প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনের রাজধানী বেইজিং পৌঁছেছেন। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত বিস্তৃত সহযোগিতা অংশীদারিত্বে’ উন্নয়নের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার এ সফরকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। তবে, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের দিকে সতর্ক নজর রাখছে ভারত।
সোমবার (৮ জুলাই) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় বেইজিং পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ থেকে ১১ জুলাই বেইজিংয়ে অবস্থানকালে ১০ জুলাই চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিংপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে একটি প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা।
চার দিনের এই দ্বিপাক্ষিক সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ২০ থেকে ২২টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ভারতীয় বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা গেছে, টানা চতুর্থ মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর এটি শেখ হাসিনার প্রথম চীন সফর। তাই এ সফরের দিকে সতর্ক নজর রাখছে ভারত। ভারত বুঝতে পারছে, চীন থেকে বাংলাদেশে আরও অর্থ প্রবাহিত হলে বেইজিংয়ের ওপর ঢাকার নির্ভরতা বাড়বে।
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত সফরের দুসপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে চীন যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তার এই সফর এমন একটি সময়ে হচ্ছে, যখন ঢাকা চীনের দিকে ‘উল্লেখযোগ্যভাবে ঝুঁকে পড়ার’ লক্ষণ দেখাচ্ছে। শেখ হাসিনার সফরকালে বাংলাদেশ-চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একটি ‘ব্যাপক কৌশলগত-সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত হতে পারে। যেটিকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তৃতীয়-সর্বোচ্চ স্তরের সম্পর্ক হিসেবে বিবেচনা করে চীন।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন মতে, ঢাকায় জল্পনা রয়েছে, শেখ হাসিনার সফরে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হতে পারে। পাশাপাশি, একাধিক খাতে ২০ থেকে ২২টি সমঝোতা স্মারক সই এবং ২ হাজার কোটি ডলারের ঋণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।
ভারতের একজন সাবেক কূটনীতিক দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, নয়াদিল্লিকে ‘নিবিড়ভাবে এই সফরের ফলাফল’ দেখতে হবে।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার সফরের আগে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া চীনের এক্সিম ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত ২ হাজার কোটি ডলারের ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে, যার মধ্যে চীন থেকে আমদানির অর্থ পরিশোধের সুবিধার্থে ৫০০ কোটি ডলার ইউয়ানে দেয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগীয় প্রধান লিউ জিয়ানচাও-ও সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন। ঢাকার সূত্র বলছে, শেখ হাসিনার এই সফরের পর ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে পরিবর্তন ঘটবে, যার প্রতিফলন দেখা যাবে যৌথ বিবৃতিতে।
এদিকে, বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্ধু এবং চীন উন্নয়নের।
দ্য টেলিগ্রাফের ভাষ্যমতে, ওবায়দুল কাদেরের এই কথায় দিল্লির উদ্বেগ কমার সম্ভাবনা কম। কারণ ভারত বুঝতে পারছে, চীন থেকে বাংলাদেশে আরও অর্থ প্রবাহিত হলে বেইজিংয়ের ওপর ঢাকার নির্ভরতা কেবলই বাড়বে।
রোববার (৮ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকালে অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি ও দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দুই দেশের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধনেরও ঘোষণা করা হবে এ সফরে।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ