বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা অব্যাহত থাকায় বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত এখন উত্তাল। বিদ্রোহীদের তোপের মুখে বাংলাদেশে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৫৮ জন সদস্য আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অবশ্য স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই সংখ্যা আরও বেশি, ৬৩ জন।
এমন দাবির পাশাপাশি সূত্র বলছে, এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত আটটার দিকে ক্ষুদে বার্তায় জানান, এ পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ৫৮ জন সদস্য বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
যদিও তার আগে এক ক্ষুদে বার্তায় তিনি ৩৯ জনের কথা জানিয়েছিলেন।
এদিকে গতকাল শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে মিয়ানমারের গুলি, মর্টারশেল এসে পড়ছে বাংলাদেশেও। সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার কাচে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরদিন আজ রোববার সকালে মিয়ানমারের ছোড়া গুলিতে দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।
গতকাল থেকে বাংলাদেশি আহতের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রাম ছেড়ে নিরাপদস্থানে সড়ে যেতে শুরু করেছেন তারা। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে সীমান্তবাসীরা। আজ আহতরা হলেন—প্রবিন্দ্র ধর (৫৫) ও রহিমা বেগম। ঘুমধুম ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ শফিক, সৈয়দ আলমসহ অনেকে জানান, পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। মিয়ানমার বিদ্রোহী আরাকান আর্মী ও সরকারি বাহিনীদের মধ্যে সংঘাত চলছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে। বিদ্রোহীদের তোপের মুখে পালিয়ে গুলিবিদ্ধ মিয়ানমার সেনা বাহিনীর সদস্যসহ ৬৩ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য কয়েকটি ভাগে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ।
ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ বলেন, তুমব্রু সীমান্তবর্তী তিনটি গ্রাম মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গবাদি পশু, পোষা পাখি ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছে মানুষজন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেওয়াদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, হঠাৎ করেই সীমান্ত পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে পড়েছে। ভারী অস্ত্রশস্ত্রের শব্দে তুমব্রুতে থাকা যাচ্ছে না। আতঙ্কে সীমান্তবর্তী বসবাসকারী মানুষজন গ্রাম ছেড়ে দূরে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। রোববারও সীমান্তের ওপারে চলমান সংঘাতের কয়েকটি গুলি ও মর্টারশেলের গোলা এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এতে বাংলাদেশি একজন পুরুষ ও একজন নারী আহত হয়েছে। ভারী অস্ত্রের আঘাতে সীমান্তবর্তী কয়েকটি ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের গুলি এসে পড়ে বাংলাদেশি দুজন নাগরিক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তাদের একজন পুরুষ, অপরজন নারী। পরিস্থিতি বিবোচনায় সীমান্তবর্তী পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যানবাহন এবং জনচলাচল সীমিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। সীমান্তে বিজিবি টহল এবং নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সতর্কবস্থায় রয়েছে।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ