প্রতিনিধি ১৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১০:১৮:৪৪
নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ। গত ২১ মার্চ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তবে ‘জয়ের সম্ভাবনা’ আছে- এমন উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচ শতাধিক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছিল জামায়াত। সংশ্লিষ্ট উপজেলা, জেলা কমিটি এবং আঞ্চলিক নেতাদের মধ্যকার সিরিজ আলোচনা এবং তাদের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ওইসব প্রার্থী ঠিক হয়েছিল। উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি তথা ‘আঞ্চলিক দায়িত্বশীল’রা সফর করে তৃণমূলের মতামত এবং রিপোর্ট নিয়েছিলেন। সেই রিপোর্ট ধরেই কোন প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা কতো ভাগ তা ঠিক হয়েছিল। সেখানে উপজেলাওয়ারী দলের সাংগঠনিক অবস্থা, সম্ভাব্য প্রার্থীর সামাজিক অবস্থান তথা ভাবমূর্তি, মানুষের মাঝে শাসক দলের নেতাদের (স্থানীয়) অবস্থান, ক্ষমতার বেনিফিশিয়ারিদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের জেরে বিরোধী মতের প্রার্থীর ‘জয়ের সম্ভাবনা’র বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছিল নিবন্ধন হারানো বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সেই অনুযায়ী মনোনীত প্রার্থীরা ইফতার মাহফিল, ঈদ পুনর্মিলনীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে উঠান বৈঠক করে গত শুক্রবার পর্যন্ত (ঈদের পরদিন) ভোটারদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু না, উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর সর্বশেষ কেন্দ্রীয় পর্যালোচনা সভায় কোনো ফর্মেটেই দলীয় পদ-পদবি আছে এমন নেতাদের উপজেলা পরিষদে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সোমবার প্রথম ধাপের নির্বাচনে জামায়াতের কোন নেতা প্রার্থী হননি। পরবর্তীতে ভোট হবে এমন প্রার্থীদেরও আপাতত ভোট চাওয়া বন্ধ করে সংগঠনের রুটিন কার্যক্রমে মনোনিবেশ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জামায়াতের এক নেতা বলেন-আওয়ামী লীগ নানাভাবে জামায়াতকে ট্রাপে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টাও করেছে। কিন্তু তারা তাতেও সফল হয়নি। রাজনৈতিক কারণে জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে ওয়ার্ড-গ্রাম পর্যায়ে আমাদের নেতাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় অর্ধেকের কম উপজেলায় প্রার্থী চিন্তা করেছিলাম। তাও দলীয়ভাবে নয়, স্থানীয়দের সুপারিশে। সেখানেও তারা ‘ষড়যন্ত্র’ শুরু করেছে। আমরা মনে করি রাজনৈতিকভাবে শাসক দল আমাদের প্রার্থীর সামনে টিকতে পারবে না। এমনকি বিএনপি’র কোনো প্রার্থীকে ভোটে হারানোর চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সক্ষমতা তাদের নেই। কিন্তু সেটা তো তারা করতে দিবে না। এরইমধ্যে বিভিন্ন রিপোর্টে ‘এমপিতন্ত্র’ কায়েমের খবর এসেছে। সব মিলিয়ে আমাদের শীর্ষ নেতৃত্ব এই সরকার তথা নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের যৌথ প্রযোজনায় অনুষ্ঠেয় প্রহসনের ভোটাভুটিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আছে কিনা? জানতে চাইলে দলটির প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ মানবজমিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এ নিয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি নেই। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলেই আমরা সিদ্ধান্তটি নিয়েছি। তিনি বলেন, কেবল জামায়াত নয়, দেশবাসী নিশ্চয়ই আসন্ন নির্বাচনটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখবে। সবার এটাই চাওয়া স্থানীয় পর্যায়ের ভোটে শাসক দলের আচরণে কোনো পরিবর্তন আসে কিনা? দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোনো নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নে মিস্টার আকন্দ বলেন, জামায়াত একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। দল যে সিদ্ধান্ত নিবে নেতাকর্মীরা সেই অনুযায়ী কাজ করবেন। জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরও অভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেন।
সারা দেশে ৫ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৮ই মে। দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ২৩শে মে, তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ ২৯শে মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ৫ই জুন। এবারের উপজেলা নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রতীক থাকছে না। সুযোগ নেই দলীয় প্রার্থিতার। এই সুযোগে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটসঙ্গী অনেক নেতা প্রার্থী হচ্ছেন। তবে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছে। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অন্যতম ইসলামী আন্দোলনও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ইতিমধ্যে তারা মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে যে দলের দায়িত্বশীল কেউ যাতে এই নির্বাচনে অংশ না নেন। যদিও ইসলামী আন্দোলন স্থানীয় সরকারের আগের উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের শতাধিক প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) হন। এর আগে ২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৪ উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ ৩৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। দলের নিবন্ধন না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে সেবার কেউ নির্বাচনে অংশ নেননি।