প্রতিনিধি ৩১ মে ২০২৪ , ৯:৫২:১৮
চার-ছক্কা, নাচ-গান, উচ্ছ্বাস, হৈ-হুল্লোড়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরতে পরতে রোমাঞ্চ। আর এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে ভক্ত-সমর্থকদের আগ্রহ বেশিই। কারণ, এবার চার-ছক্কার উচ্ছ্বাসে ভাসছে মার্কিন মুল্লুকও। অর্থ-বাণিজ্য, সমর শক্তিতে গ্রহের ‘সুপার পাওয়ার’ যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে হয়তো খেলাটির অভিভাবকরাও। ‘স্বপ্নের দেশে’ বাংলাদেশ সময় কাল ভোরে শুরু হচ্ছে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
ডালাসে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ কানাডা ও স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ আয়োজনে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে উচ্চাশা প্রকাশ করেছেন খোদ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ক’দিন আগে নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে সাকিব বলেন- যুক্তরাষ্ট্রের মাটি, হাওয়া-পানি বাংলাদেশ দলকে সুবিধা দেবে। বিশেষ করে ডালাস ও নিউ ইয়র্কের কন্ডিশনের সঙ্গে মিল পাচ্ছেন তিনি।
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল ১২টি দেশ। আসরের দৈর্র্ঘ্য ছিল মাত্র ১৩ দিন। ২০ ওভারের ফরম্যাট নিয়ে তখনো কিছুটা দ্বিধায় ক্রিকেট বিশ্ব।
সাত বছর পর ১৬ দল নিয়ে আয়োজন হয় বিশ্বকাপের। সর্বশেষ ২০২২’র আসর পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল সংখ্যাটা। এবারের বিশ্বকাপ হচ্ছে ২০ দল নিয়ে। শুধু সংখ্যাই নয়, পরিবর্তন হয়েছে খেলাটির ধরনেও। সুইং প্লেন, হিটিং আর্কস, ইন্টেন্ট, ইমপ্যাক্ট এবং লং লিভার নিয়ে আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট খুব জনপ্রিয় নয়। আমেরিকান ফুটবল (এক ধরনের রাগবি), বাস্কেটবল, বেসবল, আইস হকির সামনে এক সময় যেমন কম জনপ্রিয় ছিল ফুটবল বা সকার। ইংলিশ ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম স্থানীয় লীগে (মেজর সকার লীগ) ক্লাব কিনে নিয়ে মার্কিনিদের চোখ ফিরিয়েছেন ফুটবলের দিকে। আর তার দল ইন্টার মায়ামিতে ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসি যোগ দেয়ার পর বলা যায়, এখন যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের জয়জয়কার। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের জাগরণে ভূমিকা রেখেছেন শান্তরা! বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে মার্কিনিরা। এতে ক্রিকেট নিয়ে দেশটিতে আগ্রহ বাড়ারই কথা! টানা দুই হারে সিরিজ খোয়ানোর পর শেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ১০ উইকেটে পরাজিত করে শান্তর দল। পরে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘ম্যাচটি ভালোভাবে জিতেছি। বিশ্বকাপে সাহায্য করবে, আত্মবিশ্বাস দেবে। আমরা এখন জানি কন্ডিশন কেমন হতে পারে এবং আশা করছি সামনে ভালো করতে পারবো।’
২০২২-এ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড এবারো আসরের হট ফেভারিট। যদিও ২০১৯’র ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী ইংলিশরা ৫০ ওভারের সর্বশেষ আসরে শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি। স্বাগতিক ভারতকে হারিয়ে শিরোপা কুড়ায় অস্ট্রেলিয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও ঘরে তুলেছিল অজিরা। তাই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ফেভারিটদের তালিকায় তাদের না রাখার কারণ নেই। সদ্য শেষ হওয়া ভারতীয় টুর্নামেন্ট- আইপিএলে মিচেল স্টার্ক, ট্রাভিস হেড, প্যাট কামিন্স, মার্কাস স্টয়নিসদের নৈপুণ্যও ‘টপ ক্লাস’। আইপিএলে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। পাকিস্তানের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে এক ম্যাচে ৫১ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে বাটলার দেখিয়েছেন, তিনি প্রস্তুত। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করেছিল ইংল্যান্ড। তবে বর্তমান রানার্সআপ দলটিকে এবারের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও দেখছেন না সুনীল গাভাস্কার, ব্রায়ার লারা, ম্যাথিউ হেইডেনের মতো গ্রেট খেলোয়াড়রা। দু’দিন আগে স্টার স্পোর্টসের এক অনুষ্ঠানে তাদের কাছে এবারের বিশ্বকাপের সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্টের তালিকা চাওয়া হয়। এতে ক্যারিবীয় গ্রেট লারার ভবিষ্যদ্বাণীতে শেষ চারে উঠে আসে আফগানিস্তানের নাম।
অনুষ্ঠানে ১০ সাবেক ক্রিকেটারের প্রত্যেকের তালিকায়ই স্থান পেয়েছে ভারত। তুখোড় ফর্মে রয়েছেন বিরাট কোহলি। এবারের আইপিএলে সর্বাধিক ৭৪১ রান সংগ্রহ তার। ফাস্ট বোলার জসপ্রিত বুমরাহও ফর্মের চূড়ায়। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ভেঙে পড়ার অভ্যাস নিয়ে ‘চোকার’ তকমা পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা এবারের আসরের ‘ডার্ক হর্স’। কুইন্টন ডি কক, এইডেন মার্করাম, হাইনরিখ ক্লাসেন, ডেভিড মিলাররা যে কোনো মুহূর্তে বদলে দিতে পারেন চালচিত্র। ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভোর মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সোনালি প্রজন্মের ক্রিকেটাররা খেলা ছেড়েছেন। তবে অনন্য এক কীর্তির হাতছানি ড্যারেন স্যামির। ২০১২ ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান কোচের দায়িত্বে রয়েছেন স্যামি। অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে পৃথক বিশ্বকাপ জয়ের নজির নেই কারও। নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানকেও গোনায় রাখছেন বোদ্ধারা অনেকে।
এবারের বিশ্বকাপের চমক উগান্ডা। আফ্রিকান কোয়ালিফায়ারে শক্তিধর জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় তারা। আইসিসি’র সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে নেপাল, কানাডা, নামিবিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, যুক্তরাষ্ট্র, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস। টেক্সাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম, ফ্লোরিডার লডারহিল ও নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি- যুক্তরাষ্ট্রের তিন ভেন্যুতে হবে আসরের গ্রুপ পর্বের ১৬টি ম্যাচ। বাকি ৪১ ম্যাচ হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬ ভেন্যুতে। আগামী ২৯শে জুন বার্বাডোজে হবে বিশ্বকাপের ফাইনাল।