ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচে ফেভারিট স্পেনের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল স্বাগতিক জার্মানি। হাইভোল্টেজ এই দুই দলই ছিল সমানে সমান। তবে শেষ হাসিটা হয়তো তোলা ছিল স্পেনের জন্য। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জামার্নিকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে স্পেন।শুক্রবার (৫ জুলাই) জার্মানির ঘরের মাঠে স্টুটগার্টে রোমাঞ্চ, উত্তেজনা, বিতর্ক ও নাটকীয়তায় ঠাসা লড়াইয়ে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দানি ওলমো স্পেনকে এগিয়ে নেওয়ার পর ৮৯তম মিনিটে ফ্লোরিয়ান ভিরৎজের গোলে সমতায় ফেরে জার্মানি। ১১৯তম মিনিটে ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেন মেরিনো।
এদিন ম্যাচের শুরুতেই জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যারকে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল স্পেনের সামনে। মোরাতার পাস থেকে বল পেয়ে গোলরক্ষক বরাবর মেরে দেন পেদ্রি। এর কিছুক্ষণ পরই টনি ক্রুসের শক্ত দুই ট্যাকেলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় পেদ্রিকে। বদলি নামেন দানি ওলমো।
তবে স্পেনের আক্রমণের ধার কমেনি তাতে। ১৫ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে ইয়ামালের বাঁ পায়ের শট বেশ ক্লোজ ছিল। পোস্টের ডানদিক ঘেঁষে চলে যায়। এর দুই মিনিট পর ফ্যাবিয়েন রুইস বক্সের বাইরে থেকে মারেন ওপর দিয়ে।ম্যাচের ২১ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় জার্মানি। জসুয়া কিমিচের ক্রস থেকে কাই হাভার্টজের বক্সের মধ্য থেকে হেড অবশ্য ফিরিয়ে দেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমন। ৩৫ মিনিটে স্পেনের হাভার্টজকে গোল করতে দেননি নুয়্যার।
৩৯ মিনিটে দানি ওলমো আর ৪৫ মিনিটে ইয়ামালের শটও আটকে দেন জার্মান গোলরক্ষক। গোলশূন্য থেকেই বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে ভালো একটি সুযোগ হারান মোরাতা। বক্সে ইয়ামালের পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে পান তিনি। সঙ্গে লেগে থাকা এক ডিফেন্ডারের চাপে ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন আতলেতিকো মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড।
৫১তম মিনিটে ‘ডেডলক’ ভাঙেন পেদ্রির বদলি নামা ওলমো। বক্সে ঢুকে দারুণ পাস দেন ইয়ামাল, ছুটে গিয়ে প্রথম স্পর্শে ডান পায়ের শটে ঠিকানা খুঁজে নেন লাইপজিগ ফরোয়ার্ড ওলমো। আসরে তার দ্বিতীয় গোল এটি।
ইউরোর ইতিহাসে প্রথম টিনএজার হিসেবে এক আসরে তিনটি অ্যাসিস্ট করলেন ১৬ বছর বয়সী ইয়ামাল। জামাল মুসিয়ালা, নিকলাস ফুয়েলখুগের দুটি লক্ষ্যভ্রষ্ট শটের পর ৭০তম মিনিটে দুর্দান্ত সেভে ব্যবধানে ধরে রাখেন সিমন। বক্সের বাইরে থেকে হোবার্ত আনড্রিসের প্রচেষ্টা ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি।
৭৭তম মিনিটে স্বাগতিকদের সামনে বাঁধ সাধে পোস্ট। ডান দিক থেকে সতীর্থের পাস পেয়ে বক্সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গেলেও শট নেন ফুয়েলখুগ, গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল পোস্টে লাগে।
৮২তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ হারান হাভার্টজ। দুর্বল গোল-কিকে সিমন বল তুলে দেন প্রতিপক্ষের পেয়ে। এরপর পোস্ট ছেড়ে অনেকটা ওপরেও উঠে যান তিনি, সেই সুযোগ নিতে হাভার্টজ বক্সের বাইরে থেকে শট নিলেও বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
বিদায়ের ক্ষণ যখন ঘনিয়ে আসছিল, তখনই নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট বাকি থাকতে সমতার স্বস্তি ফেরে স্বাগতিক শিবিরে। মাক্সিমিলিয়ানের ক্রসে দূরের পোস্টে লাফিয়ে দারুণ হেডে বল ভেতরে পাঠান জসুয়া কিমিখ, দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা ফ্লোরিয়ান ভিরৎজের শট পোস্টে লেগে জালে জড়ায়।
বুন্ডেসলিগার এবারের মৌসুম সেরা খেলোয়াড় ভিরৎজ ভীষণ প্রয়োজনের সময়ে গোল করে দলকে টেনে নেন অতিরিক্ত সময়ে।
সেখানে প্রথমার্ধের শেষ দিকে আরেকটি গোলের সুযোগ পান ভিরৎজ। টমাস মুলারের পাসে বায়ার লেভারকুজেন মিডফিল্ডারের শট পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়।
১০৭তম মিনিটে বক্সে মুসিয়ালার শট স্পেনের মার্ক কুকুরেইয়ার হাতে লাগলে পেনাল্টির জোরাল আবেদন করে জার্মানির খেলোয়াড়রা। রেফারির পেনাল্টি না দেওয়াটা ছিল বিস্ময়কর। ১১৭তম মিনিটে কিমিখের ক্রসে বক্সে ফুয়েলখুগের হেড ঝাঁপিয়ে আটকান সিমন।
ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়াবে বলে মনে হচ্ছিল যখন, ঠিক তখনই জার্মানির জালে বল পাঠান মেরিনো। ওলমোর ক্রসে বক্সে ফাঁকায় হেডে লক্ষ্যভেদ করেন ৮০তম মিনিটে বদলি নামা এই মিডফিল্ডার।
অতিরিক্ত সময়ের যোগ করা সময়ে মুসিয়ালাকে পেছন থেকে টেনে ধরে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন দানি কারভাহাল। একটু পরই বাজে শেষ বাঁশি। উচ্ছ্বাসে মাতে স্পেন।
জার্মানি শিবিরে তখন শুধুই একরাশ হতাশা। ঘরের মাঠের আসরে শেষ আট থেকে বিদায় নেওয়ার বিষাদ সঙ্গী হলো তাদের। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর দলটির আরেকটি বড় টুর্নামেন্ট জয়ের অপেক্ষা বেড়ে গেল আরও। টনি ক্রুসের শেষটাও ভালো হলো না। এই ম্যাচ দিয়ে পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি ঘটল জার্মান তারকা।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ