রাজনীতি

আমাকে উৎখাত করলে পরবর্তীতে কে আসবে

  প্রতিনিধি ২ মে ২০২৪ , ১১:৫২:৪৯

0Shares

শেয়ার করুন

“আমাকে উৎখাত করলে পরবর্তীতে কে আসবে” সরকারের বিরোধিতাকারীদের প্রতি এই প্রশ্ন রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘কারা আসবে, কে আসবে ক্ষমতায়? কে দেশের জন্য কাজ করবে, কাকে তারা আনতে চায়? সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয়। আর সেটা স্পষ্ট নয় বলে তারা জনগণের সাড়া পাচ্ছে না।’

গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও উপজেলা নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাম চলে গেছে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে। তারা ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আমার একটা প্রশ্ন, বিশেষ করে যারা অতি বাম, সবসময় মনে করি তারা প্রগ্রেসিভ দল, তারা খুবই গণমুখী দল ইত্যাদি। সেখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক আছে তারা আমাকে উৎখাত করবে। পরবর্তীতে কে আসবে তাহলে, সেটা কি ঠিক করতে পেরেছে? সেটাই তো আমার প্রশ্ন।’

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘কারা আসবে, কে আসবে ক্ষমতায়। কে দেশের জন্য কাজ করবে, কাকে তারা আনতে চায় সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয়। আর সেটা স্পষ্ট নয় বলে তারা জনগণের সাড়া পাচ্ছে না। আন্দোলন করে যাচ্ছে বিদেশে বসে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। প্রতিদিন অনলাইনে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে, নির্দেশ দিয়েই যাচ্ছে। যারা আন্দোলন করছে করুক, তাদের তো বাধা দিচ্ছি না।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর তৎপরতা এবং নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনটা যাতে না হয় সেজন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কারও কারও মনে একটু হতাশা ছিল আমি জানি।। তবে আমার শক্তি হচ্ছে দেশের জনগণ। কাজেই জনগণের শক্তির ওপর আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি। এটাও বিশ্বাস করেছি, জনগণ যতক্ষণ চাইবে ততক্ষণই থাকব ক্ষমতায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে আসছি ক্ষমতায়। আমাদের দল তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী কোনো মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বের হয়নি। যারা “গণতন্ত্র নেই, ভোটের অধিকার নেই” বলে তারাই তো মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এটা তারা ভুলে যায়। আপনারা সাংবাদিক, আপনারাই বলেন ১৫ বছর আগে দেশের অবস্থাটা কী ছিল? এখন কি কোনো পরিবর্তনই হয়নি? কেউ যদি না দেখে আমাদের তো কিছু করার নেই!’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি বছর ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে সেটিই সবচেয়ে বেশি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই নির্বাচনটি সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারবিরোধী আন্দোলনের সমালোচনা করেন তিনি।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্যদের স্বজনদের নির্বাচন অংশ না নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না, এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চেয়েছি নির্বাচন যাতে প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, এজন্য বলেছি। তার মানে এই নয় যে, এক জায়গায় ছেলেকে, আরেক জায়গায় স্ত্রীকে এটা তো হয় না। কর্মীদেরও সুযোগ দিতে হবে। এটাই বলতে চেয়েছি।’

যুক্তরাষ্ট্রে ৯০০ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারের ঘটনা বিএনপির কথা মনে করিয়ে দেয় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গাজায় ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করায় যুক্তরাষ্ট্রে ৯০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারের ঘটনা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচারের কথাটাই মনে করিয়ে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা নাকি গণতন্ত্রের একটা অংশ, সেটাও আমাদের শুনতে হয়। যেভাবে একজন প্রফেসরকে ধরে মাটিতে ফেলে গ্রেপ্তার করা হলো… ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরপরই যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপির সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী অত্যাচার করেছিল, এটা সেই অত্যাচারের কথাই মনে করিয়ে দেয়। তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) কাছ থেকে আবার মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়, সবক নিতে হয়। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের।’

ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কোনো বিক্ষোভের আয়োজন করা হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দাঁড়াচ্ছে। আমরা সবসময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আছি। যেখানেই যাই আমার কথা আমি বলবই। যেভাবে গণহত্যা চলছে এটা অমানবিক।’

যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন স্কুল, বিভিন্ন শপিং মল, রেস্টুরেন্টে অনবরত গুলি হচ্ছে আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নেই বোধহয়, আমেরিকায় মানুষ না মারছে। তাদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। তাদের দেশে এই যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুলি করে একেবারে সাধারণ নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে এটাও তো তাদের দেখা উচিত। নিজের ঘর আগে সামলানো উচিত। এটা প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করা।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘গত বছর ২৮ অক্টোবর আমাদের দেশে আন্দোলনের নামে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ এগুলো ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। অবশ্য আমার মনে হয়, আমাদের একটু নতুন পথ নিয়ে নেওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা যদি আমাদের পুলিশকে বলে দিই, আমেরিকার পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায়, সেটা অনুসরণ করতে পারে। সেটা করতে পারি। পুলিশ ধৈর্য ধরতে গিয়ে পিটুনির শিকার হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের হাসপাতালে আক্রমণ, গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। কাজেই আমার মনে হয়, এখন আমাদের পুলিশ কিন্তু আমেরিকান স্টাইলে আন্দোলন দমানোর ব্যবস্থাটা নিতে পারে। আমার মনে হয়, সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে আমাকে সমর্থন করবেন।’

আমরাও অবজারভার টিম পাঠাব, দেখি কেমন নির্বাচন হয় : নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ বিদেশে অবজারভার টিম পাঠাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরাও অবজারভার টিম পাঠাব, দেখি কেমন নির্বাচন হয়।’ কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘আরও অনেক দেশেই তো নির্বাচন হচ্ছে, আমরা দেখব। আমরা অবজারভার টিমও পাঠাব, দেখি কেমন নির্বাচন হয়। সেখানকার মানুষ কীরকম ভোট দেয় আমরা দেখব।’

সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের সেনাসদস্যদের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে থাইল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়ছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আগতদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি দেখবেন বলে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। তিনি বলেছেন, গভীরভাবে তিনি বিষয়টি দেখবেন। মিয়ানমারের বিষয়টি নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন। মিয়ানমারের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।’


শেয়ার করুন

0Shares

আরও খবর

Sponsered content