প্রতিনিধি ১৯ আগস্ট ২০২৪ , ৭:৫৭:২৩
প্রবাসী আয়ে বইছে সুবাতাস। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে (১ থেকে ১০ আগস্ট) প্রবাসী আয় প্রতিদিন গড়ে এসেছিল ৪ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। সেখানে মাসটির শেষ সাতদিনে (১১ থেকে ১৭ আগস্ট) প্রবাসী আয় প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৯ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বৈধপথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ হু হু করে বেড়ে গেছে। গত ৫ই আগস্টের আগে রেমিট্যান্স আসা থমকে গেলেও পরে তা বেড়েছে বহুগুণ। কারণ নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আস্থা বাড়ছে প্রবাসীদের। নতুন সরকারকে শক্তিশালী করতে তারা আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে দেশে বৈধপথে ১১৪ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার বেশি। এরমধ্যে আগস্টের প্রথম ৩ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এ ছাড়া শুধু ৪ থেকে ১০ই আগস্ট পর্যন্ত এসেছে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ডলার। আর ১১ থেকে ১৭ই আগস্ট পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৫ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের অর্থনীতি যখন সংকটে, তখন রেমিট্যান্স বেশি পরিমাণে আসার সংবাদ নিঃসন্দেহে নতুন করে আশা জাগাচ্ছে। সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে প্রবাসীরা চাঙা করতে চান দেশের অর্থনীতি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে ও একদিন পর পর্যন্ত (১-৬ই আগস্টের মধ্যে) দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল মাত্র ৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর পতনের পর ৭-১০ই আগস্ট ৩ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ডলার।
অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ১২ কোটি ডলারের বেশি। এদিকে আগস্টের প্রথম ১০ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। সেখানে শেষ সাতদিনে প্রবাসী আয় প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৯ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
তারা আরও বলেন, জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন, ইন্টারনেট ও সংঘাতের কারণে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউন ঘোষণা দেন। এর প্রভাবে ওই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে। যার ধারাবাহিকতা ছিল চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেও। সরকার পতনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
জানা গেছে, ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনের চেষ্টা করায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বৈধ্যপথে না পাঠিয়ে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এতে হঠাৎ করে দেশে রেমিট্যান্স আসার প্রবাহ নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। ফলে টানা ৩ মাস রেমিট্যান্স দুই বিলিয়নের বেশি এলেও জুলাই মাসে হঠাৎ দুই বিলিয়ন ডলারের নিচে চলে আসে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আস্থা বাড়ছে প্রবাসীদের। নতুন সরকারকে শক্তিশালী করতে তারা আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গত ৪ঠা আগস্টের পর থেকে ১৭ই আগস্ট পর্যন্ত ১৩ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৩ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮ কোটি ডলার। আগে যেটা গড়ে ছিল প্রায় ৫/৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ বৈধপথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণও বাড়ছে।
সৌদি আরবে অবস্থানরত জসিম বলেন, পরিবারের স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে সবাইকে ছেড়ে প্রবাসে অবস্থান করছি। কিন্তু গত জুলাই মাসে দেশে ইন্টারনেট বন্ধসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে পারিনি। কারণ টাকা পাঠানোর সব মাধ্যমই বন্ধ ছিল। এমনকি পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি নাই। তখন অনেকেই বিকল্প উপায়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছেন। এখন নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ায় আমাদের প্রবাসীদের আস্থা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ফলে আমরা চেষ্টা করবো আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে। প্রবাসীদের সবার মধ্যেই এমন মনোভাব তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্কের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এজন্য আরও কিছুটা সময় দেখতে হবে। কারণ প্রবাসীরা যদি বৈধপথে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান, তাহলে আমাদের রিজার্ভ বাড়বে, সেইসঙ্গে আমাদের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।
বিভিন্ন দেশের এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে প্রবাসীদের ভিড়
রেমিট্যান্স পাঠাতে মালয়েশিয়া,সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে বেড়েছে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভিড়। কিছুদিন আগে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার কমে গিয়েছিল। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ইতালি থেকে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। গেল বছর সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৬৬ মিলিয়ন ইউরো পাঠালেও এবার সেই রেকর্ড ভাঙতে চলেছে। ইতালিতে গেল সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার দ্বিগুণেরও বেশি। মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ইতালির প্রবাসী বাংলাদেশিরা।