সারাদেশ

খোঁয়াড় এক সময়ের আতঙ্কের নাম নানান কারণে খোঁয়াড় হারিয়ে যেতে বসেছে

  প্রতিনিধি ২৮ এপ্রিল ২০২৫ , ৯:১৮:৫৩

শেয়ার করুন

◻️ জসিম উদ্দীন মাহমুদ তালুকদার, চট্টগ্রাম

খোঁয়াড় হচ্ছে গবাদিপশু আটক রাখার গারদ।
বোধহীন প্রাণীকে মানুষের বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি করা বর্তমান প্রজন্মের কাছে অমানবিক মনে হবে। অথচ কাগজে-কলমে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে খোঁয়ার থাকার বিষয়টি বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। কিন্তু ঔপনিবেশিক আমলের এই খোঁয়াড় ব্যবস্থার উদ্ভব কীভাবে? বাংলাদেশে কি এখনো খোঁয়াড়ের অস্তিত্ব আছে? কীভাবে চলছে এসব খোঁয়াড়? সেগুলো চালাচ্ছেই বা কারা। গৃহস্থ যারা গরু-ছাগল পালতেন তাদের কাছে খোঁয়াড় এক সময় আতঙ্কের নাম ছিল।
বর্তমান আধুনিক যুগের তরুণেরা এখনো জানেনা
খোঁয়াড় আসলে কী। এ যুগে কয়জনই বা খোঁয়াড়ের কথা জানেন?
শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ ছোটগল্পে যেভাবে উঠে আসে খোঁয়াড়ের কথা-“চিন্তিত মুখে দাওয়ায় বসে আছে গফুর। মহেশের খোঁজ নেই। সারাদিন খোঁজার পর বাড়ি ফিরে পাশের বাড়ী আমিনা জানায় মহেশকে দরিয়াপুরের খোঁয়াড়ে দেওয়া হয়েছে।

এক সময় মানুষ নিজেদের গবাদি পশু রাস্তা কিংবা খোলা মাঠে ছেড়ে দিত। ওই পশু রাস্তার পাশের জমিতে ঢুকে ফসল খেয়ে ফেলত। তখন ক্ষতিগ্রস্ত মালিক ওই গরু অথবা ছাগলকে ধরে খোঁয়াড়ে দিত। উপনিবেশবাদ কেবল মানুষ নয়, গৃহপালিত প্রাণীদেরও জিম্মি করেছিল। সাধারণত গবাদিপশু ফসলের ক্ষতি করলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ওই পশুকে খোঁয়াড়ে দেন। এক্ষেত্রে যতদিন পশুর মালিক ফসলের ক্ষতিপূরণ না দিবে ততদিন পশুটিকে খোঁয়াড়ে আটকে রাখা হতো।

নির্দিষ্ট অংকের জরিমানা দিয়ে খোঁয়াড় থেকে গরু-ছাগল ফিরিয়ে নিতেন ওই গবাদি পশুর মালিক। এক সময় খোঁয়াড় গ্রাম-গঞ্জ হাট-বাজারের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেত।

সাধারণ গৃহস্থ যারা গরু-ছাগল পালতেন তাদের কাছে খোঁয়াড় আতঙ্কের নাম ছিল। কিন্তু নানান কারণে খোঁয়াড় নামক শব্দটি হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের চলমান জীবন থেকে।বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে এক সময় একাধিক খোঁয়াড় ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে কাগজে কলমে খোঁয়াড় ইজারা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এখন খোঁয়াড় ইজারা নিতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেন না।

১৯ শতকের শেষ দিকে ব্রিটিশ সরকার প্রথম গৃহপালিত প্রাণীর ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। ১৮৭১ সালে জারি হয় গবাদিপশু অনধিকার প্রবেশ আইন।

বলা বাহুল্য এসব খোঁয়াড় থেকে সরকারের প্রচুর আয় হতো। সরকার নিলাম ডেকে খোঁয়াড়া ইজারা দিত। আর এখানেই যত অনিষ্টের শুরু। যে সবচেয়ে বেশি দাম হাঁকতেন, তাকেই ইজারা দেওয়া হতো। ইজারাদারদের জন্য খোঁয়াড় এক ধরনের বাণিজ্যে পরিণত হয়। দায়িত্ব পালনের চেয়ে ইজারার টাকা উসুল করে লাভ করাই হয়ে ওঠে মূল উদ্দেশ্য।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content