প্রতিনিধি ২৬ মে ২০২৪ , ২:১৬:১৮
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিয়ে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। রোববার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ‘র লেখা ইংরেজী গ্রন্থ “বেগম খালেদা জিয়াঃ হার লাইভ, হার স্টোরি’ এর বাংলা সংস্করণ ‘খালেদা জিয়াঃ জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে” তিনি এ অভিযোগ করেন। ইতি প্রকাশন ৬৭০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে। শাহরিয়ার সুলতান ইংরেজি এই গ্রন্থটি অনুবাদ করেন। গ্রন্থটির মূল্য দুই হাজার টাকা।
মির্জা আব্বাস বলেন, যার সম্পর্কে কথা বলছি, তিনি (খালেদা জিয়া) কিন্তু আমাদের মাঝে এখানে নাই। উনাকে আমাদের সামনে আসতে দেয়া হয় না, উনাকে কথা বলতে দেয়া হয় না। উনার চিকিৎসা, যেখানে বাংলাদেশের ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছেন, তারা বলছেন- তাকে অবিলম্বে বিদেশে নেয়া দরকার। বারবার বারবার বারবার বলার পরেও জেনেশুনে একটা মানুষকে কিভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এটা ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকবে। আজকে বিভিন্নজনের বক্তব্যে এটা উঠে এসেছে এবং আসবে।
ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকবে যে, যারা উনাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না, তারা ইতিহাসে অপরাধীর মতো থাকবেন। যখন সুযোগ আসবে, ইনআশাল্লাহ তাদের বিচার হবে।
তিনি বলেন, এই সরকার বার বার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপির অস্তিত্ব টিকে থাকতে দেবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই সরকার থাকলে এদেশের স্বাধীনতা থাকবে না যদি এদেশের সাধারণ মানুষ সচেতন না হয়। আমাদের দেশের মানুষকে যদি সচেতন করতে না পারি, যদি নিজেরা সচেতন না হই তাহলে এই সরকারের হাত থেকে বাঁচতে পারবো না। আজকে বক্তাদের বক্তব্যেও এই কথাটি উচ্চারিত হয়েছে।
অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার কথা তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এতো নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণ কোনো মানুষ মানুষের সঙ্গে করতে পারে, এটা বলা যায় না। আমি এখানে অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন (বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক) দেখতে পারছি। আমি উনাকে (খালেদা জিয়াকে) হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। উনারা (চিকিৎসকরা) দেখিয়েছিলেন, কী রকম করে হার্টে বাইপাস করা যাচ্ছে না। দেখে আমার নিজের এতো খারাপ লেগেছিলো যে, এই দৃশ্য দেখার পরে কেউ তাকে আটকিয়ে রাখতে পারে, এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য।
রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা জামান বলেন, আজকে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জেল-জুলুম-নির্যাতন হচ্ছে, এটা একটা টর্চার। রাজনীতি করে গিয়ে উনি বিভিন্ন সরকারের আমলে ভিকটিম হয়েছেন, শেখ হাসিনার আমলে জেলে গিয়েছেন, এরশাদের আমলে জেলে গিয়েছেন, এখন উনি কত বছর ধরে জেলে আছেন, চিকিৎসা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। চোখ দেখাতে আমাদের প্রেসিডেন্ট চলে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুরে ফ্যামিলিসহ, আরো অনেক নেতা চলে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানীতে যখন-তখন। অথচ বেগম জিয়াকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এটা একটা প্রতিশোধ। এভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহর সভাপতিত্বে ও কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, গ্রন্থের অনুবাদক শাহরিয়ার সুলতান, ‘ইতি প্রকাশনা’র প্রকাশক জহির দীপ্তি এবং গ্রন্থের লেখক প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ‘র সহধর্মিনী দিনারজাদি বেগম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জাতীয় পাটিরর্ (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতের মজিবুর রহমান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সাম্যবাদী দলের (মার্কবাদী-লেলিনবাদী) হারুন চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল হক নূর, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, ইকবাল হোসেন প্রধান, এনডিপির আবু তাহের, পিপলস পার্টির বাবুল সর্দার চাখারি, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকী, বিএনপির আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মনিরুল হক চৌধুরী, আবদুস সালাম, আফরোজা খানম রীতা, এসএম আবদুল হালিম, হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বিজন কান্তি সরকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, শামা ওবায়েদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মনি, এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজাম, অধ্যাপক আনম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।