ইতিহাস ঐতিহ্য

রক্ষীবাহিনীর নিষ্ঠুরতা : হুমায়ূন আহমেদের মায়ের বর্ণনা

  প্রতিনিধি ৭ অক্টোবর ২০২৪ , ৮:০৬:২১

শেয়ার করুন

একটি জাতির শুধু টিকে থাকার নয়, অগ্রগতি-সমৃদ্ধির জন্যও ঐক্য অপরিহার্য। প্রায় এক লাখ ৪৮ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল বিশ্বের মানুষ তখন নব স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটিকে স্বাগত জানিয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, এক ভাষাভাষী, একই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উত্তরাধিকার, প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণের একটি ধর্মীয় আদর্শ এবং ঐতিহ্য, অভিন্ন অভ্যাস ও আচরণসম্পন্ন এই দেশটি ঐক্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বময় একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং তার এই ঐক্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকেও ত্বরান্বিত করবে। কিন্তু কার্যত তা হয়নি, জন্মলগ্ন থেকেই প্রথম সরকারের পক্ষ থেকে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ, রাজনৈতিক হানাহানি, সন্ত্রাস, খুন, রাহাজানি আমাদের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।

১৯৭২ সালের ৮ মার্চ প্রকাশিত পত্রিকা

১৯৭০ সালের পাকিস্তানব্যাপী নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ আওয়াজ তোলে, ‘জয় বাংলা’। এই আওয়াজের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বড় একটা অংশ একমত ছিল না। সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় আওয়াজ তুলেছিলেন ‘জয় হিন্দ’। এরই অনুরূপ স্লোগান ছিল এটি। আর এই স্লোগান চালু করে ভারতের গোয়েন্দা চক্রের লোকজন। আওয়ামী লীগ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল মূল নীতির ব্যাপারে। ভারতের চক্রান্তকে অনেকেই চেয়েছিলেন গোড়া থেকেই রোধ করতে। কিন্ু্ত্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য সেটা তারা করতে পারেননি। এই বিরোধটা পরে আওয়ামী লীগে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল।

১৯৭২ সালের ৮ মার্চ প্রকাশিত পত্রিকা

 

আধিপত্যবাদী ভারত সরকার সদ্য স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে তাদের অঙ্গরাজ্য বানানোর লক্ষ্যে পুতুল সরকাররূপে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারত সরকার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্প-কলকারখানার সব যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায়। ‘সোনালি আঁশ’ নামে খ্যাত এবং দেশের প্রধান অর্থকরী কৃষি সম্পদ পাট ও জুট মিলগুলো ধ্বংস করে দেয়। সব গুদামে মজুত লাখ লাখ টন পাট ভারতে নিয়ে যায়। তারা বড় বড় ইলেকট্রনিক্স মার্কেটগুলোও লুট করে। এমনকি পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের পর তাদের অস্ত্রগুলো পর্যন্ত তারা নিয়ে যায়, যা আইনগতভাবে বাংলাদেশেরই সম্পদ বলে পরিগণিত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এহেন লুটপাট ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মহা হুঙ্কারে গর্জে ওঠেন মেজর আবদুল জলিল। প্রায় এক হাজার কোটি টাকার অস্ত্র এবং শত শত কোটি টাকার মেশিনারিজ সামগ্রী ভারতে পাচারকালে ৯ নম্বর সেক্টর থেকে তিনি ভারতীয় সৈন্যদের বাধা দেন এবং মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হন। কিন্ু্ত তার সমরাস্ত্র ও সৈন্য অপ্রতুল থাকায় তিনি তাদের রুখতে ব্যর্থ হন। ভারতীয় সৈন্যরা তাকে গ্রেফতার করে তাদের বাংলাদেশস্থ পুতুল সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। ভারতীয় সৈন্যদের সঙ্গে তার এ ধরনের প্রতিবাদ ও সাংঘর্ষিক আচরণ তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকার বরদাশত করতে পারেনি। এ সময় দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিলকে কারারুদ্ধ করে দীর্ঘ ৯ মাস জুলুম-নির্যাতন করা হয়।
শেখ মুজিব ক্ষমতা গ্রহণের পর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তার দলের এমনকি পুত্রদের লুটপাট ও সন্ত্রাস বন্ধ করার ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি নিজে সাহসী পুরুষ হলেও আত্মীয়-স্বজন, দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি তার অতিরিক্ত স্নেহ-মমতা তাকে কঠোর হতে না দেয়ায় দেশব্যাপী লুণ্ঠন, দুর্নীতি, অরাজকতা, খুন-রাহাজানি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে মানুষের মনোবল ভেঙে গিয়ে স্বাধীনতার চেতনা লোপ পেতে থাকে।
শেখ মুজিবের শাসনামলে বিরোধী ভিন্নমতাবলম্বী দমনের জন্য গঠন করা হয় রক্ষীবাহিনী। জাতীয় সংসদে ‘জাতীয় রক্ষীবাহিনী আদেশ’ সংশোধন করে তাদের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দেয়া হয়। ১৩৮০ বঙ্গাব্দের ১৯ মাঘ দৈনিক ইত্তেফাক এ সম্পর্কে সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলেন যে, ‘… স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে তত্কালীন বিশেষ অবস্থাধীনে সংবিধানের অনুপস্থিতিতে সরকার রাষ্ট্রপতির আট, নয় ও পঞ্চাশ নম্বর আদেশ নামক যে সকল আইন জারি করিয়াছিলেন সেইগুলোরই বিলোপ ও ব্যাপক রদবদলের দাবিতে জনমত আজ যখন সোচ্চার, যখন দেশের আইনমন্ত্রীও স্বীকার করেন যে, সত্যিকার আইনজ্ঞের দৃষ্টিতে এসব আদেশের কতিপয় ব্যবস্থা দুঃখজনক, তখন রক্ষীবাহিনী সংক্রান্ত আদেশটিকে কঠোরতম করা সত্যই দুর্বোধ্য। জনমনে তাই স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য, ওয়াদা ও গণতান্ত্রিক আদর্শের সহিত সঙ্গতিবিহীন এই সকল পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ কাহারা দিতেছেন? কি উদ্দেশ্যে দিতেছেন? একটার পর একটা আইনে কোর্টের এখতিয়ার সংকুচিত করিয়া রুল অব ল বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কি সম্ভব? ক্ষমতাসীন মহল অহরহই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষায় নিশ্চয়তা দিয়া থাকেন। উহা রক্ষা করিবার এই কি প্রকৃষ্ট উপায়? গণতন্ত্রের চোখে নাগরিকের লিবার্টি সবচেয়ে পবিত্র জিনিস। সেই লিবার্টি সংরক্ষণের এই কি সর্বোত্কৃষ্ট পন্থা?’
রক্ষীবাহিনী গঠনের পর থেকে তাদের ভয়ে মানুষ জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগত। রক্ষীবাহিনীর হাতে তখন ৩০ হাজারের বেশি আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিহত হন। সাংবাদিক আহমেদ মুসার ‘ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ’ বইয়ের ৫৩ নং পৃষ্ঠায় রক্ষীবাহিনীর নির্যাতনের শিকার শরীয়তপুরের অরুণা সেনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়, ‘বামপন্থী নেতা শান্তি সেনের স্ত্রী অরুণা সেনের ওপর রক্ষীবাহিনী যে অত্যাচার করেছে তা পাকিস্তান আমলে ইলামিত্রের ওপর নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ এতে অরুণা সেনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘গত ১৭ আশ্বিন রক্ষীবাহিনীর লোকরা আমাদের গ্রামের ওপর হামলা করে। ওইদিন ছিল হিন্দুদের দুর্গাপূজার দ্বিতীয় দিন। খুব ভোরেই আমাকে গ্রেফতার করে। গ্রামের অনেক যুবককে ধরে মারপিট করে। লক্ষণ নামে এক কলেজ ছাত্র এবং আমাকে তারা নড়িয়া রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় স্বামী শান্তি সেন এবং পুত্র চঞ্চল সেন কোথায়? তারা রাষ্ট্রদ্রোহী; তাদের ধরিয়ে দিন! আরও জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্ধ্যার দিকে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়। লক্ষণ সেনকে রেখে পরের দিন ছাড়ে। বাড়িতে ফিরে দেখি মারধরের ফলে সে গুরুতর অসুস্থ। চার-পাঁচদিন পর আবার তারা রাতে গ্রামের ওপর হামলা করে। অনেক বাড়ি তল্লাশি করে। অনেককে মারধর করে। কৃষ্ণ ও ফজলু নামের দু’যুবককে মারতে মারতে নিয়ে যায়। আজও তারা বাড়ি ফিরে আসেনি। আত্মীয়রা ক্যাম্পে গেলে বলে, তারা সেখানে নেই। তাদের মেরে ফেলা হয়েছে বলেই মনে হয়। এরপর থেকে রক্ষীবাহিনী মাঝে মাঝেই গ্রামে এসে যুবকদের খোঁজ করত।’
দেশের প্রতিটি অঞ্চল ও গ্রামের সরকারবিরোধী মানুষকে তখন রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কেউ গুম হয়েছেন আর ফিরে আসেননি। কাউকে প্রকাশ্যে মারা হয়েছে। রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা এসব কিছুর আইনগত বৈধতার স্বীকৃতি এবং ইনডেমনিটি পেলেন ১৯৭৪ সালের জাতীয় রক্ষীবাহিনী সংশোধনী আইনের মাধ্যমে। এ আইনের কারণে রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের শিকার কেউ আজও আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি। রক্ষীবাহিনী গঠন আইন অনুযায়ী এ বাহিনী কোনো সুনির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল না। আইনটি তৈরির সময় এ বাহিনীকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। পরে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে একদলীয় বাকশাল গঠিত হলে এবং রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি চালু হলে রক্ষীবাহিনীকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করা হয়। রক্ষীবাহিনী সবসময় সরকারপ্রধানের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থেকে কাজ করেছে।
নন্দিত কথাসাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদের পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুরের পুলিশ প্রধান (সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসার, এসডিপিও) ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ফয়জুর রহমান তার স্ত্রী আয়েশা ফয়েজ ও ছেলেমেয়েদের পিরোজপুরের সরকারি বাসা ছেড়ে নাজিরপুর থানার নিভৃত পল্লী বাবলা গ্রামে গোপন আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন। সেখানে একদিন গোপনে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন ফয়জুর রহমান। এ অবস্থায় পিরোজপুর থানার ওসি তফাজ্জাল হোসেন তাকে অভয় দিয়ে পিরোজপুর আসার জন্য চিঠি লেখেন। চিঠি মোতাবেক পিরোজপুর হাজির হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ৫ মে ফয়জুর রহমানকে বলেশ্বর নদীর তীরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
স্বামী হত্যার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়েশা ফয়েজ সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে একা ছুটে যান পিরোজপুর। ওসি তফাজ্জালসহ স্বামীর অফিসের অধস্তন কর্মকর্তা, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান খান বাহাদুর সৈয়দ মোঃ আফজাল, সবার সঙ্গে দেখা করে স্বামীর বিষয়ে সঠিক খবর জানতে চান। কিন্তু সবাই তার কাছে স্বামী ফয়জুর রহমান হত্যার কথা গোপন রাখে। স্বামীর ব্যাপারে কোনো সন্ধান না পেয়ে আয়েশা ফয়েজ ফিরে আসেন পিরোজপুর তাদের সরকারি বাসায়।
শহীদ পরিবার হিসেবে আয়েশা ফয়েজ স্বাধীনতার পর একটা বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছিলেন সরকারিভাবে। সে বাসায় ওঠার তিন দিনের মাথায় তাদের রক্ষীবাহিনী বাসা থেকে পথে নামিয়ে দেয়। সে কথা লিখেছেন তিনি তার ‘জীবন যে রকম’ বইয়ে। তার ভাষায়—
‘বাবর রোডের বাসায় ওঠার তিন দিন পর হঠাত্ একদিন রক্ষীবাহিনী এসে হাজির হলো। একজন সুবেদার মেজর জিজ্ঞাসা করল, এ বাড়ি আপনি কোথা থেকে পেলেন?
আমি বললাম সরকার আমাকে দিয়েছে। আমার স্বামী যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাই।
সুবেদার মেজর কিছু না বলে চলে গেল। আমার মনের ভেতর হঠাত্ করে একটা খটকা লেগে গেল। হঠাত্ করে রক্ষীবাহিনী আসছে কেন? ক্ষাণিকক্ষণ পর আরেকজন সুবেদার মেজর এসে হাজির। সে একা নয়, তার সঙ্গে বোঝাই এক ট্রাক রক্ষীবাহিনী। সবার হাতে অস্ত্র। সুবেদার মেজরের নাম হাফিজ। ভেতরে ঢুকে বলল, এই বাড়ি আমার। শেখ সাহেব আমাকে দিয়েছেন। আমি বললাম, সে কি করে হয়? আমার সঙ্গে বাসার অ্যালটমেন্ট রয়েছে।
সে কোনো কথা না বলে টান দিয়ে ঘরের একটা পর্দা ছিঁড়ে ফেলল। সঙ্গে আসা রক্ষীবাহিনীর সদস্যদের বলল ছেলেমেয়েদের ঘাড় ধরে বের কর। আমি এত দিনে পোড় খাওয়া পাথর হয়ে গেছি। রুখে দাঁড়িয়ে বলেছি, দেখি তোমার কত সাহস?
সুবেদার মেজর একটু থমকে গিয়ে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। দেখতে দেখতে পুরো এলাকা রক্ষীবাহিনী দিয়ে বোঝাই হয়ে গেল। বাসা চারদিকে ঘেরাও হয়ে আছে। কাউকে বাসায় ঢুকতেও দেয় না, বের হতেও দেয় না। কাজল (হুমায়ূন আহমেদ) মহসিন হলে ছিল। খবর পেয়ে এসেছে। তাকেও ঢুকতে দিল না। সারা রাত এভাবে কেটেছে। ভোর হতেই আমি বের হলাম। পুলিশের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলাম। পুলিশ বলল—আমরা গোলামির পোশাক পরে বসে আছি। রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা কি করব? বঙ্গভবন, গণভবন এমন কোনো জায়গা আমি বাকি রাখলাম না সাহায্যের জন্য। কিন্তু লাভ হলো না। আমি তুচ্ছ মানুষ। আমার জন্য কার মাথা ব্যথা?
রাতে ফিরে এসেছি। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেবে না। অনেক বলে ভেতরে ঢুকেছি। রাত আটটার দিকে রক্ষীবাহিনীর দল লাথি মেরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেল। ইকবাল (ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল) আমাকে আড়াল করে দাঁড়াল। একজন বেয়োনেট উঁচিয়ে লাফিয়ে এলো। রাইফেল তুলে ট্রিগারে হাত দিয়েছে। চিত্কার করে কিছু একটা বলছে। গুলি করে মেরে ফেলবে আমাদের? আমি ছেলেমেয়েদের হাত ধরে বের হয়ে এলাম। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাকে প্রথমবার গৃহহারা করেছিল। বাংলাদেশ সরকারের রক্ষীবাহিনী আমাকে দ্বিতীয়বার গৃহহারা করল।’
আয়েশা ফয়েজ লিখেছেন—‘পেনশনের টাকা তোলার জন্য কাগজপত্র নিয়ে আবার গেলাম। কাজলের আব্বার পরিচিত একজন এআইজি তার অধস্তন অফিসারকে ডেকে আমার সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। অফিসার বিনয়ে গলে গিয়ে বলল, কোনো চিন্তা করবেন না স্যার। সব ঠিক করে দেব।
তার সঙ্গে অফিসে গিয়েছি। সে রাগে ফেটে পড়ল। মুখ খিঁচিয়ে বলল, আপনার বেশি ক্ষমতা হয়েছে না? ভাবেন ওপরওয়ালা বললেই সব হয়ে যাবে? মনে রাখবেন টাকা অত সহজে পাওয়া যায় না। টাকা যদি চান এখানে এসে খরচপাতি করবেন।
ভদ্রলোক গজগজ করতে করতে তার এক সহকর্মীকে বললেন, এই একটা নতুন দল বের হয়েছে। শহীদ পরিবার। যেখানেই যাই সেখানেই শহীদ পরিবার। জ্বালিয়ে খাচ্ছে ওরা। এইভাবে শহীদ পরিবার হিসেবে আমার এক নতুন জীবন শুরু হলো। শহীদ পরিবারের প্রথম কাজ হচ্ছে ঘোরাঘুরি করা। আমার ঘোরাঘুরি শুরু হলো। এক অফিস থেকে আরেক অফিস। এক অফিসার থেকে আরেক অফিসার। এভাবে আস্তে আস্তে ঘোরাঘুরিতে অভিজ্ঞ হয়ে গেলাম।
ঢাকায় থাকার জায়গার খুব সমস্যা। শহীদ পরিবারকে বাড়ি দেয়া হয়েছে শুনে তার জন্য ঘোরাঘুরি শুরু করেছি। একদিন খোঁজখবর নিয়ে বাড়ি সংক্রান্ত একজন মন্ত্রী, নাম মতিউর রহমান, তার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার মতো আরও অনেকে আছেন। দীর্ঘ সময় পর মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে দেখা হলো। আমাদের দেখে একেবারে ক্ষেপে গেলেন মহোদয়। পেয়েছেন কি আপনারা? প্রত্যেক দিন সকালে এসে বসে থাকেন? সকালে ঘুম থেকে উঠেই আর কত বিধবার মুখ দেখব?
আমি লজ্জায় মরে গেলাম।’
অবশেষে এভাবে ঘুরাঘুরি করতে করতে অশেষ লজ্জা-অপমান হজম করে আয়েশা ফয়েজ শহীদ পরিবার হিসেবে একটি বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছিলেন। তার স্বামীর বন্ধু কাজী জাহেদুল ইসলাম বাড়িটি তাকে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এক অবাঙালির পরিত্যক্ত বাসা। ১৯/৭ বাবর রোড। এই বাড়ি থেকেই তিন দিনের মাথায় তাদের স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের রক্ষীবাহিনী অস্ত্রের মুখে তাড়িয়ে দেয়। ডাক্তার মনোয়ার হোসেন নামে এক প্রতিবেশী তাদের আশ্রয় দেন।
জাসদের দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় পরের দিন শহীদ পরিবারের ওপর এ নির্যাতনের একটি খবর ছাপার ব্যবস্থা করেন। পরে রক্ষীবাহিনী প্রধান নুরুজ্জামান ওপরের তলা দিলেন আয়েশা ফয়েজকে এবং নিচের তলা দিলেন রক্ষীবাহিনীর মেজর সুবেদার হাফিজকে। (সূত্র : দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৪ আগস্ট ২০১২)
মুজিব প্রতিপক্ষ নির্মূলের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাত দিয়েছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাকের উপ-সম্পাদকীয় ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ কলামে এ সম্পর্কে লেখা হয়, ‘… সাংবাদিক বন্ধু নির্মল সেনকে গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর বলিতে শুনিয়াছি, হয় এই সরকার থাকবে, না হয় আমরা থাকবো। বিশ্বাসঘাতক আমরা নই, সরকারই বিশ্বাসঘাতক। সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হইয়াছে। ওরা নাই, আমরা আছি। আমরা থাকিবও কিন্তু যাইবার আগে চারটা বছরের মধ্যে ওরা এই জাতির কি করিয়া গিয়াছে, আজ ১৬ ডিসেম্বর তার একটা সালতামামী সমীক্ষা হওয়া দরকার। বিভিন্ন একাডেমীর নিরলস প্রচেষ্টায় ইতিহাস লেখার নামে তৈলায়ন ও পৃষ্ঠকুণ্ডয়ন চার বছরে যথেষ্ট হইয়াছে। আর নয় এবার সত্যিকার একটা হিসাব-নিকাশ হউক। একটি বিখ্যাত বিদেশী পত্রিকার প্রতিনিধির সহিত এক গোপন সাক্ষাত্কারে এ দেশের জনৈক প্রবীণ বামপন্থী দলপতি দাবি করিয়াছেন যে, পঁচিশ হাজারের অধিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মীকে সেই স্বৈরাচারী শাসনামলে নিধন করা হইয়াছে। এমন কথা অধুনা আরও অনেকে বলিতেছেন, কারও কারও মতে নিধন সংখ্যাটা আরো বৃহত্। অনেকেই বলেন যে, সত্যিকার আদর্শপরায়ণ মুক্তিযোদ্ধারা—যাহারা বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই পায় নাই—স্বৈরশাসনের শেষাংশে চূড়ান্তভাবে বিভ্রান্তিমুক্ত হইয়া মেহেরপুর, বালিগঞ্জ, থিয়েটার রোড, আগরতলা, শিলং প্রভৃতি স্থানে সংগঠিত নানা কেলেঙ্কারীপূর্ণ ঘটনা ফাঁস করিতে থাকায় এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পদক্ষেপ আরম্ভ করায় তাহাদের অনেককেই রাজনৈতিক ঘাতক দল বা প্রাইভেট আর্মির শিকারে পরিণত হইতে হইয়াছে।’ (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক উপ-সম্পাদকীয়, ১ পৌষ ১৩৮২)
গ্রামে গ্রামে চলে রক্ষীবাহিনীর বর্বর নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক অভিযান। ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর চলতে থাকে অকথ্য অত্যাচার। অরুণা সেনই নয়, রাণী সিংহ ও হনুফা বেগমকে ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার রামভদ্রপুর গ্রাম থেকে রক্ষীবাহিনী ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো মামলা করে না, তাদের কোনো আদালতেও হাজির করে না। ঢাকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয় এবং পরে সুপ্রিমকোর্টে তাদের পক্ষে রিট আবেদন করার পর সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে তাদের আদালতে হাজির করা হয় এবং মামলার শুনানির সময় সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণযোগ্য অভিমত আনতে অক্ষম হওয়ায় সুাপ্রমকোর্ট অবিলম্বে তাদের তিনজনকেই বিনাশর্তে মুক্তিদানের নির্দেশ দেন। অরুণা সেন ও অন্যান্যের পক্ষে এই মামলা পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। অত্যাচারের মাত্রা যে কত ভয়াবহ ছিল তা বোঝার জন্য অরুণা সেন, রীনা সিনহা ও হনুফা বেগমের ওপর রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের বর্ণনা পাঠ করা যেতে পারে। অরুণা সেনের বিবৃতির পুরো বিবরণ ড. রেজোয়ান সিদ্দিকীর ‘কথামালার রাজনীতি’ গ্রন্থে রয়েছে, এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মামলার বর্ণনা রয়েছে মওদুদ আহমদের ‘এরা শেখ মুজিবুর রহমান’ গ্রন্থে ।
‘রক্ষীবাহিনীতে কারা ঠাঁই পাচ্ছে?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সাপ্তাহিক মুখপত্র পত্রিকায় লেখা হয়, ‘স্বাধীনতার পর দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গঠন করা হয়েছে রকমারী বাহিনী। এসব বাহিনী গঠন করে শান্তি রক্ষা কতটুকু সম্ভব হচ্ছে সে কথা জনসাধারণ ভাল করেই ওয়াকিবহাল আছেন। তবে এই রংবেরংয়ের বাহিনীর দৌরাত্ম্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়াতো দূরের কথা, বরঞ্চ অবস্থা আরও বেগতিক আকার ধারণ করেছে। প্রায়ই দেখা গেছে যে, একই ঘটনায় বিভিন্ন বাহিনীর হস্তক্ষেপের ফলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, বরঞ্চ এর ফলে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। অনেক সময় এ সকল ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পরস্পর বিরোধী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাতও হয়েছে। বাহিনীদের এহেন ‘হামবড়াই’ কাণ্ড-কারখানার জন্য সরকার দায়ী। কারণ, এসব বাহিনী গড়ে তোলার পেছনে সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং সুচিন্তিত বিচার-বিবেচনার অভাব ছিল। তাছাড়া বাহিনী গঠন করার সময় এই বাহিনীদের আওতার সীমারেখা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি, এদের তৈরি করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ভাবটা যেন তোদের ছেড়ে দিলাম, চড়ে বড়ে খা। এদের দৌরাত্ম্যে জনসাধারণের জীবন ওষ্ঠাগত, পুলিশ বাহিনী বিপর্যস্ত। কারণ পুলিশ বাহিনী আর কোথাও পাত্তা পাচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ইত্যাকার বাহিনীরা অযাচিতভাবে পুলিশের কাজে নাক গলাচ্ছে। এর পরিণতি কি তা সময়ই প্রমাণ দেবে। তবে এটা জলবত্ পরিষ্কার যে, এর ফল শুভ হবে না। সময় থাকতে সচেতন হওয়া কি সরকারের পক্ষে ভাল নয়? এ প্রসঙ্গে দেশের রক্ষীবাহিনীর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সাম্প্রতিককালে কার্ফ্যু নামে রক্ষীবাহিনীর হাতে সাধারণ মানুষের হেস্তনেস্ত হওয়ার অনেক চাঞ্চল্যকর সংবাদ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া গেছে। আইনের নামে এহেন রসিকতার অর্থ জনসাধারণের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকেছে। তারা হৃদয়ঙ্গম করেছে, বিগত ২৫ বছরের তোগলকী ভূত বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত হয়নি। যা হোক, এ গেল বাহিনীর কার্যকলাপের কথা। এছাড়াও শোনা যাচ্ছে যে, রক্ষীবাহিনীতে লোক নিয়োগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কয়েকটা বিশেষ জেলা ছাড়া অন্য এলাকার লোকদেরকে রক্ষীবাহিনীতে নেয়া হয় না। তবে কি অন্য জায়গার লোক রক্ষীবাহিনীতে জায়গা পাওয়ার উপযুক্ত নয়? আসল কারণ তা নয়। রক্ষীবাহিনীকে মূলত বিরোধীদের এক হাত দেখানোর জন্য ঠেঙ্গানিয়া বাহিনীতে (ভারতীয় সিআরপি গোত্রী) পরিণত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনীর জন্য তাই রক্ষীবাহিনীর প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-হলগুলোতে কাদেরিয়া বাহিনীর আনাগোনা এবং মুজিববাদ বিরোধীদের ঠেঙ্গানোর খায়েশ কথাই প্রমাণ করেছে যে তারা বিশুদ্ধ ‘বাদ’ প্রেমিক। রক্ষীবাহিনীতে তাই কাদেরিয়া গোষ্ঠীর এত কদর। (সূত্র : ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ, আহমেদ মুসা, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮)
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকেই দেশে অধিকার হরণের প্রক্রিয়া একটু একটু করে শুরু হতে থাকে। এই প্রক্রিয়া যে একেবারে ‘খামোখা’-ই শুরু হয়েছিল সে কথা সত্যি নয়। দেশের সংবাদপত্র এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনসভায় শাসকদের নিকট ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের দুর্নীতি ও দুঃশাসন নিয়ে এমনভাবে আলোচনা শুরু করেছিল যে, কারও ঘরের মেয়ে খুঁজে পাওয়া না গেলে বিশেষ বিশেষ যুবকদের নাম উঠে আসত। বেইলি রোড, গুলিস্তানের কোনো অফিসের সামনে দিয়ে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াত পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফুল ও ফসলের যে রাজনৈতিক লড়াই শুরু হয়েছিল, দেখা গেল, তা বর্গী দস্যুরা লুটে নিয়ে গেল। বিদেশে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা হলো একটি দুর্নীতিপরায়ণ তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের জনগণের ত্রাণ-সাহায্য বিক্রির জন্য পাওয়া গেল ভারতের পশ্চিম বাংলার ফুটপাতে।
স্বাধীনতার আগে দশ আনা সেরের চাল যখন ১২ টাকা, দু’আনার লবণ ৮০ টাকা, ছয় আনার গামছা ১০ টাকা, দশ-বারো টাকার গাড়ি ৫০-৬০ টাকা, দু’টাকার লুঙ্গির দাম বিশ টাকা এবং চার আনা সেরের ইউরিয়া ২৪ টাকা হয়ে গেল; তখন মানুষ ভাবতে শুরু করল এ কি রকম স্বাধীনতা আমরা পেলাম, এটা তো আমরা চাইনি? স্বাধীনতার চেতনার জন্য এটা ছিল বিরাট ধস।
কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই দলীয় ও ব্যক্তিগত শত্রুতার ভিত্তিতে যাকে তাকে বিশেষ করে পাইকারি হারে আলেম সমাজ ও ধার্মিক ব্যক্তিদের রাজাকার, আল বদর হিসেবে আখ্যা দান, দেশের শত্রু গণ্য করে বিনা বিচারে হাজার হাজার লোককে হত্যা, তাদের ধনসম্পত্তি দখল এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা মুজিব সরকারকে বিতর্কিত করেছিল। এর সঙ্গে যোগ হয় ‘লাল ঘোড়া দাবড়ানো’, রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের নামে নির্যাতনের স্টিমরোলার।
শুধু তাই নয়, মুক্তিযোদ্ধারা যাতে সংগঠিত হতে না পারে, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না পায়, এই ঘৃণ্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ ইত্যাদি শত শত মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারারুদ্ধ করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে ম্লান করে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতীয় পণ্যের বাজার হিসেবে সৃষ্টি করতে ভারতের মাড়োয়াড়িদের স্থান করে দেয়।
রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আওয়ামী লীগ সবসময় কৌশল অবলম্বন করেছে। চিহ্নিত ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১ সালের পর তাদের হাতের মুঠোর মধ্যে ছিল। তাদের অপরাধের বিবরণও ছিল এবং প্রমাণও। এদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হলো। সরকারিভাবে চুক্তি হলো তাদের বিচার করা হবে না। আর যারা চিহ্নিতই হলেন না, যাদের অপরাধের সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া গেল না, হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের অভিযোগে দেশের কোনো থানায় একটা মামলাও রুজু করা গেল না—৪১ বছর পর তাদের নতুন করে চিহ্নিত করে বিচার করার দাবিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন ছাড়া কিছুই বলা যায় না।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও একদলীয় বাকশাল কায়েমের ফলে মানুষের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের কল্যাণ নয় বরং লুটপাটের জন্যই তারা স্বাধীনতা এনেছে।
সূত্র:আমার দেশ( অন লাইন)

শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content