প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪:২৯:২৪
খেলা শুরু হতেই ইতালির জালে বল! গ্যালারিতে তখন ফ্রান্সের সমর্থকদের উল্লাস। তবে ভালো শুরুর পরই যেন খেই হারিয়ে ফেলল ফ্রান্স। আর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে উয়েফা নেশন্স লিগের নতুন আসরে শুভসূচনা করল ইতালি।শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে পিএসজির ঘরের মাঠে ‘এ’ লিগের দুই নম্বর গ্রুপের ম্যাচটি ৩-১ গোলে জিতেছে লুচিয়ানো স্পালেত্তির দল।
বাহলি বারকোলার গোলে ফ্রান্স এগিয়ে যাওয়ার পর প্রথমার্ধেই সমতা টানেন ফেদেরিকো দিমারকো। বিরতির পর ইতালির বাকি দুটি গোল করেন দাভিদে ফ্রাত্তেসি ও জিয়াকোমো রাসপাদোরি।
২০০৮ সালের পর এই প্রথম ফ্রান্সের বিপক্ষে জিতল ইতালি। মাঝে দুই দলের তিন ম্যাচের সবগুলো তারা হেরেছিল। আর ফ্রান্সের মাঠে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ইতালি জিতল ৭০ বছর পর, সবশেষ জিতেছিল ১৯৫৪ সালে, প্রীতি ম্যাচে একই ব্যবধানে।২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এই প্রথম কোনো ম্যাচে তিন গোল হজম করল ফ্রান্স। নেশন্স লিগের শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযানের শুরুটা ভীষণ বাজে হলো ২০২০-২১ আসরের চ্যাম্পিয়নদের।
পুরো ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় তারকা, রেয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপে। ম্যাচে ৫৪ শতাংশ সময় পজেশন ধরে রেখে গোলের জন্য ১২টি শট নিয়ে কেবল ৩টি লক্ষ্যে রাখতে পারে ফ্রান্স। অন্যদিকে, ইতালির ১১ শটের ৬টি লক্ষ্যে ছিল, যার তিনটি সফল।
প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রথম মিনিটে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন বারকোলা। সতীর্থের ব্যাক-পাসে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে অনেকটা আয়েশিভাবে অপেক্ষায় ছিলেন ইতালির ডিফেন্ডার জিওভান্নি দি লরেন্সো। তার সামনে থেকে ছোঁ মেরে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন বারকোলা। ডান পায়ের শটে এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি।
ফ্রান্সের ইতিহাসে এবং নেশন্স লিগে দ্রুততম গোল এটি (১৩ সেকেন্ড)। ফ্রান্সের হয়ে আগের দ্রুততম গোলের রেকর্ড ছিল বের্নাদ লাকুম্বের, ১৯৭৮ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইতালির বিপক্ষেই ম্যাচের ৩৭ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন তিনি।
নেশন্স লিগে এতদিন রেকর্ডটি ছিল সুইজারল্যান্ডের হারিস সেফেরোভিচের, ২০২২ সালে পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচের ৫৭ সেকেন্ডে গোলটি করেছিলেন তিনি।
জাতীয় দলের হয়ে ৬ ম্যাচে বারকোলার প্রথম গোল এটি। ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে সবশেষ ৪ ম্যাচে পিএসজির ২২ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের গোল হলো ৫টি।
ষষ্ঠ মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারত ইতালি। সতীর্থের হেড পাসে কাছ থেকে ডিফেন্ডার ফ্রাত্তেসির হেড ক্রসবারে লাগে। ফিরতি বলে মাতেও রেতেগির হেড উড়ে যায় ওপর দিয়ে।
পরের মিনিটে সুযোগ তৈরি করে ফ্রান্স। এমবাপের নিচু শট ঠেকান গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মা।
৩০তম মিনিটে দিমারকোর চমৎকার গোলে সমতায় ফেরে ইতালি। ডান দিক থেকে এক সতীর্থের ক্রসে বল পেয়ে বক্সের বাইরে সান্দ্রো টোনালিকে পাস দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন দিমারকো। টোনালির ফ্লিকে বল পেয়ে সরাসরি দারুণ ভলিতে ঠিকানা খুঁজে নেন ইন্টার মিলানের এই ডিফেন্ডার।
৩৯তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বারকোলার নিচু শট প্রতিপক্ষের পায়ে লেগে পোস্ট ঘেঁসে বেরিয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রাসপাদোরির শট ঠেকান ফ্রান্সের গোলরক্ষক মাইক মিয়াঁ। ৫০তম মিনিটে দারুণ আক্রমণ থেকে এগিয়ে যায় ইতালি। রেতেগির পাসে ছুটে গিয়ে বক্সে প্রথম স্পর্শে বাঁ পায়ের শটে গোলটি করেন ফ্রাত্তেসি।
৫৯তম মিনিটে মিয়াঁর নৈপুণ্যে ব্যবধান বাড়েনি। কাছ থেকে ফ্রাত্তেসির হেড ফিরিয়ে দেন এসি মিলান গোলরক্ষক। ৬৩তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ হারান দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা উসমান দেম্বেলে। অঁতোয়ান গ্রিজমানের ক্রসে বক্সে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি অরক্ষিত পিএসজি ফরোয়ার্ড।
ইতালি ৭৪তম মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে জয়ের পথে এগিয়ে যায়। সতীর্থের পাস বক্সে পান রাসপাদোরি, ফরাসি ডিফেন্ডার উইলিয়াম সালিবার বাধা এড়িয়ে ডান পায়ের শটে গোলরক্ষককে ফাঁকি দেন নাপোলির ফরোয়ার্ড রাসপাদোরি। বাকি সময়ে দুটি ‘হাফ চান্স’ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি ফ্রান্স।