প্রতিনিধি ১৫ আগস্ট ২০২৪ , ৬:২০:২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে তাঁর জন্ম। দিনটি উপলক্ষে বিএনপি দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গত কয়েক বছর এই দিনে বিশেষ কোনো কর্মসূচি পালন করেনি দলটি।
চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়া চতুর্থ। তাঁর বাবা এস্কান্দার মজুমদার, মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। পৈতৃক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে। ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় বেগম খালেদার।
এ দম্পতির ঘরে ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর তারেক রহমান ও ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম।
১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন। এর পর পরই জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া। তিনি ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হন।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এ পর্যন্ত তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন খালেদা জিয়া। ১৯৯৩ সালে তিনি সার্কের প্রথম মহিলা চেয়ারপারসন হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট নির্বাচনে জয়লাভের পর তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। ওয়ান-ইলেভেনের পর ফখরুদ্দীন সরকার ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারাভোগ করেন তিনি।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হলে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না, এমন শর্তে সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই থেকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। এই মুহূর্তে তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ৬ আগস্ট খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসের পাশাপাশি ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। তিনি এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ‘হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায়’ গত ৮ জুলাই ভোররাতে তাকে ‘ফিরোজা’ থেকে বসুন্ধরার এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাসপাতালে থেকেই স্থায়ী মুক্তির সুসংবাদ পান বেগম জিয়া। দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির পর বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিদেশে নেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও জার্মানি এই তিন দেশের যেকোনো একটিতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তবে জানা গেছে, বিএনপি এবং বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে টানা ১০-১৫ ঘণ্টা ভ্রমণ করার মতো শারীরিক অবস্থা খালেদা জিয়ার নেই। এ দিক থেকে আকাশপথে স্বল্প দূরত্ব বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে তাকে সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ডে নেয়া হতে পারে। সেখানে শারীরিক অবস্থার উন্নতিসাপেক্ষে বেগম জিয়াকে পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
দলীয় চেয়ারপারসনের জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সারা দেশের নেতাকর্মীদের কেক কাটাসহ কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। সবাইকে তার জন্য দোয়া করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।