অর্থনীতি

রেমিট্যান্স শাটডাউন, কোন পথে দেশের অর্থনীতি

  প্রতিনিধি ৩০ জুলাই ২০২৪ , ৭:৫১:৪৬

শেয়ার করুন

দেশে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলছে ডলার সংকট। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগেও সংকট কাটানো সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে রেমিট্যান্স শাটডাউন ক্যাম্পেইন। প্রবাসীদের ক্যাম্পেইন যদি সফল হয় আর সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি এর বিপরীতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারে তাহলে রেমিট্যান্স আহরণ কমে যাবে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে চলতি জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আন্দোলনে সহিংসতায় বহু হতাহতের প্রতিবাদে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী। যার প্রভাব ইতিমধ্যে ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময়ের রেমিট্যান্সে দেখা গেছে। সার্বিকভাবে চলমান অস্থিরতার মধ্যে ভুল পথে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২৭ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এর মধ্যে প্রথম ১৩ দিনে আসে ৯৭ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং ১৪ থেকে ২০ জুলাই ৭ দিনে আসে ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর পরের সপ্তাহ অর্থাৎ ২১ থেকে ২৭ জুলাই তা নেমে দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ডলারে।

এ হিসাব অনুযায়ী জুলাইয়ের ২৭ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ৫ কোটি ৪০ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪ ডলার। এটি আগের মাস জুনের চেয়ে কম। জুনে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। ওই মাসে প্রতিদিন প্রবাসী আয় ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ ২১ হাজার ৬৬৬ মার্কিন ডলার।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশে পাঠানো হয়।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রেমিট্যান্সের উপর ইতিমধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতেও যদি প্রবাসী আয় কমতে থাকে তাহলে অর্থনীতির জন্য খারাপ হবে। অপরদিকে একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে অর্থ পাচারকারীরা সক্রিয় হয়। এতে অর্থপাঁচার বেড়ে যেতে পারে।

চলমান অস্থিরতার মধ্যে প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠালেও দেশে ডলার আসবে না। কারণে এক্ষেত্রে হুন্ডি বেছে নেবে তারা। এর ফলে দেশের অর্থনীতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলেও মনে করছেন এ অর্থনীতিবিদ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ডাকা সাম্প্রতিক সময়ের শাটডাউনের প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ফিকি) হিসাব অনুযায়ী, সাম্প্রতিক অচলাবস্থার অর্থনৈতিক প্রভাব প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের হতে পারে, যা আরও বাড়ছে।

তবে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বিজিএমইএর বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, এই সংগঠনের সদস্য কারখানাগুলোতে ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, এইসব ক্যাম্পেইন ও গুজব ছড়িয়ে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করা যাবে না। প্রবাসীরা তাদের পরিবারের জন্য টাকা পাঠায়, তারা ব্যাংকেই পাঠাবে। আর এক সপ্তাহ বা এক মাসের রেমিট্যান্স দেখে কিছু বোঝা যাবে না। অন্তত ৬ মাসের রেমিট্যান্স গ্রথ দেখে বোঝা যাবে যে, প্রবসীরা ডলার পাঠাচ্ছে কিনা।

প্রবাসীদের মধ্যে ‘রেমিটেন্স শাটডাউন’ এর ব্যাপক প্রচারণার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকর পক্ষ থেকে কয়েকটি ব্যাংককে মৌখিকভাবে বেশি দরে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্সের ডলারের দর ১১৯ টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। বেশি দামে ডলার কেনার মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী করা তোলা।

সম্প্রতি বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করে এমন ১২টির মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ব্যাংকগুলোতে ডলার রেট সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার রেট ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৯ টাকা ৭০ পয়সা অফার করছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল (বিপিএম) ৬ অনুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭৮ কোটি ডলার।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content