প্রতিনিধি ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৪:৫২:৩৫
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুন ও জুলুমের কারণে দেশের মানুষ দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করেছে। আর আওয়ামী লীগকে প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিয়েছে ভারত। তাই আওয়ামী লীগের অপরাধসমূহের বিচার নিশ্চিত না করে নির্বাচন দিলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ব্যাহত হবে।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) জাতীয় মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদী জুলুমের ভুক্তভোগী গণজমায়েত’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ গণজমায়েতের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মুখ বিকৃত হয়ে যাওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ, গুম-খুনের শিকার কয়েকজনের স্বজন বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া আন্দোলনে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বাবা-মায়ের প্রতি শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের লেখা চিঠি পড়ে শোনান তার বাবা পলাশ।
বক্তাদের আলোচনায় পিলখানা হত্যাকাণ্ড, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেওয়া, বিভিন্ন সময় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম, জুলাই গণহত্যা, শাপলা চত্বর গণহত্যা, ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যা, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, বাংলাদেশের সীমান্ত হত্যা, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীদের বিচারসহ একাধিক বিষয় উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে ২২ লাখ মানুষের ওপর মিথ্যা মামলা হয়েছে। অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার এলেও যারা গুম করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। সরকারের কাছে দাবি থাকবে, এই গুমে জড়িতদের যেন বিচারের আওতায় আনা হয়। একই সঙ্গে যেসব পরিবার দীর্ঘদিন যন্ত্রণা ভোগ করছে, তাদের যেন যথাযথ সহযোগিতা করা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কত শত গুম-খুনের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা। হেফাজতের হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৪ সালে সাজানো মামলায় ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে খুন করা হয়েছে। এর বিচার না হলে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ ব্যর্থ হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে একটি জাতীয় ঐক্য পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিদায় দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের না সরিয়ে নির্বাচন দিলে তা নিরপেক্ষ হবে না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, বিগত ১৫ বছরই নয়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালেও তারা ফ্যাসিবাদী ছিল। এমনকি ১৯৯৬ সালে যখন আমি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তখনো তাদের ভয়ংকর রূপ দেখেছিলাম। পাশের দেশ তাদের মদদ না দিলে তারা কখনো নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেত না। তাদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। তারা এখনো তৎপর। তাদের কাছে লুটের অর্থ আছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হলে আমাদের জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
গুম কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, গত ১৫ বছরে অনেকেই কথা বলতে পারেনি। বিরোধী দলের নেতা, হেফাজত ইসলামীর নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল। আমরা গুম কমিশনের পক্ষ থেকে যত কাজ করছি, ততই ভয়াবহ তথ্য পাচ্ছি। আমরা এমন গোপন কারাগারের সন্ধান পেয়েছি, যেখানে কয়েদিরা দিনের হিসাব জানতেন না। তারা আদিম মানুষের মতো দেয়ালে আঁচড় দিয়ে দিন গুনেছেন। কেউ কেউ দেয়ালে লিখে রেখেছেন ‘আমি দেশকে ভালোবাসি, আমি পরিবারকে ভালোবাসি’। আমরা শীঘ্রই এসব তথ্য উপস্থাপন করব।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গুম পৃথিবীর সর্বনিকৃষ্ট অপরাধ। কারণ গুমের পর তার পরিবার আর তাকে পায় না। ন্যায়বিচার হবে নতুন বাংলাদেশের যাত্রার প্রধান ভিত্তি। আর কোনো ফ্যাসিবাদ যেন কায়েম না হয়। জনআকাঙ্ক্ষা যেন বেহাত না হয়। সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। বাংলাদেশের সীমান্তে মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন হয়। স্বর্ণা দাশ, ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হুমা খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এ বি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং গুম-খুনের শিকার কয়েকজনের স্বজন।