুর্বল করে ফেলছে। ঐতিহ্যগতভাবে শ্রীলংকা ভারতপন্থী হলেও বড় বিনিয়োগ ও ঋণের মাধ্যমে দেশটিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে চীন। বিনিয়োগ ও অনুদানের মাধ্যমে শ্রীলংকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করছে চীন। বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ২০১৬ সালে চীনকে হাম্বানটোটা বন্দরকে ৮০ শতাংশ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি (৯৯ বছর) লিজ দিতে বাধ্য হয়েছে। শ্রীলংকার দীর্ঘদিন থেকে চলমান ভারতীয় সামরিকসহ বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতিতে একক ক্ষমতাধর ভারতকে এখন সব থেকে বড় পেইন দিচ্ছে মালদ্বীপ নামক ছোট্ট দেশটি। দেশটির স্বাধীনতার পর পর মামুন আব্দুল গাইয়ুম ভারতপন্থী হিসাবে দেশ টিকে শক্ত হাতে শাষন করে। কিন্তু ২০১৩ সালে গাইয়ুমের সৎ ভাই আব্দুল্লাহ ইয়ামিন ক্ষমতায় আসলে ভারতের হাতের বাইরে চীন চলে যায় কারন ইয়ামিন ছিলেন চীন পন্থী। ২০১৮ সালে আবার ভারতপন্থী মোহাম্মদ সলিহ ক্ষমতায় আসেন। ৩০শে সেপ্টেম্ভর ২০২৩ সালে চীনপন্থী মুইজ্জা সরকার মালদ্বীপে ক্ষমতায় আসার পর পরই ভারত মাল দ্বীপ সম্পর্ক চুড়ান্ত খারাপ হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আপত্তি জনক মন্তব্য করায় এই মুহুর্তে ভারত এবং মাল দ্বীপ সরকারের তিক্ততা সাধারন জনগনের মাঝে চলে এসেছে।

বাংলাদেশে ভারতের সাথে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বিদ্যমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সাধারন জনগনের মাঝে ভারত বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। ধারনা করা যায় বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ সাধারন মানুষ মেনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থান পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকার বা মাল দ্বীপের মত না, বাংলাদেশ তিন দিক থেকে ভারত বেষ্টিত। আমদানী নির্ভর দেশ হিসাবে বাংলাদেশের ভারতের বাইরে যাবার সুযোগ খুব কম, কিন্তু এক্ষেত্রেও চীন শ্রীলংকায় যে পলিসি নিয়ে সাকসেস হয়েছিল, সেই একই পলিসিতে গত কয়েক বছর লাগাম হীন ঋন এবং অব কাঠামো গত ঋন দিয়ে এদেশে ঝাকিয়ে বসেছে। অন্য দিকে শ্রীলংকার জনগনের একাংশের ভারত সমর্থন থাকার পরো তামিল বিরোধিতা সে দেশে তাদের অব স্থান লেজে গোবর করে ছাড়ে।

বাংলাদেশে ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি আওয়ামীলীগ সরকারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। এই সুযোগ টা ভবিষ্যতে কাজে লাগাবে চীন। এই মুহুর্তে ভারত চীন উভয় দেশই আওয়ামী সরকারকে সমর্থন দিলেও এটা বুজতে খুব বেশি ট্যাকটিশিয়ান হতে হয় না যে, সুযোগ বুজে চীন তার অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলবে। এক বার এই দেশ চীনের ঋনের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে গেলে সরকারকে গোলমেলে পরিস্থিতি ফেলে এদেশের ভারত বিরোধী মনোভাব চীন কে আপার হ্যান্ডে নিয়ে যাবে। ওদিকে পাকিস্তান, এদিকে বাংলাদেশ যদি চীনের তাবেদারি শুরু করে তবে ভারতের নাভিঃশ্বাস ছুটিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। চীন বর্তমানে নানা দিক থেকে ভারতকে চেপে ধরছে। যদিও অর্থনৈতিক ক্ষমতায় চীন ভারতের ধরাছোয়ার বাইরে। ভারতের অখন্ডতাকে হুমকির মুখে চীন অতি সহজেই ফেলে দেবে।

ভারত মহাসাগরে মালদ্বীপ, শ্রীলংকা পশ্চিম ফ্রন্টে পাকিস্তান, পুর্ব দিকে বাংলাদেশ (এখনো পুরো ভারতের বলয়ে) এবং নর্থ ইষ্টে নেপাল, বৃহৎ শক্তি হিসাবে ভারত খুব একটা শান্তিতে নেই।

বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকানর ক্ষমতার সরাসরি কোন কাজে বাংলাদেশ আসবে না, যেটা কিন্তু ভবিষ্যতে বাংলাদেশ চীন বলয়ে ঢুকে গেলে আমেরিকাকেই আসতে হবে সে সমস্যা সমাধানে। তবে সেটা ভিন্ন গল্প। অন্য দিন হবে।

শোভন রেজাউনুল হক-


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content