ইতিহাস ঐতিহ্য

ইয়াজিদ – ১ম পর্ব

  প্রতিনিধি ১৯ জুন ২০২৪ , ১:০৫:৫৮

0Shares

শেয়ার করুন

ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ উটের যুদ্ধ বা জঙ্গে জামাল। এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে তালহা-হযরত জুবায়ের (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) সম্মিলিত যুদ্ধ। এর এক বছর পরে হয় সিফফিনের যুদ্ধ। হযরত আলী ইবনে আবু তালিব এবং প্রথম মুয়াবিয়া এর মধ্যে এই যুদ্ধ হয় বর্তমান সিরিয়ার রাক্কা শহরের আশেপাশে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে সিফফিন নামক স্থানে ৩৭ হিজরীতে। যুদ্ধ শেষ হয় যখন মুয়াবিয়ার সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে উৎখাত করা হয় কিন্তু হঠাৎ করে উভয় পক্ষ সালিশির বা আলোচনার মাধ্যমে তাদের দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়।

মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ান মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত মক্কার কাফেরদের সর্দার ছিলেন। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী ছিলেন হিন্দা যিনি উহুদের যুদ্ধে মহানবী (সা:) এর চাচা শহীদ হামযা (রা:) এর বুক চিরে কলিজা চিবিয়ে উল্লাস করেন। অবশ্য মক্কা বিজয়ের সময় আবু সুফিয়ানের সাথে সাথে হিন্দাও ইসলাম গ্রহন করেন। কিন্তু মহানবী (সা:) তাকে সামনে আসতে নিষেধ করেছিলেন।

হযরত আলী (রাঃ) এর হত্যার পরে তাঁর বড় ছেলে ইমাম হাসান (রাঃ) খিলাফতের দায়িত্বে আসেন। তবে ছয় বা সাত মাসের বেশি শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারেননি। এসময় মুয়াবিয়া আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন। এ ফিতনা শেষ হয় বিখ্যাত এক চুক্তি মাধ্যমে। যার নাম ‘হাসান-মুয়াবিয়া চুক্তি’ (৫৬১)। এ চুক্তির ফলে হযরত মুয়াবিয়া খিলাফতের ক্ষমতায় আসলেন। উমাইয়া শাসনের সূত্রপাত হয়। চুক্তিতে শর্ত থাকে যে, মুয়াবিয়া রাজবংশ চালু করবেন না; অর্থাৎ তাঁর পরে তাঁর সন্তানেরা ক্ষমতায় বসবে না। হযরত হাসান (রাঃ), হযরত হুসাইন (রাঃ) বা সার্বিক মতামতের ভিত্তিতে অন্য কোনো মুসলিম খিলাফতের দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত হবেন। ৫০ হিজরীতে ইমাম হাসান (রা:) কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। হযরত ইমাম হাসান (রা:) কে হত্যার পেছনে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদই মুয়াবিয়া বা ইয়াজিদকে দায়ী করেন। হাসানের মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া চুক্তির শর্ত অগ্রাহ্য করেন। মুয়াবিয়া খেলাফতে তার নিজ বংশকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য পুত্র ইয়াজিদকে খিলাফতের উত্তরাধিকারী রূপে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মদ্যপ, বিলাসী এবং ইন্দ্রিয়পরায়ন ইয়াজিদ অযোগ্য হলেও মুয়াবিয়া বিভিন্ন উপায়ে তাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করতে থাকেন। তিনি প্রাদেশিক শাসকদের দামেশকে ডেকে পাঠান এবং উত্তরাধিকারী ইয়াজিদের জন্য তাদের নিকট হতে সমর্থনের শপথ আদায় করেন। সিরিয়া ও ইরাক বিনা আপত্তিতেই আনুগত্য স্বীকার করে। এরপর ইয়াজিদের সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে মুয়াবিয়া মক্কা ও মদিনায় যান। মদিনায় খেলাফতের প্রধান প্রার্থী ছিলেন হযরত আলী (রা:) ও মা ফাতেমার (রা:) পুত্র হোসাইন, হযরত আবু বকরের (রা:) পুত্র আব্দুর রহমান এবং হযরত ওমরের (রা:) পুত্র আব্দুল্লাহ। মক্কা-মদিনার অধিবাসীগণ প্রথমে বিরোধিতা করলেও মুয়াবিয়া যুক্তি প্রদর্শন করে অবশেষে তাদের নিকট থেকে সমর্থন আদায় করেন। একপর্যায়ে সমস্ত মুসলিম সাম্রাজ্যই সিরিয়া, ইরাক, মক্কা ও মদিনার পথ অনুসরণ করল। এরপরই মুয়াবিয়া তার পুত্র ইয়াজিদকে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে। এভাবেই মুয়াবিয়া ইসলামি খেলাফতকে বংশগত সম্পত্তিতে পরিণত করেন। এরপর দীর্ঘদিন শাসন কার্য পরিচালনা করে মুয়াবিয়া ৬০ হিজরী অর্থাৎ ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

পিক : দামেশক – দ্য সিটি অফ জেসমিন।


শেয়ার করুন

0Shares