প্রতিনিধি ৭ জুন ২০২৪ , ১০:৫১:১০
সাংবাদিকদেরকে পড়ালেখা করে আসার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
শুক্রবার (৭ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে সাংবাদিকদের এ পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমি দেখলাম, বেশিরভাগই হলো খুবই ইমম্যাচিউর (অপরিপক্ব)। আমি খুবই দুঃখিত হয়েছি। আপনাদের (সাংবাদিকদের) লেভেল অব ম্যাচিউরিটি দেখে আমি খুবই নিরাশ।’
আগেরদিন বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। রীতি অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার পরদিন এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন- অর্থনীতির আকার ছোট হয়ে আসছে। এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটু ম্যাচিউর প্রশ্ন আশা করেছিলাম। আমি খুবই নিরাশ হয়েছি।’
আবুল হাসান মাহমুদ আলী ওই সাংবাদিককে উদ্দেশ করে আরও বলেন, ‘আপনি অতি সরলীকরণ জিনিসটা খুবই রপ্ত করে ফেলেছেন। এগুলো তো একেবারে ওভার সিম্প্লিফিকেশন (অতি সরলীকরণ)। এইভাবে ইকোনমি চলে নাকি? হ্যাঁ, আমরা সব ছোট হয়ে গেলাম, আমাদের সব শেষ। কোথায়? আরও একটু পড়ে-টড়ে আসবেন। এইভাবে অতি সরলীকরণ করবেন না, একটু ম্যাচিউরিটি নিয়ে আসেন, প্রশ্ন যখন করেন।’
আরেক টেলিভিশনের রিপোর্টার এরপর অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘বাজেট বক্তব্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় কোনও বার্তা দেখিনি। আর্থিক খাতের দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে আজকে আপনি কী বলবেন? কেন বার্তা দিচ্ছেন না, আপনার ওপর কি কোনো চাপ আছে?’
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো বলছি খোলাখুলি। আমরা তো কোনও রাখঢাক করিনি। তো আপনি খালি ঘুরে ফিরে ওই একই কথায় যাচ্ছেন কেন? এটা তো বুঝতে পারলাম না। এটা কী ধরনের প্রশ্ন?’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কীভাবে প্রশ্ন করে এগুলো তো শিখতে হবে আপনাদেরকে, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে। কারণ এটা কোন সাংবাদিকতা না। খালি এক কথায় ঘুরে ফিরে বলেন এবং অতি সরলীকরণ। এভাবে চলে নাকি? সমাজ, সংসার এভাবে চলে? কোথাও চলে না। এগুলো (বাজেট বক্তব্যের বই হাতে নিয়ে) দেখেন, দেখে একটু শেখেন। তাহলে আমাদেরও কাজ করতে সুবিধা হবে।’
এরপর আরেকটি বেসরকারি টেলিভিশনের রিপোর্টার প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, ‘আপনি সজ্জন ব্যক্তি, তাহলে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়াতে কেন গোঁজামিল দিলেন? আরেকটি বিষয় হলো আপনি বলছেন- আমাদের রিজার্ভ এই অর্থবছর শেষে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে, যেটা এখন প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আপনি রিজার্ভ বাড়াবেন কীভাবে? আপনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে টাকা না ছাপিয়ে ডলার ছাপানোর দায়িত্ব দিয়েছেন নাকি?’
উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একেবারেই নন-সিরিয়াস প্রশ্ন, ঠিক আছে! এ প্রশ্ন উত্তর দেওয়ার যোগ্য নয়।’
একটি দৈনিক পত্রিকার এক রিপোর্টার প্রশ্ন করেন- ‘পণ্যের দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাবে কাঙ্ক্ষিতভাবে প্রতিফলন ঘটে না। আমি প্রশ্ন করবো- বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে কি না?’
উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে কাজ করার চেষ্টা করছি। এটা কী ধরনের প্রশ্ন করলেন, সমন্বয় করা হবে কি না। অবশ্যই করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সব শেষ প্রশ্ন করেন আরেকটি বেসরকারি টেলিভিশনের রিপোর্টার। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু আইনে এখনও আছে। আইন কবে, কখন সংশোধন করবেন?’
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কবে, কখন করবেন এটা কেউ বলে নাকি। আপনি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন কবে করবেন এটা, এ রকম হয় না। আইনটা সংশোধন করতে হবে। বলেছি করার জন্য।’
আবুল হাসান মাহমুদ আলী এরপর বলেন, ‘আমি খুবই দুঃখিত হয়েছি। আপনাদের লেভেল অব ম্যাটিউরিটি দেখে। খুবই নিরাশ। তো যাক দুই-একজন ভালো প্রশ্ন করেছেন। তবু আমি সবাইকে ধন্যবাদ দেবো। আপনারা অনেক ইন্টারেস্ট প্রদর্শন করেছেন, কিন্তু ইন্টারেস্টটা ম্যাচিউর হওয়া দরকার। লেখাপড়াটা একটু করতে হবে। এটা দয়া করে করবেন।’