ইসলাম

লায়লাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত

  প্রতিনিধি ৩ এপ্রিল ২০২৪ , ৯:৫৩:১৮

শেয়ার করুন

আমরা সবাই জানি, রমজান মাস হলো, ক্ষমা ও বরকতের মাস। আর রমজান মাসের শবে কদরের রাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত কারণ এই রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল, যা মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর নির্দেশিকা।

তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাকে শবে কদরের ফজিলত ও দোয়া জানিয়ে দিবো। আর আপনি যদি শবে কদরের ফজিলত ও দোয়া সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পুরো লেখাটি জুড়ে আমাদের সাথে থাকুন।

শবে কদরের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
রমজান, মুসলমানদের কাছে শুধুমাত্র রোজা পালনের মাস নয়, বরং এটি রহমত, বরকত ও ক্ষমার মাস। এই মাস জুড়ে মমিন বান্দাগণ আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করে এবং ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকে। কিন্তু রমজানের মধ্যে লুকিয়ে আছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ – লাইলাতুল কদর।

ভাবছেন লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব কি! তাহলে শুনুন……

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আর তুমি কি জানো কী লাইলাতুল কদর? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।” (সূরা আল-কদর: 1-3).

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, “কদর রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রজনীতে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতরণ করেন প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত।” (সূরা কদর, আয়াত : ৩-৫)

এই আয়াতের মর্মস্পর্শী বার্তা আমাদের হৃদয়কে আলোকিত করে, আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে এবং আমাদের আত্মাকে উন্নত করে। কদর রজনী, যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, একটি রহস্যময় ও পবিত্র রাত যা বারবার কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আসরারতু ওয়া মা আ’লানতু। আনতা তা’লামুল গায়বা ওয়াশ শাহাদাতা ফাগফির লি ইন্নাকা আনতা আল ‘আফুওয়ুল গাফুর।

অর্থ: “হে আমার পালনকর্তা! আমার গুনা, আমার কর্মের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অংশ, আমার গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু ক্ষমা করুন। তুমি গায়ব ও জাহির সবকিছু জানো। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন। তুমিই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”

رَبِّ اغْفِرْ لِي خَطَايَاىَ وَجَهْلِي وَإِسْرَافِي فِي أَمْرِي وَكُلَّ ذَلِكَ عِنْدَكَ مَكْتُوبٌ

উচ্চারণ: রাব্বিগফির লি খাতায়াইয়া ওয়া জাহলি ওয়া ইসরাফি ফী আমরি ওয়া কুল্লা যালিকা ‘আন্দাকা মাকতুব।

অর্থ: “হে আমার পালনকর্তা! আমার ভুল, আমার অজ্ঞতা, আমার কাজের অতিরিক্ততা এবং এসবের মধ্যে তোমার কাছে লিপিবদ্ধ সবকিছু ক্ষমা করুন।”

কোন রাতটি লাইলাতুল কদর?
অনেকেরই মাঝে প্রশ্ন থাকে লাইতুল কদর রাত কোন রাত্রি, ভাগ্য রজনীর রাত্রিটি হলো রমজান মাসের শেষ দশের যে কোন বেজোড় রাতই হলো  “লাইলাতুল কদর”।

তবে বেশিরভাগ আলেমগণ মতামত দিয়েছেন ২৭ রমজানের রাতটি বেশি সম্ভাব্য বলে অভিহিত করেছেন।

সহীহ্ বুখারীতে শরীফের ১৮৯২ নাম্বার হাদিসে এসেছে:
হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (স:) বলেছেন যে, তোমরা লায়লাতুল কদর রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতে তালাশ কর।

সহীহ্ বুখারী শরীফের আরেকটি হাদিসে এসেছে হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স:) রমজানের শেষ দশ দিনে ই’তেকাফে বসতেন এবং বলতেন, তোমরা লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ দিনে তালাশ কর।

তিরমিযি শরিফে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, লাইলাতুল কদরে আমল করার  মতো একটি বিশেষ দোয়ার কথাও বলা হয়েছে হযরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরা যদি লাইলাতুল কদর পাই তাহলে কি করবো?

উত্তরে রাসুল (সাঃ) বললেন, বলবে  আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফাআফুআন্নি।

অর্থাৎ হে আল্লাহ তুমি পরম ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ কর, কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও’

শবে কদর রাতের প্রস্তুতি
এই অমূল্য রাতটিকে হেলায় কাটানো উচিত নয়। বরং রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগি বৃদ্ধি করে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করা উচিত। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) শেষ দশকে ইবাদত বৃদ্ধি করে দিতেন এবং রাত জেগে ইবাদত করতেন।

তাই আসুন আমরা সকলেই লাইলাতুল কদরের রাতের জন্য প্রস্তুত হই এবং আল্লাহ তায়ালার অফুরন্ত রহমত, ক্ষমা ও মুক্তির বরকত লাভ করি। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

শেষ কথা
আমরা আপনাদেরকে পবিত্র শবে কদরের ফজিলত ও দোয়া সম্পর্কে আমাদের এই ছোট আর্টিকেলে অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।


শেয়ার করুন