নির্বাচন

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, ইসির ‘অগ্নিপরীক্ষা’ কাল

  প্রতিনিধি ৬ জানুয়ারি ২০২৪ , ১২:২৫:১২

শেয়ার করুন

প্রায় এক বছর যাবৎ যে প্রস্তুতি চলছিল তা শেষ হয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠান গ্রহণের মাধ্যমে ইসিকে আগামীকাল রবিবার দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। শুরু থেকেই সুষ্ঠু ভোটের জন্য নেওয়া নানা তৎপরতা বাস্তবে কতটুকু কার্যকর হবে তা দেখার অপেক্ষায় পুরো জাতি। এমনকি বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও মুখিয়ে আছেন ভোট গ্রহণ উৎসব কতটা প্রাণবন্ত হয় তা দেখতে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে গেছে। হেলিকপ্টারযোগে দুর্গম অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও নির্বাচনী সামগ্রী। ৭ শতাংশ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে যাবে আজ শনিবারের মধ্যেই। আগামীকাল ভোরে বাকি ৯৩ শতাংশ কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে। সব মিলিয়ে একটি সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্নের প্রত্যাশা ইসির। ইসির তথ্যমতে, ভোটের দিন কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত ইতিহাসে এই প্রথম।

ইতোমধ্যে সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য সব রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, নির্বাচনের মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪২ হাজার ২৫টি। এর মধ্যে ভোটের দিন সকালে ৩৯ হাজার ৬১টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। অর্থাৎ ৯২ দশমিক ৯৫ শতাংশ বা ৯৩ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে ভোটের দিন সকালে। আর দুই হাজার ৯৬৪ বা সাত শতাংশ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে ভোটের আগের দিন অর্থাৎ আজ। পার্বত্য জেলা, উপকূলীয় এলাকা, দ্বীপ, চর অঞ্চল, নদী পরিবেষ্টিত দুর্গম এলাকা বিবেচনায় এসব কেন্দ্রে আগের দিন ব্যালট পাঠানো হচ্ছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচনে আগের রাতে কারচুপি রোধ করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন গত কমিশন সংসদের উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে এই কৌশল প্রথম অবলম্বন করা শুরু করেন। আর জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে এবারই প্রথম অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার যাচ্ছে। ইসির সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ভোটগ্রহণের আগের দিন অর্থাৎ আজ প্রিসাইডিং অফিসার ব্যালট পেপার ছাড়া নির্বাচনী মালামাল, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করবেন। তবে প্রিসাইডিং অফিসারের অনুপস্থিতিতে যে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে নিয়োগপত্রে উল্লেখ রয়েছে সেই সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণের দিন সকালে ব্যালট পেপার গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাবেন। ভোট গ্রহণের দিন সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার সঙ্গে সকাল ৬টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে হস্তান্তর করবেন, ভোট গ্রহণের দিন সকালে ব্যালট পেপার বিতরণের সময় যতদূর সম্ভব পর্যাপ্ত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের উপস্থিতিতে ব্যালট পেপার হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে, ভোট গ্রহণের দিন সকালে ব্যালট পেপার পরিবহনের বিষয়ে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শুক্রবার সকাল ৮ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হওয়া এ প্রচার কার্যে প্রার্থীদের পাশাপাশি তাদের সমর্থকদের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ। সারাদেশে গুটিকয়েক সহিংসতা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো দুর্ঘটনা না ঘটায় স্বস্তিতে রয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রচারের সময় শেষ হয়েছে। তার পরেও যদি কেউ প্রচার চালায় তা হলে তাকে ছয় মাসের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হতে হবে। কমিশন চাইলে শুনানি করে কারও প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারে। ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট এক হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৫৩৪ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন। বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৬ রাজনৈতিক দল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে রয়েছে। নওগাঁ-২ আসনের একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে একটি আসনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করায় আগামী ৭ জানুয়ারি ২৯৯ আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। হাইকোর্ট থেকে ৩ জন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় দলটির প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬ জন। জাতীয় পার্টির ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জনসহ ২৮টি রাজনৈতিক দলগুলোর মোট প্রার্থী সংখ্যা এক হাজার ৫৩৪ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৬ জন। নির্বাচনে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণ ফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পাটি, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) ও গণতন্ত্রী পার্টি প্রার্থী দিয়েছে। নির্বাচনে ৯০ জন নারী প্রার্থী ও ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মাঠে নামলেন ৬৫৩ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করতে শুক্রবার থেকে মাঠে নেমেছেন ৬৫৩ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। তারা ভোটের আগে-পরে পাঁচ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবেন। এ বিষয়ে ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবার রহমান সরকার বলেন, বিচারিক হাকিম থাকবেন ৬৫৩ জন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী অপরাধ আমলে নিয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট পেপার ধ্বংস করা, ব্যালট বক্স ছিনতাই, ভোটদানে বাধা দেয়া বা বাধ্য করা, ভোট কেন্দ্রের পরিবেশকে ভোটের উপযোগী না রাখা, এই সব অপরাধগুলোর সংক্ষিপ্ত বিচার করতে পারবেন তারা। এই দণ্ডগুলো একটু বেশি, তিন থেকে সাত বছর আছে। মোট ভোটকেন্দ্রের অর্ধেকই ঝুঁকিপূর্ণ ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসি বলছে, এর মধ্যে ২৩ হাজার ১১৩টিই ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ মোট ভোটকেন্দ্রের অর্ধেকের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ২৯৯টি আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হবে ভোটগ্রহণ। নওগাঁ-২ আসনে একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় ওই আসনের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটকেন্দ্র ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভোটদানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সারাদেশে মোট ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৪৩ জন সদস্য মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি)। নতুন ভোটার ১ কোটি ৫৪ লাখ ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ। ইসি জানিয়েছে, এর মধ্যে নতুন ভোটার ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৭৬ লাখ ও নারী ৫ কোটি ৮৯ লাখ। আর ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ৮৪৯ জন। এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ১১ লাখ এবং নবম জাতীয় নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content