গত পরশু পরিবার নিয়ে সিংগাপুর থেকে ঢাকায় ফিরতেছিলাম । চাংগি বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের কাউন্টারে বুকিং দিতে গেলাম৷ চার সদস্যের জন্য মোট বুকিং প্রাপ্য ৪০কেজি x ৪ জন = ১৬০ কেজি + হ্যান্ড কেরি ২৮ কেজি।
বুকিং কাউন্টারে থাকা তামিল মেয়েটি বললেন, চারজনের বুকিং একসাথে হবে না। আমার নিজেরটা আলাদা করতে হবে। কারন, আমার টিকেট টা আলাদা ক্রয় করে হয়েছে।
একথা শুনে চিন্তায় পরে গেলাম। কারন, আমি তো মোট চারজন মিলে ৭টা লাগেজ তৈরি করেছি। এখন আমার প্রাপ্য দুই লাগেজে কিভাবে ৪০ কেজি মিলাবো? এটা ওটা নড়াচড়া করে অবশেষে দুই লাগেজে মিলল ৩৯.৪০ কেজি। আর আমার পরিবারের তিন সদস্যের লাগেজে হল ১২৩ কেজি। আমি কাউন্টারের মেয়েকে বললাম তিনটা টিকেটে তো ৩ কেজি কনসিডার পেতে পারি তাই না? সে বলল এটা সম্ভাব না।আমি স্টেশন ম্যানেজার মিজান সাহেবের কাছে গিয়ে বিস্তারিত বললাম,আমার পরিবারের লাগেজে তিন কেজি মালামাল বেশি । এদিকে আমার নিজের লাগেজে একটু কম আছে৷ আপনি সব মালামালগুলো চারটা টিকেট হিসাবে কাউন্ট করে নিন ৷ তিনি বড় বড় চোখে আমাকে বললেন, লাগেজ খুলে আপনি এডজাষ্ট করেন। ৪০ কেজির একটু বেশি দেয়া সম্ভাব না।
তাকে বললাম লাগেজগুলো বেল্টের উপরে, সব লাগেজগুলোই র্যাপিং করা। এই ৭ টা লাগেজ বেল্টের ওখান থেকে আবার বাহিরে এনে এডজাস্ট করা কতটা কষ্টকর সেটা আপনি একটু ভেবে দেখুন। তাছাড়া সাথে ছোট বাচ্চা কাচ্চা আছে৷ ওনি বললেন, কিছু করার নেই। আইনে যেটা আছে সেটা করতে হবে৷
আমি তখন একটা লাগেজের কর্নারে হাত ঢুকিয়ে সামান্য কিছু মাল বের করে আমার নিজের লাগেজে দিলাম। তখন বউ বাচ্চার তিন জনের লাগেজে মোট মালামাল হল ১২২.৬ কেজি। আমাকে বলল অতিরিক্ত দুই কেজির বেশি৷ আমি বললাম আমাকে অতিরিক্ত মালের জন্য চার্জ করুন। তারা আমাকে ২ কেজির চার্জ করলেন ৪০ ডলার।
এবার আমার লাগেজ বেল্টে দিলাম, সেখানে মালামাল হল ৪০.৪ কেজি। সে বলল এটি জাষ্ট নাইস,
আমি তাকে বললাম, আদৌ এটা সুন্দর নয়৷ এখানে অতিরিক্ত ৪০ গ্রাম বেশি আছে৷ আপনি আমাকে ৪০গ্রাম চার্জ করুন। আমি পে করে দিব৷ সে আমার কথা শুনে তার পাশে থাকা কাউন্টারের মেয়ের সাথে তামিল ভাষায় কি কি যেন বলল৷ বুঝতে পারলাম আমি রাগান্বিত সেটাই বলাবলি করতেছে৷ অথচ পাশের কাউন্টারেই মহিলা একজন যাত্রীর ৫ কেজি মালামাল বেশি হওয়ায় সে বলতেছে, ব্রাদার আই ক্যান কনসিডার ইউ 1-2 kg, Not more then that, রুলস যদি সকলের জন্য সমান হবে,তাহলে কাউন্টার ভেদে ভিন্ন কেন? মিজান সাহেব কি এটা দেখেন না?
যাইহোক, সিংগাপুর ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার হয়ে বিমান বাংলাদেশের বোডিং স্থানে হেটে আসতে আমার প্রায় ২৫ মিনিট সময় লেগেছে৷ আমার ছোট বাচ্চারা বারবার বলতেছি,বাবা আর হাটতে পারছি না। আমার স্ত্রীও হাপিয়ে যাচ্ছিল। আমার মনে হয় বিমান পার্ক করা ছিল অন্য টার্মিনালে৷ অর্থাৎ টার্মিনাল ৩ থেকে ভিতর দিয়ে হেটে আসতে হয়েছে সেখানে।
বিমানের ভিতরে গেলাম, প্রচন্ড গরম। ৩:৪০ মিনিটে বিমান ছাড়ার কথা থাকলেও সেই বিমান ছাড়ল ৫:০৫ মিনিটে। দীর্ঘ এক ঘন্টার বেশি সময় প্রতিটি যাত্রী সিটের পকেটে থাকা সেফটি ম্যানুয়াল দিয়ে বাতাশ করতেছিল।
বিমান ছাড়ার পর ইঞ্জিনের খটখট শব্দ, মনে হচ্ছিল ধানক্ষেতের শ্যালো মেশিন চলতেছে৷ খুব ভয় পেলাম। না জানি কি হয়! দোয়া দুরুদ পরে নিলাম কিছুক্ষন৷
বিমানে দুইটা টয়লেট, একটা টয়লেট কিছুক্ষন পর অকেজো হয়ে গেলে৷ আপনার প্রকৃতির চাপ এলে এই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পাছার মাংশ নড়াচড়া করা ছাড়া আর উপায় নেই। কি আর করা!!যাত্রা সেবামান নিয়ে আর বেশি কিছু নাই বললাম।শত হলেও আমার দেশীয় যান।
যাইহোক, ঢাকায় এক ফাকা মাঠের মধ্যে নামিয়ে দিল যাত্রীদের। বাসে করে টার্মিনালে এলাম৷ ইমিগ্রেশন পার হয়ে এবার লাগেজের জন্য অপেক্ষা৷ অতীতের তুলনায় একটু তারাতারি পার হয়েছি ইমিগ্রেশন। বেল্টের সামনে বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষামান৷ হটাৎ দেখি ২৫-৩০ জন যাত্রী গোল হয়ে চেচামেচি করতেছে৷ এগিয়ে গেলাম,,, জানতে পারলাম আজকের ফ্লাইটে মোট ১৮টি লাগেজ আসেনি। এগুলো আগামীকাল আসবে৷ তার মধ্যে আমার স্ত্রীর নামে বুকিং হওয়া দুইটা লাগেজ। তাদেরকে বললাম লাগেজ কিভাবে ডেলিভারি দেয়া হবে? তারা বলল কুরিয়ার সার্ভিসে পেয়ে যাবেন। কি আর করা, মনে মনে সিংগাপুরের কান্ট্রি ম্যানেজার মিজান সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার চারটি টিকেটে ২ কেজি মালামাল অতিরিক্ত চার্জ দেয়া যদি রুলস হয়, তাহলে আমার সেই লাগেজ কেন ফ্লাইটে এলো না? এই রুলস কোথায় আছে?
স্টেশন ম্যানেজার মিজান সাহেব, আপনি একজন স্টেশন ম্যানেজার এর থেকে বেশি কিছু নয়৷ আপনি আপনার দ্বায়িত্বে কর্মরত আছেন। নিয়মের মধ্যে থেকে আপনি আপনার দ্বায়িত্ব পালন করবেন তাতে কোন সমস্যা নেই৷ আমি দীর্ঘ প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে অবজার্ভ করেছি,যখন কোন হাই ক্লাস যাত্রী আসে তখন আপনি খিল খিল করে হেসে দিয়ে তাদের সাথে কথা বলেন৷ কিন্তু আপনি সিংগাপুরে কর্মরত প্রবাসী ভাইদের সাথে চোখ রাংগিয়ে ব্যাবহার করেন। প্রবাসীদের সাথে ব্যাবহার দেখে মনে হয় তারা যেন আপনার অধিনস্থ কর্মচারী৷ যারা অতীতে ভ্রমন করেছে তারা সবাই এক বাক্যে স্বিকার করতে বাধ্য হবে আপনার ব্যাবহার কেমন ৷ এভাবে চোখ রাংগিয়ে ব্যাবহার করার অধিকার আপনার নেই৷ এই সকল যাত্রীদের টাকায় বেতন নেন আপনি ৷ আপনি এখানে আছেন সেবা দেয়ার জন্য৷ আপনি বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের বিশাল কর্মকর্তা কিনা সেটা এই সকল সাধারণ প্রবাসীদের দেখার বিষয় নয়৷ আপনি যাত্রীদের কাছে একজন সেবাদানকারী ব্যাক্তি মাত্র৷ ফ্রেন্ড লিষ্টে থাকা অনেক বড় ভাই আছেন মিজান সাহেবের সাথে সখ্যতা। পারলে তাকে আমার লেখাটি পাঠিয়ে দিবেন৷
প্রতিজ্ঞা করেছি, পরিবারের কেউ মারা যাওয়ার পরে তার লাশ দেখতে আসার কারনে দ্রুত ফ্লাইট ধরতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকেট ছাড়া কোনদিন বিমানের কাছে যাব না৷
আমি যখন বাংলাদেশে বসে দুইদিন পর এই স্টাটাস লিখছি তখনও আমার লাগেজের সন্ধান নেই৷ আমার কথা বাদ দিলাম,অনেক প্রবাসী আছেন যারা কয়েক বসর পর দেশে ফিরছে৷ পরিবারের জন্য কিছু উপহার নিয়ে আসছে৷ অনেকে সন্তানের জন্য চকলেট কিংবা খেলনা নিয়ে আসছে ওই লাগেজে৷ সেই প্রবাসী খালি হাতে বাড়িতে ফেরার পর ছোট্ট সন্তান যদি আপানকে প্রশ্ন করে৷
বাবা! আমার জন্য চকলেট আনো নি? খেলনা আনো নি?
কি উত্তর দিতেন যদি এমন প্রশ্ন আপনি শুনতেন?
(শফিক ইসলাম সিংগাপুর প্রবাসী)
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ