সারাদেশ

জেলায় জেলায় হামলা, গুলি, সংঘাত

  প্রতিনিধি ২ আগস্ট ২০২৪ , ৬:১৬:২৯

শেয়ার করুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব-ঘোষিত গণমিছিলে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ, ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সংঘর্ষে পুলিশ টিয়ারশেল, শটগানের গুলি ছুড়ে। এ সংঘর্ষে খুলনায় মো. সুমন নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়। অন্যদিকে হবিগঞ্জে নিহত হয়েছে একজন। গতকাল জুমার নামাজের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে এসব কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও জনতা অংশ নেন।
উত্তরায় সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১: ঢাকার উত্তরায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাহমিদ হুজাইফা চোখে গুলিবিদ্ধ ও উত্তরা ১১নং সেক্টরের ১নং রোডে অবস্থিত ভুবন লন্ড্রি হাউজের মালিক দুলাল হাওলাদার মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

হেলমেট পরা এক যুবক আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন

ড়া মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তামিম নামের আরেক শিক্ষার্থী উত্তরা ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া খেয়ে উত্তরা ১১নং সেক্টরের একটি বাসায় আন্দোলনকারী কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরে সেই ভবনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা ওই ছাত্রীদের বেধড়ক মারপিট করে।

ফেনীতে সড়ক অবরোধ করে গণমিছিল- ফেনীতে বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থী-জনতাকে হত্যার প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে সড়ক অবরোধ করে গণমিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। জুমার নামাজের পর শহরের জহিরিয়া মসজিদের সামনে থেকে এ গণমিছিল শুরু হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই,’ ‘তুমি নও আমি নই, রাজাকার রাজাকার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারোর বাপের না’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন তারা। প্রায় ৩০ মিনিট সেখানে অবস্থান করে মোনাজাত করা হয়। পরে আবারো মিছিল নিয়ে শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে যান শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রামে গণমিছিলে সর্বস্তরের মানুষের ঢল: চট্টগ্রামে জুমার নামাজ শেষে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুক্রবার নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে থেকে পূর্ব নির্ধারিত এ গণমিছিল শুরু হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ গণমিছিলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার লোকজন অংশ নেন। মিছিলটি আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে শুরু হয়ে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে সমাপ্ত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য আশরাফ উদ্দিন বলেন, আমাদের ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন কর্মসূচি চলমান থাকবে।

ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে গণমিছিল: কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার ও মামলা প্রত্যাহারসহ ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে গণমিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বাদ জুমা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘স্বৈরাচারীর গদিতে, আগুন লাগাও এক সাথে’সহ বিভিন্ন স্ল্লোগান দেন।

নর্থসাউথে বিক্ষোভ ও গায়েবানা জানাজা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ১ নম্বর গেটের সামনে গ্রাফিতি অঙ্কন, গায়েবানা জানাজা ও বিক্ষোভ হয়েছে। এতে অংশ নেন নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিসহ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার সকালে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দেওয়ালে ‘একমাত্র সান্ত্বনা শহীদের মর্যাদা’, ‘স্টপ ডিক্টেটরশিপ’, ‘আগামী ফাগুনে আমরা হবো লাখোগুণ’ ইত্যাদি লেখেন শিক্ষার্থীরা। এরপর জুমার নামাজের বিরতিতে যান তারা। জুমার পর বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এতে সংহতি জানান অন্তত ৩০ জন শিক্ষক।

রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ: বৃষ্টিতে ভিজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর ফটকের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content