প্রতিনিধি ৩১ মে ২০২৪ , ১১:০৪:৪২
‘মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এসব রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমরা আগে থেকেই বলে আসছিলাম, এদের দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো না গেলে এখানে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের হাব তৈরি হতে পারে, অস্ত্রের ঝনঝনানি হতে পারে। এই হতে পারার মধ্যে কিছু কিছু আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার সকাল ১১টায় উখিয়ার ১৯ নম্বর ঘোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এপিবিএন কার্যালয়ে যান। ওখানে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সভা করেন এপিবিএন কর্মকর্তারদের সঙ্গে। এর পর পরই কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমরা আগে থেকে বলে আসছিলাম এদের দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো না গেলে এখানে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এখানে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের হাব তৈরি হতে পারে। অস্ত্রের ঝনঝনানি হতে পারে। অনেক কিছুই হতে পারে। এই হতে পারার মধ্যে কিছু কিছু আলামত এখন দেখা যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যারা যুদ্ধ করছে তাদের কয়েকজনের আনাগোনা এখানে (রোহিঙ্গা ক্যাম্পে) দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় ভয়ের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে কোনো মাদক উৎপাদন করে না। কিন্তু মিয়ানমার থেকে মাদক আসছে অনেক আগে থেকে। এখন ক্যাম্পের কিছু সংখ্যক লোক মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে অস্ত্র ও খুনে জড়িতদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেওয়াই আমাদের মূল কাজ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি এবং কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল যুদ্ধ করে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ওই দেশের কোনো নাগরিক বা অন্য কাউকে আর অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাতের অস্থিরতার আঁচ এসে পড়ছে ক্যাম্পগুলোতে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে কাউকে যেমন ঢুকতে দেওয়া হবে না, এদিক থেকেও কাউকে যেতে দেওয়া হবে না। এটা নিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। যারা ক্যাম্পে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। এখন আর এসব চলবে না। নিয়মিত ক্যাম্পে টহল চলবে। এপিবিএন, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব একসঙ্গে যৌথ টহল দিবে। আর সবসময় প্রস্তুত সেনাবাহিনী। যখন জরুরি প্রয়োজন পড়বে তখন সেনাবাহিনীও কাজ করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, আজ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের চ্যালেঞ্জগুলো জেনেছি। জেনেছি তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা। তাদের বলেছি, বাংলাদেশ একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনের মধ্য দিয়ে। এপিবিএন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা দিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ায় সহযোগিতা করছে। এপিবিএন তাদের দায়িত্ব পালন করছে বলেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি এখনও শান্তিপূর্ণ ও নিয়ন্ত্রিত।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের কথা ও কাজে মিল নেই। আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো নিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার একটি অস্থিতিশীল দেশ। ওখানে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা। বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ফেরত নিয়ে নানা চুক্তি বা সমঝোতায় স্বাক্ষর হলেও তা মিয়ানমারের কারণে অগ্রগতি হয়নি। আশা করি মিয়ানমার দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে।
এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির এ-৭ ব্লকের পাহাড়ি এলাকা পরিদর্শন করেন। ওখান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যান টেকনাফে। ওখানে বিজিবির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, এপিবিএন প্রধান সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর, ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. ইকবাল, ১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক হাসান বারীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসে ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন।