প্রতিনিধি ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ১২:০৭:৩৫
এমনিতেই মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে রয়েছে। রোহিঙ্গা বা যেই আসুক, মিয়ানমার থেকে আর কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে হাইওয়ে পুলিশের ‘সেবা সপ্তাহ-২০২৪’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের চতুর্দিকেই যুদ্ধ লেগে আছে। বাংলাদেশ সীমানায় আরাকান আর্মির সঙ্গে তাদের বাহিনীর যুদ্ধ চলছে। আমরা দেখছি তাদের এই যুদ্ধ এতটাই তীব্র হয়েছে যে, মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), সরকারি কর্মকর্তা, ধারণা করছি দুই-একজন সেনা সদস্য আমাদের এখানে ঢুকে পড়েছে। এদের মধ্যে কেউ অস্ত্র নিয়ে এসেছে, কেউ অস্ত্র ছাড়া ঢুকে গিয়েছে। তবে তারা এসেছে জীবনরক্ষার জন্য, যুদ্ধের জন্য ঢুকেনি। এরপর আমাদের বিজিবি সদস্যরা তাদের অস্ত্রগুলো রেখে আটক অবস্থায় আমাদের এখানে রেখেছে। এদের মধ্যে যারা আহত, তাদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে।
পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা তাদের ফেরত নিতে জানিয়েছি। তারা অতি শিগগিরই জাহাজযোগে নিয়ে যাবে বলে বার্তা পাঠিয়েছে। আশা করছি ২-১ দিনের মধ্যেই তাদের সদস্যদের তারা ফেরত নিয়ে যাবে। আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো কনফ্লিক্ট নেই, কোনোরকম যুদ্ধ নেই, তারা আত্মরক্ষার্থে এখানে এসেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি এমনিতেই ১২ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের এখানে রয়েছে। রোহিঙ্গা বা অন্য কেউ যেই আসুক, মিয়ানমার থেকে আমরা কাউকে আর এখানে সেটেল হতে দেবো না। যারা আত্মরক্ষার্থে এখানে আসছে তাদের সরকারকে বলেছি নিয়ে যেতে। তারা নিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আমাদের বিজিবি, পুলিশ, কোস্ট গার্ড সবাই অতন্দ্রপ্রহরীর মতো কাজ করছে। সেখানে যুদ্ধ হচ্ছে, এ সীমানায় তাদের কেউ আসবে বলে মনে হচ্ছে না। তারপরেও যদি আসে আমাদের এখানে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
বিজিপি সদস্যদের যারা আশ্রয় নিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণে তাদের কেউ জড়িত ছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো লিস্ট নেই। তবে আমরা সে সময় দেখেছি মাইলের পর মাইল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, নদীতে লাশ ভেসে আসতে দেখেছি। সেখানে যে গণহত্যা চালাতে আমরা দেখেছি সে সময় তাদের আর্মি দাঁড়ানো ছিল। তবে তারাই গণহত্যা করেছে কিনা জানি না। আন্তর্জাতিক আদালতে এটার বিচার চলছে।
হাইওয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪’র উদ্বোধন করে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে হাইওয়ে পুলিশ বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছিল। আমি তাদেরকে বিরোধী দল বলবো না, কারণ সংসদের তাদের অস্তিত্ব নাই। আমি বলবো একটি দল যারা ষড়যন্ত্র ও পেশিশক্তিতে বিশ্বাস করে। তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়ক তথা লাইফলাইনগুলো সচল রেখেছে। সক্ষমতার সঙ্গে দেশের পণ্যপরিবহন স্বাভাবিক রেখেছে। দেশে এশিয়ান হাইওয়ে করিডোরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১০০টির বেশি ইকোনোমিক জোন, বন্দরের সড়ক নিরাপদ রাখতে হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যা যা করা দরকার আমরা করবো। কারণ যাতায়াতব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখতে হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশ সক্ষমতার সঙ্গে কাজ করছে বলেই আমরা নিরাপদ সড়ক পাচ্ছি। তবে সড়কে ২-১টি ঘটনা যে ঘটছে না, এমন নয়। খুব শিগগিরই আমরা সমস্যাগুলো ওভারকাম করতে পারবো।
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, হাইওয়ে পুলিশের যাত্রা শুরুর পর থেকে সীমিত জনবল নিয়েও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সরকার হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট পুলিশ। এর অংশ হিসেবে হাইওয়ে পুলিশ অ্যাপ উদ্বোধন, বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু করা হয়েছে। পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে এ ধরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৫০ কিলোমিটারে বেশি সড়কে আধুনিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
ক্যামেরাগুলোর কানেকশানও প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়ে এসেছে। এখন আমরা এর সুফল ভোগ করছি। নির্বাচনের আগে যারা নাশকতা করেছে তাদের তথ্য আমরা পেয়ে গেছি। অনেক সময় এসব নাশকতার দায় পুলিশের ওপর ও সরকারের ওপর চাপিয়ে বিব্রত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ক্যামেরার মাধ্যমে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের অপচেষ্টা নস্যাৎ করা হয়েছে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদেরও অটোমেটিক শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আইজিপি বলেন, নাশকতা করে সারা দেশে একটি দল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই কাজ করেছে। সকলে একসঙ্গে রাস্তায় ছিলাম, এরফলে প্রতিটি গাড়ি রাস্তায় সচল ছিল। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত ছিল, লাইফলাইন সচল রেখে পণ্যপরিবহন স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। আমরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখে দিতে পেরেছি। আইজিপি আরও বলেন, পুলিশের সদস্যরা কি করছে দেখার জন্য বডি ওর্ন ক্যামেরা দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে কানেক্ট করে কে কি করছে দেখার সক্ষমতা অর্জন করেছি। হাইওয়ে পুলিশের প্রতিটি স্থানে প্রতিটি থানায় কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। আপনাদের সেবা পেতে কোনো সমস্যা হলে দ্রুততম সময়ে আমাদের জানান। আমাদের তদন্ত দল আছে, প্রত্যেক ইউনিট ইনচার্জদের জানালে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ।