বিএনপি

ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

  প্রতিনিধি ৭ নভেম্বর ২০২৪ , ৮:৫১:১৮

শেয়ার করুন

আজ ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব ঘটেছিল। পাল্টে গিয়েছিল দেশের রাজনীতির গতিধারা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। তবে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীতে একটি অভ্যুত্থানে গৃহবন্দি হন জিয়া। এরপর ৭ আগস্ট পাল্টা অভ্যুত্থানে মুক্ত হয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তিনি। চালু করেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা। ফলে স্বস্তি ফিরে আসে জনগণের মনে। তারপর থেকেই ৭ নভেম্বর পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে। বিএনপি সরকারের আমলে এ দিনটিতে ছিল সরকারি ছুটি।

গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সময় দিনটি উদযাপন করতে পারেনি বিএনপি। এবার দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

দিবসটি উপলক্ষে ৬ নভেম্বর রাজধানীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। শুক্রবার রাজধানীতে ইতিহাসে স্মরণকালের সেরা র‌্যালি করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭৫ সাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাবহুল একটি বছব।মাত্র ৪ রছর আগে স্বাধীন হওয়া সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মিশ্র জগাখিঁচুড়ী শাসন ব্যাবস্হা সম্পন্ন এই বাংলাদেশ ‘৭৫ এর শুরুতেই পরিণত হয় একদলীয় ও এক পারিবারিক নেতৃত্বের বাংলাদেশে।
তৎকালীন শাসক শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ১৫ মিনিটের এক সংক্ষিপ্ত সংসদ অধিবেশনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সহ সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি মাত্র দল বাকশাল গঠণ করেন এবং সেই একক দলের একক নেতা হিসাবে তিনি নিজে এক অসীম ক্ষমতাধর রাস্ট্রনায়ক হিসাবে আবিভূর্ত হন।
রাস্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্হাকে বাধ্য করা হয় বাকশালের অধিনস্হ করার জন্য। কোন ক্ষেত্রেই বাকশাল বিরোধী কার্য বা মতামত দেয়ার কোন সুযোগের অবকাশ অবশিষ্ট ছিলোনা। দেশের সকল পত্রিকা বাতিল করা হয়। মাত্র ৪টি সরকারী পত্রিকা ছিলো মানুষের মতামত প্রকাশের অবলম্বন, সেটিও সরকারের অনুমতি স্বাপেক্ষে।
মাত্র ৭ মাস মেয়াদী ভয়াবহ বাকশালী শাসনের অবসান ঘটে ১৪ই আগষ্ট দিবাগত রাতে অর্থ্যাৎ ১৫আগস্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয় বিদেশে অবস্হান করায় প্রানে বেঁচে যান। হত্যাকান্ডের অগ্রবর্তী ভূমিকায় ছিলো কতিপয় উশৃঙ্খল সেনা সদস্য।
১৫ ই অাগস্ট দিনের বেলায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সহচর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সহযোগীরা দ্বিতীয় দফা বাকশাল সরকার গঠন করে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে চলতে থাকে অস্হিরতা। একদিকে কর্নেল(অবঃ) তাহেরের প্ররোচনায় জাসদ সমর্থিত গ্রুপ, আরেকদিকে ভারতের নির্দেশনায় খালেদ মোশাররফ গ্রুপ এবং মাঝখানে দেশপ্রেমিক সেনারা,যারা ছিলো বৃহদাংশ ।
এই দেশপ্রেমিক বৃহদাংশ সেনাদলের সাথেই ছিলেন জিযাউর রহমান । ৩রা নভেম্বর খালেদ মোশাররফ অভুথ্যান ঘটান। জিযাউর রহমানকে গৃহবন্দী করেন।মুশতাক কে অপসারন করেন । বিচারপতি সায়েম কে রাস্ট্রপতি পদে নিযোগ দিযে নিজেই নিজেকে পদোন্নতি দিযে সামরিক প্রধান হিসাবে সামরিক আইন জারী করেন।
কর্নেল তাহের গং পাল্টা ক্যুর প্রস্তুতি নেয়।
৩রা নভেম্বর থেকে ৭ই নভেম্বর বহু অনিশ্চিত নাটকীয়তার পর তাহের গং ও খালেদ গং এর সকল ষড়যন্ত্র ব্যার্থ করে দিয়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সাধারণ জনতার স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থনের মধ্য দিয়ে মুক্ত করে আনে সকলের প্রিয় গৃহবন্দী সেনা প্রধান জিযাউর রহমানকে।
পরাস্ত হয় বিদেশীবাদ।
পরাস্ত হয় আগ্রাসনবাদ।
বিজয়ী হয় দেশপ্রেমিকেরা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সৃষ্টি হয় ঐতিহাসিক সিপাহী জনতার বিপ্লব ও সংহতি।
২৬ শে মার্চে স্বাধীনতা ঘোষনাকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ খুঁজে পায় দ্বিতীয়বারের মতন মুক্তির পথ। শুরু হয় দেশবাসীর মৌলিক অধিকার ফিরে পাওযার সূচনা।
সূচনা হয় বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজ।
সূচনা হয় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আলোকে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতির গৌরবান্বিত পথচলার নতুন সংগ্রাম।
৭ই নভেম্বর এর এই বিপ্লব ছিল জাতীর জন্য অপরিহার্য ঘটনা।
কেন অপরিহার্য ছিলো তা বুঝতে চাইলে পিছনে ফিরে যেতে হবে। বেশ কিছু ঘটনাকে ধারাবাহিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।
বিশেষ ভাবে বিশ্লেষন করতে হবেঃ
★ ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের ভাষন।
★ ২৫শে মার্চ পর্যন্ত কালক্ষেপন ও বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার।
★ ২৬ ও ২৭শে মার্চের মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা।
★ বিলম্বিত মুজিব নগর সরকার গঠণ ।
★ অক্টোবরে ভারতীয় বাহিনীর সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন।
★ ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে জেনারেল ওসমানীর অনুপস্হিতি।
★ ৭৩ এর নির্বাচন।
★ গণবাহিনীর উত্থান।
★ রক্ষীবাহিনীর গঠন।
★ ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ।
★ বাকশাল গঠন।
★ ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড।
★ মোশতাক সরকার।
★ জাসদেের তৎপরতা ।
★ খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান।
পরবর্তীতে এসব পয়েন্ট সমযের সাথে বিশ্লেষনযোগ্য।
……………………………………………………………………..
বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে ৭ই নভেম্বর কেনো অবধারিত ও অপরিহার্য ছিলো, এই বিষষয়টি বুঝার জন্য বেশ কিছু সুনির্দ্দিষ্ট বিষয়েে বিশ্লেষন অত্যন্ত জরুরী, যা প্রথম পর্বের শেষাংশে উল্লেখিত আছে। এর মধ্যে প্রথম তিনটি বিষয় হলো-
★ রেসকোর্সে বঙ্গন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন।
★ ২৫শে মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানের সাথে আলোচনার জন্য কাল ক্ষেপন ও ২৫শের রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার।
★ ২৬ ও ২৭ শে মার্চ মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা।
এই বিষয় তিনটিতে আলোক পাতের আগে এই সংক্রান্ত একটি উদ্ধৃতি পাঠকদেরকে পুণরায় পড়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এই অংশটুকুর সূত্র ঃ মূলধারা ৭১ ; মইনুল ইসলাম।
ইন্দিরা গান্ধির
জবানীতে স্বাধীনতার ঘোষণাঃ
– যুদ্ধ শুরুর পরে তাজউদ্দিন আহমদ পালিয়ে ভারতে গিয়ে ৩ এপ্রিল ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করেন। এ সময় তাজউদ্দিন চিন্তিত ছিলেন, তার অবস্থান কি হবে এবং দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে কি জবাব দিবেন।
তার ভাবনা সম্পর্কে বিশেষ সহকারী মঈদুল হাসান জানিয়েছেন এভাবে, “তাজউদ্দিনের মনে কোন সন্দেহই ছিল না যে, একটি স্বাধীন সরকার গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার পক্ষে সেই সরকারের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত হওয়ার আগে, ভারত তথা কোন বিদেশী সরকারের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট সাহায্য ও সহযোগিতা আশা করা নিরর্থক।
কাজেই, সামরিক বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসাবে শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে যদি সরকার গঠন করে থাকেন, তবে সেই সরকারের নেতৃস্হানীয় সদস্য হিসাবে তাজউদ্দিনের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সাহায্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে দিল্লীতে আসা এবং সাহায্য সংগ্রহের চেষ্টা করা অপেক্ষাকৃত যুক্তিসঙ্গত ও সহজসাধ্য হবে বলে তাজউদ্দিন মনে করেন।
অন্ততপক্ষে ভারত সরকারের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা একটি অনিবর্তনীয় বিষয় হিসাবেই গণ্য হবে বলে তাঁর ধারণা জন্মায়।” অর্থাৎ তাজউদ্দিন পরিস্কার করেই জানেন, আটকের আগে মুজিব কেনো নির্দেশনা দিয়ে যান নি, তদুপরি ভারতের সাহায্য সমর্থন লাভের প্রয়োজনে স্বাধীনতার কথা এবং একটি সরকার গঠনের কথা তিনি জানাবেন।
তাজউদ্দিনের এ বানানো গল্প যে ভারত সরকার বিশ্বাস করেনি, তা পরিস্কার হয় ইন্দিরা গান্ধীর ব্ক্তব্যে। মুজিবের পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন রাজধানী সফরকালে ৬ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় বলেন,
There is no other crime which these people have committed because the cry for Independence arose after Sheikh Mujib was arrested and not before. He himself, so far as I know, has not asked for Independence, even now But after he was arrested, after there was this tremendous massacre, it was only perhaps understandable that the rest of the people said, Well, after this how can we live together? We have to separate” (Ref: Bangladesh Documents Vol-II, Page-275, Ministry of External Affairs, Government of India-1972)।
অর্থাৎ তার জানামতে, শেখ মুজিব আটকের আগে বা ঐ সময় অবধি নিজে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন নি এমনকি স্বাধীনতা চান নি।
৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণা নয়।
কেউ কেউ দাবী করে থাকেন, ৭ মার্চের ভাষণেই শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এটা ঠিক ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে তিনি বলেছেন, “এবারের সংগ্রাম আমার মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।” কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পরে ডেভিড ফ্রষ্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুজিব এ দাবীকে নাকচ করে বলেছেন, ৭ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি। ঐ ভাষণের শেষে তিনি বলেছিলেন, জয় বাংলা, জিয়ে পাকিস্তান। ”জয় পাকিস্তান” বলে তিনি আলোচনার পথ খোলা রেখেছিলেন। সে আলোচনাই চলে ইয়াহিয়ার সাথে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। এমনকি, সকলের অনুরোধ সত্ত্বেও আলোচনার দুয়ার ও সমঝোতার পথ খোলা রাখার জন্যেই তিনি সেই বিভীষিকাময় রাতে নিজের বাসভবন ছেড়ে কোথাও যাননি।
২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনীর হাতে আটক হবার পূর্বে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছেন, এমন প্রচারণার পক্ষে কোনো চাক্ষুষ বা প্রত্যক্ষ কেনো প্রমান বা সাক্ষ্য নেই। আটক হওয়া অবধি মুজিবের সাথে ছিলেন তার পত্নী ফজিলাতুন্নেসা। ১৯৭৩ সালে বেগম মুজিব এক সাক্ষাৎকারে সে দিনের ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বলেন, “…রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে তারা (পাক সেনারা) গুলি ছুড়তে ছুড়তে উপরে এলো।…তারপর মাথাটা নিচু রেখে নেমে গেলেন তিনি নিচের তলায়। মাত্র কয়েক মুহূর্ত। আবার উঠে এলেন উপরে। মেঝো ছেলে জামাল এগিয়ে দিল তার হাতঘড়ি ও মানিব্যাগ। পাইপ আর তামাক হাতে নিয়েই বেরিয়ে গেলেন তিনি ওদের সাথে” (দৈনিক বাংলা, ২৬ মার্চ, ১৯৭২)।
এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের কোথাও বেগম মুজিব একটিবারও বলেননি যে, যাওয়ার আগে কোনো এক ফাঁকে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এমনকি আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ যুদ্ধ চলাকালে বা পরবর্তীকালে কখনই জানতেন না যে, শেখ মুজিব নিজে কখনো বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে।
তাজউদ্দীনের ভাষ্যঃ
১৯৭২ সালের ৮ই এপ্রিল আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশন বসে। ঐ অধিবেশনে সাধারন সম্পাদকের রিপোর্টে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে তাজউদ্দিন বলেন,”আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে চট্টগ্রামে সংগ্রামেরত মেজর জিয়াউর রহমান বেতার মারফত বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা প্রচার করেন এবং বাংলাদেশে গণহত্যা রোধ করতে সারা পৃথিবীর সাহায্য কামনা করেন” (সূত্রঃ দৈনিক বাংলা, ৯ এপ্রিল ১৯৭২)।
এর ঠিক এক বছর আগে ১১ ই এপ্রিল ১৯৭১ প্রবাসী সরকার গঠনের প্রাক্কালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ কিভাবে চলছে সে সম্পর্কে স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত এক ভাষণে তাজউদ্দিন আহমদ জাতিকে অবহিত করেন,
“The brilliant success of our fighting forces and the daily additions to their strength in manpower and captured weapons has enabled the Government of the People’s Republic of Bangla Desh, first announced through major Zia Rahman, to set up a full-fledged operational base from which it is administering the liberated areas.” (Ref: Bangladesh Document vol-I, Indian Government, page 284).
তাজউদ্দিনের কোনো বক্তব্যেই শেখ মুজিব কতৃক স্বাধীনতা ঘোষণার কেনো বর্ণনা নাই। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সেখান থেকে সরকার ও পুর্নাঙ্গ একটি অপারেশনাল বেস পরিচালিত হবার কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে স্বীকার করেছেন।
১৯৭২ সালে পাকিস্তানী নাগরিক হয়েও মুজিব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট।
স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিব ফিরেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী। যুদ্ধ চলাকালে তিনি বন্দী ছিলেন পাকিস্তানের ফ্রন্টইয়ার প্রদেশের মিয়াওয়ালি জেলে। একই কারাগারে বন্দী ছিলেন ডঃ কামাল হোসেন। কারাগারে প্রায়শই তাদের দেখা সাক্ষাৎ ঘটতো।
ডঃ কামাল হোসেন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন,দেশে ফেরার জন্য মুজিব ও কামাল হেসেন পাকিস্তানী পাসপোর্ট তৈরী করিয়েছিলেন ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে (সূত্রঃ সাপ্তাহিক, ২৮ অক্টোবর ২০১০)। ওই পাসপোর্ট নিয়েই পাকিস্তানী নাগরিক হিসাবে শেখ মুজিব বাংলাদেশে আসেন ১০ জানুয়ারী ১৯৭২।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে-স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হয়েও মুজিব পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসলেন কোন্ বিবেচনায়? বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করা অসম্ভব হলে নিদেনপক্ষে জাতিসংঘের ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাওয়া অসম্ভব ছিলো না। পাকিস্তানী বিমান ভারতের আকাশ পার হতে পারবে না, এমন খবর জেনে মুজিব যেখানে জাতিসংঘের বিমানে আসার কথা চিন্তা করতে পারেন, সেখানে পাকিস্তানের পাসপোর্ট ব্যতিরেকে ভিন্ন ব্যবস্থায় ঢাকা আসা বিবেচনা করাই মুজিবের মত নেতার পক্ষে সঙ্গত ছিলো। আটকের আগে যদি শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েই থাকেন, তাহলে একটি স্বাধীন দেশের শীর্ষ নেতা হয়ে তিনি কি শত্রুরাষ্ট্রের পাসপোর্ট নিতে পারেন?
এখানেই বড় বিস্ময়!
বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা জানার পরে মুক্ত হয়ে তিনি প্রথমেই ঢাকায় কথা বলবেন- দলীয় সাধারন সম্পাদকের সাথে, তারপরে করণীয় ঠিক করবেন। তা না করে তিনি পাকিস্তানের নাগরিক হিসাবে লন্ডন-দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারী ঢাকায় এলেন। এসেই তিনি হয়ে গেলেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট।
তখন তিনি কি পাকিস্তানের নাগরিকত্ব ছেড়েছিলেন? নাকি বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য পোষণ করেছিলেন? করে থাকলে, কবে?
প্রশ্ন উঠে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেয়ে কি মুজিবের কাছে পাকিস্তানের পাসপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ন ছিলো? এ প্রশ্নের জবাব মেলে এ কে ব্রোহীর কাছে, যিনি ছিলেন ১৯৭১ সালে বিচারকালে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ মুজিবের আইনজীবি। ব্রোহী তার জীবন সায়াহ্নে ১৯৮৭ সালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় লন্ডনের ইমপ্যাক্ট ইন্টারন্যশনাল পত্রিকার সম্পাদক মি. ফারুককে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে দু’টি সত্য (facts) প্রকাশ করেছেন।
তা হলোঃ
– যুদ্ধ চলাকালে ১) মুজিব অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাস করতেন এবং কখনই পাকিস্তান ভাঙ্গার মত কোনো কাজ করেন নি,
২) পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রেডিও টিভিতে নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য দিতে ইয়াহিয়াকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুজিব।
(সূত্র:Impact International, 25th September, 1987, Page.19).

শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content