প্রতিনিধি ২৭ আগস্ট ২০২৪ , ৪:৩৫:০০
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী হাই কমিশনের বর্তমান সত্যায়ণ পদ্ধতি বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে ধ্বংস করবে বলে সিঙ্গাপুরে কর্মরত এবং সিঙ্গাপুর অভিমুখী প্রবাসীদের অভিযোগ। সিঙ্গাপুর সরকারের কোন নোটিস ছাড়া নিজেদের মনগড়া কিছু আইন তৈরী করে শ্রমবাজারে ব্যাপক অব্যবস্থাপনার জন্ম দিচ্ছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। তাই শ্রমিক বান্ধব আইন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশী প্রবাসীগন।
জানা যায়, নতুন কোন শ্রমিক সিঙ্গাপুরে যেতে হলে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী হাইকমিশন থেকে নির্দিষ্ট পরিমান ফি (১২ ডলার) জমা দিয়ে সত্যায়িত করতে হয়৷ বাংলাদেশী শ্রমিক আনতে হলে সত্যায়িত প্রক্রিয়াটি আবেদনকারী কোম্পানিকে বাংলাদেশী হাইকমিশনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে করতে হয়। কোম্পানীর কোন প্রতিনিধিকে উপস্থিত হতে হবপ।যা এক প্রকার বাড়তি ঝামেলা ছাড়া কিছুই না৷ এই উটকো ঝামেলার কারনে অনেকেই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে বলে জানা যায়।সিঙ্গাপুরের কেউ সময় নষ্ট করতে চায় না,যা বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে দীর্ঘ সময় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
সিঙ্গাপুরে কর্মরত বিদেশী ঠিকাদারি কোম্পানীর মালিকরাও এই ধরনের সিস্টেমে ব্যাপক বিরক্ত প্রকাশ করছেন। এ ধরনের আইন নিজেদের বিজনেস পলিসিতে না থাকায় শ্রমিক নিয়োগে অন্যান্য দেশ থেকে তাদের চাহিদা পূরণ করছে। এই বিষয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত প্রতিটি শ্রমিক হতাসা ব্যাক্ত করেছেন। এই নিয়ম চালু করার পর হাই কমিশনের পেইজে প্রচারিত নোটিসে সকলের বক্তব্য দেখলেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়।এছাড়াও সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত প্রবাসীদের তৈরি অন-লাইন পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বিগত বছর ধরেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
সিঙ্গাপুরে Cy constitution কোম্পানিতে কর্মরত একজন প্রবাসী বলেন,আইপি সত্যায়িত করার পরও আমাকে বাড়তি টাকা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ম্যানপাওয়ার কার্ড পেতে আলাদা টাকা দিতে হয়েছে।আইপি সত্যায়িত হলে একটি পিন নাম্বার সিঙ্গাপুর থেকে পাঠানো হয় সে পিন নাম্বার বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি অফিসের কম্পিউটারে না থাকলে টাকা দিলেই বাংলাদেশ থেকে পিন ছাড়াই কাজ হয়ে যায়।
এছাড়াও সিঙ্গাপুর প্রবাসী জানান, বাংলাদেশীদের জন্য আইপি আবেদন করলে মিনিস্টার অব ম্যানপাওয়ার থেকে অজানা কারনে রিজেক্ট আসে৷ অথচ অন্য দেশের জন্য আবেদন করলে খুব দ্রুতই তা এপ্রুভ করা হয়। বাংলাদেশীদের আইপি কেন রিজেক্ট আসে তা জানতে হাইকমিশনে বার বার যোগাযোগ করলেও কমিশন কোন সদুত্তর দিতে পারেনি বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এরই মধ্যে হাইকমিশনের নতুন পদক্ষেপের কারনে সিঙ্গাপুরের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন।
ফলে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী শ্রমিক আসার অপার সম্ভাবনা থাকলেও আইনি জটিলতার কারনে সম্ভব হচ্ছে না৷ এতে দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ আমরা হারাতে বসেছি সিঙ্গাপুরে আমাদের শ্রম বাজার৷
সিঙ্গাপুর প্রবাসী শরীফ উদ্দিন জানান, বিশ্বে আর কোথাও এমন অনিয়ম আছে কিনা অদৌ জানা নেই। সহজ বিষয়গুলিকে মাকড়শার জালের মতো তারা বিস্তৃত করে যাচ্ছে। কাদের প্ররোচনায় এই ধরনের মনগড়া সিদ্ধান্ত নিচ্ছে প্রশ্ন থেকে যায়! প্রবাসমুখী শ্রমিকদের নিয়ে হাইকমিশনের এই ধরনের হাস্যকর ছেলেখেলা সিদ্বান্ত নেওয়ার পূর্বে সে দেশে অবস্থানরত শ্রমিকদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন ছিলো অথবা সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের পরিচালিত যেই পেইজ রয়েছে সেখানে জনমত যাচাই করা প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, তারা এই ব্যাপারটির ভালোমন্দ কিছু বিশ্লেষণ না করেই তারা অতর্কিতভাবে একটি অবাঞ্চিত বিষফোড়া সিস্টেম চাপিয়ে দিয়েছে!
সোনারগাঁয়ের প্রবাসী শামীম আহমেদ জানান, মালিকরা সিঙ্গাপুরের লাইনে সত্যায়িত করবে এটা ভাবা যায় না। তবে সিস্টেমটা যদি অনলাইনে অনলাইনে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে হতো তবে কিছুটা হলেও মেনে নেওয়া যেতো। তা না করে নগদ অর্থ লেনদেন যেন অনলাইনের যুগে এনালগ সিস্টেমে ফিরে যাওয়া। যার কুফল সহ্য করে ইতিমধ্যেই ভুক্তভোগীরা মতামত প্রকাশ করেছেন!
সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত প্রবাসীরা আশা করছেন সিঙ্গাপুর হাইকমিশন ও বর্তমান নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব শীঘ্রই এই নিয়ম বাতিল করে পুরোনো নিয়োগ সিস্টেম চালু করবেন। নয়তো অচিরেই স্বপ্নের দেশে পারি জমানো স্বপ্নই থেকে যাবে।