সারাদেশ

চট্টগ্রামের খোলা নালা-ড্রেন এখন মৃত্যুফাঁদ, বর্জ্য নিষ্কাশন জনগণের সচেতনতার মাত্র খুবই নিম্ন

  প্রতিনিধি ২১ এপ্রিল ২০২৫ , ১:০৯:৪৯

শেয়ার করুন

◻️ জসিম তালুকদার, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

দখল-দূষণে বিপন্ন চট্টগ্রাম অরক্ষিত, শতাধিক নদী ও খাল থাকলেও কমে দাঁড়িছে ৩০ টিতে, ১ হাজার ৬০০ কি.মি ড্রেন সম্পূর্ণ পরিস্কার করা প্রয়োজন

আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম নগরে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। এমনকি বর্জ্য নিষ্কাশন সম্পর্কে জনগণের সচেতনতার মাত্রাও খুবই নিম্ন। জনগণ সাধারণত ড্রেন, নালা-খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করে। গৃহস্থালির বর্জ্য থেকে কোনো বর্জ্য নেই, যা এই নালা-খালে ফেলা হয়না। এই বর্জ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে পানিনিষ্কাশনের বড় বাধা। যেখানে-সেখানে বেপরোয়া পাহাড় ধ্বংসের কারণে পাহাড় ক্ষয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। বৃষ্টির পানি বা অন্য কোনো পানির সঙ্গে ক্ষয়ের বালু ড্রেন-খালে এসে ভরাট করে ফেলে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।

সিডিএর ১৯৯৫ সালের ‘স্টর্মওয়াটার ড্রেইনেজ অ্যান্ড ফ্লাড কন্ট্রোল মাস্টারপ্ল্যানে’উপরোক্ত ত্রুটিগুলো ধরে ধরে চিহ্নিত করে তার সমাধানও উল্লেখ করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। চকিসের এক কর্মকর্তা নাম না বলার শর্তে বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগের সময় চকিসের তত্ত্বাবধানে থাকা ১ হাজার ৬০০ কি.মি ড্রেন সম্পূর্ণ পরিস্কার ও জলাধার ও ড্রেনেজ এলাকা সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে কার্যকর উদ্যোগ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ছিল খুব ধীরগতিতে।

চট্টগ্রাম চকবাজার কাপাসগোলা ব্যবসায়ী মঞ্জুর আলম বলেন,দীর্ঘ ৮০ বছর পর গতবছর চট্টগ্রামে স্মরণকালের বন্যা পরিস্থিতি কেউ চাক্ষুষ করেনি। প্রাথমিক ভাবে ১৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বর্ষার আগে এই খালগুলো সংস্কার ও রক্ষা করা না হলে প্রতিবছরের মতো এ বছরও বর্ষার সময় জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হবে এবং লোকজনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

সর্বশেষ নালায় পড়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে, গত শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে চট্টগ্রাম চকবাজার কাপাসগোলায় একটি হোটেলের পাশের নালায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ মা ও ছয় মাসের শিশু পড়ে যায়। মা উদ্ধার হলেও শিশুটি পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। তলিয়ে যাওয়া শিশুটি (১৯ এপ্রিল) সকালে, ১৩ ঘন্টা পর চাক্তাই খালে ভে’সে উঠেছে দেখে ২ যুবক উদ্ধার করে।

চট্টগ্রাম চকিসের দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, উল্লেখযোগ্য, চট্টগ্রামে এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ২০২২ সালে ষোলশহরে শিশু কামাল নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়, তিন দিন পর তার মরদেহ মুরাদপুরে পাওয়া যায়।

২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট আগ্রাবাদে ১৮ মাসের শিশু ইয়াছিন আরাফাত নালায় পড়ে ১৭ ঘণ্টা পর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

২০২৪ সালের জুনে গোসাইল ডাঙ্গায় সাত বছরের শিশু সাইদুল ইসলাম নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়,পরদিন তার মরদেহ উদ্ধার হয় নাছির খাল থেকে।”

চকবাজারের স্হানিয় বাসিন্দা ডা. কায়সার কামাল বলেন, চট্টগ্রামে খোলা নালা-ড্রেন এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। একের পর এক প্রাণহানির পরও বিগত ১৬ বছর সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। প্রতিবারই কয়েকদিন আলোচনা হতো, তারপর সবকিছু আবার থেমে যেতো। নালাগুলো খোলাই পড়ে থাকে। বৃষ্টি হলেই সেগুলোতে পানি উঠে পথচারীদের জন্য ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়। বিগত সরকারের সিটি কর্পোরেশন বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন করতে পারেনি। কিন্তু নদী ও খাল পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের উদাসীনতা ছিল। বিগত সরকারের অবৈধ দখলকারীরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে তাদের দখল বাণিজ্যও চালিয়ে গেছে।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content