প্রতিনিধি ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ , ১০:২১:৪৯
জাতীয় নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নেবে না বিএনপি। তবে দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকে নিরুৎসাহিত করা হবে না। এ ছাড়া দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে তৃণমূলের অনেক নেতা। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আলাদা। তৃণমূলের অনেক নেতার এলাকায় ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার ওপর আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে। এতে বিএনপি’র অনেক নেতার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনো আলোচনা হয়নি। শিগগিরই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর আগে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে শতাধিক উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন।
এদিকে গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা দেয়া হবে না।
বিএনপি’র সিনিয়র এক নেতা জানান, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয়ায় আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন চরম কোন্দল বিরাজ করছে। নির্বাচনের পর প্রতিটি জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের এখন দুই-তিন গ্রুপ। দলের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক রাখেনি তারা। বিরোধ এড়াতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তবে বিএনপিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে যাবে না। কারণ তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনোভাবে ভোট সুষ্ঠু হবে না। কারণ যেই প্রার্থী হোক না কেন সিদ্ধান্ত এক জায়গা থেকে আসবে। আর সেটা বাস্তবায়ন করবে নির্বাচন কমিশন। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দিয়ে উন্মুক্ত করে দেয়ায় সরকারি দলের একাধিক প্রার্থী থাকবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি’র যেসব নেতার এলাকায় অবস্থান আছে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। তাই বিএনপি দলীয়ভাবে না গেলেও দলের কোনো নেতা ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হতেও পারেন।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র এক নেতা জানান, স্থানীয় নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন ভিন্ন প্রেক্ষাপট। স্থানীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধরে রাখা কঠিন। এ নির্বাচন নির্ভর করে স্থানীয় ভিতের উপর। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে কর্মীরা সরব হবে। আর যেহেতু এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে না, তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র আরেক নেতা বলেন, নির্বাচন নিয়ে বরাবরই নেতাকর্মীদের একটি আগ্রহ থাকে। আর প্রতীক না থাকলে আগ্রহটা বাড়বে। যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে এ নির্বাচনের পার্থক্য আছে। তাই উপজেলা নির্বাচনে গেলে বিএনপি’র জন্য, বিশেষ করে তৃণমূলে যারা আছেন তারা চাঙ্গা হবেন।
অন-লাইন ও অফ-লাইনের সর্ববৃহৎ সংগঠন জিয়া সাইবার ফোর্স এর সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং কৃষক দলের নেতা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও মানুষ বর্জন করবে।দেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে নির্বানে অংশ নেয়ার আগ্রহ হারিয়েছে।
এদিকে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। তাই বিএনপি জাতীয় নির্বাচন যেভাবে বর্জন করেছে উপজেলা নির্বাচনও সেভাবে বর্জন করবে। দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে আলোচনা না হলেও আমি যতটুকু জানি আগের সিদ্ধান্তই এখনো বলবৎ আছে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।