সারাদেশ

‘ডিসি পার্ক’ নাম দিয়ে লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্য খোয়া সাগর দিঘীর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা কেন?

  প্রতিনিধি ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৩:৪২:০৪

শেয়ার করুন

স্বচ্ছ জল, আকাশের নীলাভ দৃশ্য আর চারপাশের সবুজে ঘেরা অপরূপ প্রকৃতিতে মিশে একাকার লক্ষ্মীপুরের খোয়া সাগর দীঘি। মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদা বকসহ বিভিন্ন ধরনের পাখির মিলনকেন্দ্র এটি। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি জলে ডুব দেয় এবং মাছ শিকার করে ক্ষুধা মেটায়। প্রকৃতিপ্রেমীরা পাখির কলকাকলি ও ওড়াওড়ির দৃশ্য বেশ উপভোগ করেন।

গত কিছুদিন ধরে দীঘির পাশ দিয়ে দেখা যাচ্ছে,ডিসি পার্ক নামে সাইনবোর্ড যা এলাকাবাসী কে ক্ষুব্ধ করেছে।মোহাম্মদ আকবর হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন-‘ডিসি পার্ক’ নাম দিয়ে লক্ষীপুরের ঐতিহ্য খোয়া সাগর দীঘির নাম মুছে ফেলার চেষ্টা কেনো?
ডিসি পার্ক প্রয়োজনে অন্য জায়গায় হবে,লক্ষীপুরের ঐতিহাসিক এই খোয়া সাগর দীঘির নামেই থাকবে।

ডিসি পার্ক নামের সাইন বোর্ড

স্থানীয় একজন মুরুব্বি বলেন,আমরা এই সাইনবোর্ড দেখে অবাক হয়েছি এবং কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি অবিলম্বে এ সাইনবোর্ডে খোয়া দিঘি নাম দেয়া হোক।

২২ একর জমিজুড়ে দীঘিটির সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। চারপাশে হাঁটার পথ। শীতকালে দীঘির এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে কুয়াশার জন্য কিছুই দেখা যায় না। কুয়াশাকে আঞ্চলিক ভাষায় খোয়া বলা হয়। দীঘিটি দেখতে সাগরের মতো। তাই এর নাম ‘খোয়া সাগর দীঘি’। লক্ষ্মীপুর শহরের অদূরে দালাল বাজারের কাছে এটি অবস্থিত। দালাল বাজারকে জেলার উপশহরও বলা হয়।

প্রতিদিন বিকালে ভ্রমণপ্রেমীদের ভিড়ে মুখর থাকে খোয়া সাগর দীঘির পাড়। খোলা আকাশের নিচে মুক্ত প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতে জেলা শহর থেকে বিভিন্ন বয়সীরা আসেন এখানে। দীঘির জল ছুঁয়ে আসা কোমল হাওয়া তাদের মন ছুঁয়ে যায়। ভ্রমণপিপাসুদের ছায়া হিসেবে কাজ করে বেশকিছু কড়ই গাছ। এখানে গল্পে গল্পে দারুণ সময় কাটান তরুণ-তরুণীরা। অনেকে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন।

খোয়া সাগর দীঘিকে ঘিরে ইতোমধ্যে পর্যটন মন্ত্রণালয় বিশেষ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। একইসঙ্গে দীঘিকে ঘিরে পর্যটনের উন্নয়নে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। দীঘির পাড়ে গেলে এখন কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে। পর্যটকদের চলাচলের জন্য ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণের পাশাপাশি তাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে এখানে ল্যামপোস্টের আলোয় গল্প জমে। দীঘির একপাশে মসজিদ। দিঘির সিঁড়িতে পা রেখে স্বচ্ছ জলে হাত-মুখ ধুয়ে নেন কেউ কেউ। কেউবা গোসল সেরে নেন এখানে।

লক্ষ্মীপুর জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও তথ্যকোষ সমৃদ্ধ গ্রন্থ ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ থেকে জানা যায়, ২০০ বছর আগে দীঘিটি খনন করা হয়। মূলত চারপাশের এলাকার মাটি ভরাট ও মানুষের ব্যবহার্য পানি সংরক্ষণের প্রয়োজনে এই উদ্যোগ নেন তৎকালীন রাজা জমিদার ব্রজবল্লভ রায়।

খোয়া সাগর দীঘির সঙ্গে মিশে আছে এক রূপকথার গল্প। একবার এক বর তার নববধূকে নিয়ে দীঘির পাড় দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন বরের পানির পিপাসা হলে যাত্রাবিরতি টেনে দীঘিতে নেমে পানি পান করেন। নববধূও পানি পানের জন্য নেমেছিলেন। কিন্তু নববধূ অঞ্জলি ভরে পানি পান করতে গেলে তার পা দুটি ধরে কে যেন নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ওই বধূ আর ফিরে আসেননি। সেই স্থানে গভীর গর্ত হয়ে আছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রচণ্ড খরায় দীঘিটি শুকিয়ে গেলেও ওই জায়গাটি কোনোভাবেই শুকায় না!


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content