জাতীয়

সরকার প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষা করবে: ড. ইউনূস

  প্রতিনিধি ২৭ আগস্ট ২০২৪ , ৩:০৫:৫৯

0Shares

শেয়ার করুন

অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সমগ্র বাংলাদেশ একটা পরিবারের মতো উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যেখানে সরকারের দায়িত্ব হলো প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা দেওয়া।’
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গতকাল সোমবার (২৬ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ কথা বলেন। জন্মাষ্টমী হলো সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন। অধ্যাপক ইউনূস হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, তিনি এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান যেখানে নির্ভয়ে সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে এবং যেখানে কোনও মন্দির পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা দেওয়া এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।’

সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে কোনও বিভেদ থাকতে পারে না। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার। অন্তর্র্বতী সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ হিন্দু নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তারা বাংলাদেশে শান্তি-সম্প্রীতি ও এর সমৃদ্ধি এবং অন্তর্র্বতী সরকারের সাফল্য কামনা করে শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছেন। হিন্দু নেতারা জানান, দেশের বন্যা পরিস্থিতির কারণে দুর্গত এলাকাগুলোতে এবার জন্মাষ্টমী উদযাপন স্থগিত করে সেখানে খাদ্য ও ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর ঐতিহাসিক ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতারা। তারা বলেন, এই বক্তব্য দেশে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে ভূমিকা করবে। নেতারা হিন্দু মন্দিরের জমিসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি-সম্পত্তি দখল হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে হিন্দু নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কাজল দেবনাথ ও মনীন্দ্র কুমার নাথ, আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনা সংঘ ইসকনের চারু চরণ ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বাসুদেব ধর ও সন্তোষ শর্মা এবং ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কর্ণধার প্রীতি চক্রবর্তী। খবর: বাসস

শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করবে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা এ দেশের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। তিনি বলেন, ‘আসুন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা গড়ে তুলি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ।’
গতকাল সোমবার (২৬ আগস্ট) ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘শুভ জন্মাষ্টমী। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আমি দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর সব ধর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমাজে মানুষের অধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণ সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। তিনি বলেন, সর্বদা মানবতা ও সত্যের পতাকা বহনকারী শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই ন্যায় প্রতিষ্ঠায় স্বমহিমায় আবির্ভূত হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শ্রীকৃষ্ণের দর্শন ও মূল্যবোধ সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সকলকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন। আবহমানকাল থেকে এ দেশের বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ১৮ কোটি মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে আমরা সরকার পরিচালনা করছি। তাই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা সবাই একই পরিবারের মানুষ- এ কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধর্মের কারণে আমরা কেউ কাউকে শত্রু মনে করি না। তিনি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধর্মকে ব্যবহার করে কিংবা অপপ্রচার করে সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা ও ভ্রাতৃত্ববোধকে যেন কেউ নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। ড. ইউনূস শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘জন্মাষ্টমী’ উৎসবের সাফল্য এবং দেশের সব নাগরিকের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।


শেয়ার করুন

0Shares

আরও খবর

Sponsered content