প্রতিনিধি ৮ অক্টোবর ২০২৪ , ২:৫০:২৪
শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সোমবার জেলায় সারাদিন বৃষ্টি হয়নি। এতে বন্যাকবলিত পাঁচ উপজেলার চার পাহাড়ি নদীর পানি কিছুটা কমেছে। এসব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নামতে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকার পানি। তবে এখনও পানিবন্দি ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। পানি কমায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট।
শেরপুরে এখন পর্যন্ত ঢলের পানিতে ডুবে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী উপজেলায় ঢলের পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে, দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। উজানের পানি বিভিন্ন নদ-নদী হয়ে বইছে ভাটির দিকে।
জেলার ৫ উপজেলার দেড় লাখের বেশি মানুষ জলমগ্ন আছেন। বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন অনেকে। তবে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ৫২ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ডুবে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে নেত্রকোণায়। সোমেশ্বরী নদীর পানি কমলেও, উব্দাখালী নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপরে। বেড়েছে কংশ নদীর পানিও। এতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। দুর্গাপুর, কলমাকান্দাসহ ৫ উপজেলার দেড়শতাধিক গ্রাম জলমগ্ন। এতে নেত্রকোণায় পানিবন্দি হয়ে আছে লক্ষাধিক মানুষ। পানির তোড়ে ভেসে গেছে ফসলের মাঠ-মাছের ঘের।
ময়মনসিংহে পানিবন্দি ৩৩ হাজার পরিবার
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় এখনও ৩৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। খাবার সংকটে থাকা পরিবারগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। নতুন করে ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর, ছনধরা ও সদর ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
বন্যায় মৎস্য খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, জেলায় ভেসে গেছে ৫ হাজার ৬২৪ লাখ টাকার মাছ।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, তিনটি উপজেলার মধ্যে ধোবাউড়া উপজেলায় ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। হালুয়াঘাটে তলিয়ে গেছে ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ধান ও ৭৫ হেক্টর সবজি। ফুলপুরে ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর ধান ও ৬২ হেক্টর সবজি ডুবে গেছে।
নেত্রকোনার পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ
নেত্রকোনার চারটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সোমেশ্বরী, উব্দাখালী, কংস ও ধনু নদীর পানি বড়েছে। তবে সোমবার বৃষ্টি না হওয়ায় ওইসব নদনদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, জেলায় ১৭ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান তলিয়ে গেছে। দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১১৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নকাই ঝুরার পানি বড়েছে। এতে তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়েছে পাথরের চরের ১৫টি পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি। ভারী বর্ষণ হলে পুরো গ্রাম বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার জিঞ্জিরাম, কালোর নদী ও ধরনী নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ২৪ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে ১ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমির ফসল।