রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তৃতীয় বছরে পদার্পণ করার পরও যে রাশিয়ার অর্থভাণ্ডারে টান পড়েনি তার একটা বড় কারণ ভারত। এতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরকারের আয় বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করে রাশিয়া। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন ও নিক্কেই এশিয়ার খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর পর রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নিষেধাজ্ঞা দেয় পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই রাশিয়ার তেল যাচ্ছে। তবে তা সরাসরি নয়। রাশিয়া থেকে কেনা অপরিশোধিত তেল শোধন করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করছে ভারত।
ফিনল্যান্ডভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্স অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) তথ্য বলছে, যুদ্ধের আগে রাশিয়া থেকে ভারত যে পরিমাণ তেল কিনত, যুদ্ধ শুরুর পর দেশটি থেকে ভারতের তেল কেনা ১৩ গুণ বেড়েছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে ভারত রাশিয়া থেকে যে পরিমাণ তেল কিনে পরিশোধন করেছে, তার বড় ক্রেতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে ১৩০ কোটি ডলারের জ্বালানি আমদানি করেছে।
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে ভারত। ভারত শুধু গত বছরই রাশিয়ার কাছ থেকে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অপরিশোধিত তেল কিনেছে। এরপর দেশে এনে পরিশোধন করে ১০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের তেল যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে।
পশ্চিমারা রাশিয়ার তেল কেনার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার আওয়তায় ভারত পড়ে না। তবে জাহাজ চলাচলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকলেও ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে তথাকথিত ছায়া ট্যাংকার বহর ব্যবহার করেছে। কার কাছে তেল–বাণিজ্য হচ্ছে ও কীভাবে তেল পাঠানো হচ্ছে, সেটা গোপন রাখতে এই ছায়া ট্যাংকার বহর তৈরি করেছে রাশিয়া।
বেলজিয়ামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কেপলারের অপরিশোধিত তেলবিষয়ক গবেষণা শাখার প্রধান ভিক্টোরা কাতোনা বলেন, রাশিয়ার তেলের মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ার কারণেই মূলত ছায়াবহর তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। সরবরাহ ব্যবস্থা দীর্ঘ করতে এক ট্যাংকার থেকে আরেক ট্যাংকারে তেল স্থানান্তরও করা হচ্ছে। কারণ, এটা করলে রাশিয়ার প্রতি ব্যারেল তেলের প্রকৃত মূল্য কত সেটি নির্ধারণ করা সহজ হয় না।
তবে ভারত ও রাশিয়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে তেল–বাণিজ্য করেছে সরাসরি ও প্রকাশ্যে। উইন্ডওয়ার্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য বলছে, গত বছর তেল নিয়ে সরাসরি রাশিয়া থেকে ভারতে গেছে ৫৮৮টি ট্যাংকার। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এসব ট্যাংকারের গন্তব্য ছিল ভারত। ভারতে গত বছর ছায়া বহর ব্যবহার করে ১ হাজার ৮০০ ট্যাংকারে অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করেছে রাশিয়া।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ