সাহিত্য

বৃদ্ধাশ্রম নয় যৌবনাশ্রম

  প্রতিনিধি ১২ মে ২০২৪ , ৩:১৮:৫৭

শেয়ার করুন

লেখাটা বেশ ভালো লেগেছে তাই শেয়ার করলাম। আপনারও ভালো লাগলে একটা লাইক ও শেয়ার দিবেন।

” বাড়ি ঘর জায়গা জমি সন্তানদের লিখে দিবেন না ।
আপনার ঘরে আপনি বসবাস করবেন । দরকার হলে ছেলে মেয়েরা বাড়ি ঘর তৈরি করে ‘যৌবনাশ্রমে ‘ থাকবে ” :

পরিণত বয়সে এসে আমাদের অনেকেরই হয়তো কাজেও লাগতে পারে গল্পটি!!!

“যৌবনাশ্রম খুঁজে দেখো!”

আব্দুর রহমান সাহেব ক’মাস ধরেই কিছু আঁচ করছিলেন। উনি তিন বছর হয় রিটায়ার করেছেন। সরকারী উচ্চপদে ছিলেন। ভাল অঙ্কের পেনশন পান। স্ত্রী গত হয়েছেন বহুদিন আগে।

দুটি ছেলেকে বড় যত্নে মানুষ করেছেন। বাবা এবং মায়ের দুজনের স্নেহ দিয়ে ভালভাবে লেখাপড়া করে তারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারপর বড় ছেলের বিয়ে দিলেন। একটি নাতি হল। উনার মনে আর আনন্দ ধরে না ।

এরপর ছোট ছেলে নিজের পছন্দের মেয়ে খুঁজে বাবাকে জানালে তিনি সানন্দে সেই মেয়েকে ঘরে নিয়ে এলেন। রিটায়ারের আগেই বড় ছেলের বিয়ে হয়েছিল। তারপর ছোট বৌমা এল।

আব্দুর রহমান সাহেব এখন নাতিকে নিয়ে বেশ সময় কাটান। সংসারের অনেকটা ব্যয় ভার বহন করেন।

একদিন ইজি চেয়ারে বসে সকালে কাগজ পড়ছেন বড় বৌমার গলা পেলেন, আজ বাজার শর্ট আছে.রাতে রান্না হবে না। সে চাকরী করে। বলছে জা কে।

এ বাড়িতে ছেলেদের জন্মের আগে থেকে কাজের মেয়ে জয়নব আছে। সে তাঁর ছেলেদের থেকে বেশ কিছুটা বড়। জয়নব মাতৃহারা দুই ছেলেকে অপার স্নেহে আগলে রেখেছিল।

সে বলল–ভাইজানরা কেউ এনে দেবে।

বড় বৌ বলল–কেন বাবা তো বসে আছেন বাজারটা রোজ করলেই পারেন।

আব্দুর রহমান সাহেবের কানে কথাটা বাজল। বুঝলেন সংসারে তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়েছে।

নিজের মনকে বললেন– মন তুই তৈরী থাক।

এরপর থেকে বৌদের নানা আচরণে তাঁর প্রতি বিরূপতা প্রকাশ পেতে থাকল।

একদিন সকালে বড় ছেলে রাগত গলায় বৌকে বলছে–আমার শার্টটা লণ্ড্রী থেকে আনা হয়নি?

বড় বৌ বললো– না যাবার সময় হয়নি।

বড় ছেলে -বাবা একটু আনতে পারল না? সারাদিন তো বসেই থাকে।

আব্দুর রহমান সাহেবের কানে গেলে ভাবলেন– যুগধর্ম!

এরপর একদিন এক ছুটির দিনে সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে দেখলেন–সবাই আগে ভাগেই উপস্থিত।

জয়নব প্লেটে গরম লুচি, আলু ভাজি আর সন্দেশ পরিবেশন করছে।

বড় ছেলে বলল –বাবা একটা কথা ছিল।

আব্দুর রহমান সাহেব বুঝলেন এরা সকলে কিছু প্ল্যান করেছে। বললেন, বল।

বড় ছেলে বললো, জানো বাবা কাল অফিসের কাজে গাজীপুর গিয়েছিলাম। কাজের ফাঁকে সময় পেয়ে ওখানকার দর্শনীয় জায়গা গুলো দেখতে বেড়িয়েছিলাম। দেখলাম নদীর ধারে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে একটা সুন্দর বৃদ্ধাশ্রম চালু হয়েছে। দেখেই ভাবলাম তুমি ওখানে মনোরম পরিবেশে শেষ জীবনটা থাকতে পারো। আমরা যাব আসব। কিরে ভাই কি বলিস?

ছোট ছেলে বলল, বেশ ভালো হবে।

আব্দুর রহমান সাহেব হেসে বললেন–সব তো শুনলাম। কিন্তু বাবারা তোমরা যেমন আমার জন্য ভাবো, আমিও তোমাদের জন্য ভাবি। তাই আমারও একটা প্রস্তাব আছে তোমাদের জন্য। তোমরাই বরং যুতসই এবং মনোরম পরিবেশের একটা যৌবনাশ্রমের খোঁজ করে নিয়ে সেখানে গিয়ে থাকোনা কেন। বাড়ীটাতো আমারই, পেনশনও পাই ভাল। জয়নব মাকে নিয়ে আমরা বাপ বেটিতে বেশ ভালই থাকব। তোমরাও আসবে যাবে।

এই ভাবে তিনি এক ছক্কায় বাজীমাত করে দিলেন। জয়নবকে বললেন–জয়নব মা, লুচিগুলো ঠাণ্ডা হয়ে গেল। গরম গরম নিয়ে আয় তো।

ছেলেরা আর ছেলেদের বৌয়েরা রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেল, বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলো…..!!

দিন কাল পালটাচ্ছে। তাই যোগ্য জবাব দেবার জন্য তৈরী থাকা উচিৎ ……..

তা নাহলে ভবিষ্যতে বড় বিপদে পড়তে হতে পারে।

-সংগৃহীত।


শেয়ার করুন