প্রতিনিধি ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৮:৫২:৩০
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার
সাম্রাজ্য গড়ে তুলা নিয়ে ব্লুমবার্গের চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট সম্পর্কে অবগত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সরকার দলীয় এই এমপির বিদেশে টাকা পাচার করে সাম্রাজ্য গড়ে তোলা প্রসঙ্গে করা মুশফিকুল ফজল আনসারির এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
মিলার জানান, বাংলাদেশের এই এমপি’র দুর্নীতির রিপোর্ট সম্পর্কে তারা আবগত রয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দুর্নীতি নিয়ে দ্য ব্লুমবার্গের রিপোর্টের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, “বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি এখন অনেকটাই উন্মুক্ত। রবিবার ব্লুমবার্গের এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে টাকা পাচার করে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের এক সামাজ্য গড়ে তুলেছেন। এই টাকার পরিমাণ বৈদেশিক রিজার্ভের এক শতাংশের সমতূল্য। এটা সরকারের অসংখ্য দুর্নীতির মধ্যে একটি নমুনা মাত্র। বাংলাদেশ সরকারকে জবাবদিহিতা নিশ্চিত
এবং বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিবে?”
জবাবে মিলার বলেন, “আমরা এই রিপোর্টের বিষয়ে অবগত রয়েছি। বাংলাদেশ সরকারকে বলবো, তাদের সকল কর্মকর্তা যেনো দেশটির আইন এবং অর্থনৈতিক বিধি-বিধান মেনে চলে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে ।”
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্লুমবার্গের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড বা বাংলাদেশি ২ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
রিপোর্টে বলা হয়, লন্ডনের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় একটি প্রপার্টি ২০২২ সালে ১১ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হয়। রিজেন্টস পার্ক ও লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে একদমই কাছে অবস্থিত ওই প্রোপার্টিটি বৃটেনের রাজধানী লন্ডনের সবথেকে ধনী এলাকায় অবস্থিত। এই প্রপার্টির মালিক বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
ব্লুমবার্গের রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমানে ওই প্রোপার্টির দাম ১৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি। এর মালিক বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশে যে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, তার অধীনে কোনো নাগরিক, বাসিন্দা এবং সরকারি কর্মচারী বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি দেশের বাইরে পাঠাতে পারেন না। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ ও অনুমোদন ছাড়া কোনো করপোরেশনও বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করতে পারে না।
এই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে তার মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো বৃটেনে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি প্রোপার্টির রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। এসব প্রোপার্টির মধ্যে রয়েছে লন্ডনের একদম কেন্দ্রে থাকা বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্টও। ইংল্যান্ডের সবথেকে বড় বাংলাদেশি কমিউনিটির বাস এই টাওয়ার হ্যামলেটসেই। লিভারপুলে কিছু ছাত্রাবাসও রয়েছে তার।
ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে সাইফুজ্জামানের অন্তত পাঁচটি প্রপার্টি খুঁজে পেয়েছে। মিউনিসিপ্যাল প্রপার্টির নথি অনুসারে, এসব সম্পত্তি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলারে কেনা।
গত ৭ জানুয়ারি একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্যের পদ বাগিয়ে নিয়ে ভূমি সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদে আসীন হন।