সারাদেশ

সুহাস চাকমা ফাঁস করলেন সন্তু লারমার পারিবারিক সম্পর্ক

  প্রতিনিধি ২০ মে ২০২৫ , ১১:৩৫:১১

শেয়ার করুন

◻️ জসিম তালুকদার, চট্টগ্রাম

জেএসএস প্রধান সন্তু লারমার পরিবারে নৈতিক সংকট, নারী অধিকার ও রাজনৈতিক দ্বিচারিতা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন সুহাস চাকমা।

চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক্টসের রাজনীতি ও পারিবারিক ক্ষমতাকেন্দ্রিকতার এক জটিল চিত্র উঠে এসেছে ভারতের মানবাধিকারকর্মী বলে পরিচিত সুহাস চাকমার সাম্প্রতিক অভিযোগে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রধান সন্তু লারমার প্রাক্তন জামাতা প্রীতিবিন্দু চাকমাকে ঘিরে সুহাসের এই অভিযোগ নতুন করে আলোচনায় এনেছে জেএসএস পরিবারের নৈতিকতা, অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক এবং নারী প্রশ্নে তাদের অবস্থান।

প্রীতিবিন্দু চাকমা ছিলেন সন্তু লারমার ছোট মেয়ে জুলিয়ানা লারমার স্বামী। তিনি জেএসএস’র মুখপত্র ‘Hill Voice’–এর প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তবে পারিবারিক সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর জুলিয়ানা লারমা আরেক ভারতীয় চাকমা, মিল্টন চাকমাকে বিয়ে করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রীতিবিন্দু চাকমা কানাডায় পাড়ি জমান এবং সেখানে পুনর্বিবাহের চেষ্টা চালান, কিন্তু সাবেক শ্বশুর সন্তু লারমার হস্তক্ষেপে সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
সুপ্রিম কন্ট্রোল বজায় রাখতে সন্তু লারমা যেমন নিজের পরিবারের ওপর কঠোর প্রভাব বজায় রেখেছেন, তেমনি তার সাবেক জামাতার জীবনযাপনেও হস্তক্ষেপের অভিযোগ এসেছে। সুহাস চাকমার দাবি, সন্তুর আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল থাকার কারণে প্রীতিবিন্দু দ্বিতীয়বার বিয়ের অধিকার থেকেও বঞ্চিত হন।

সম্প্রতি ফেসবুক পোস্টে সুহাস চাকমা জানিয়েছেন, প্রীতিবিন্দু চাকমা একসময় তার বাসায় অবস্থানকালে সাবেক স্ত্রী জুলিয়ানার গোপন এবং আপত্তিকর ছবি শেয়ার করতে চেয়েছিলেন। এমনকি স্ত্রী ও মিল্টনের সম্পর্ক অনুসন্ধানে প্রাইভেট ডিটেকটিভ ভাড়া করার অনুরোধও করেন তিনি। সুহাস লিখেছেন, তুমি তোমার স্ত্রীর স্পষ্ট ছবি আমাকে দেখাতে চেয়েছিলে, আমি তা দেখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। তখনই আমি তোমার প্রতি সমস্ত শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলি।
তিনি আরও বলেন, তুমি যদি নারীর প্রতি সম্মান রাখো, তাহলে সেটা নিজের ঘর থেকে শুরু করো। স্ত্রীর গোপনীয়তা ভঙ্গ করতে চাওয়া লোক নারী-অধিকার নিয়ে কথা বললে সেটা ভণ্ডামি ছাড়া কিছু না।
সন্তু লারমার প্রাক্তন জামাতা প্রীতিবিন্দু চাকমা, সুহাস চাকমার ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া।

এই বিতর্কে আরো গভীর মাত্রা যুক্ত হয় সন্তু লারমার স্ত্রী শিপ্রা দেওয়ানের পুরোনো অভিযোগ সামনে আসায়। শিপ্রা দেওয়ান ২০০৫ সালে পিসিজেএসএস’র সহসভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগে সন্তুর বিরুদ্ধে পরকীয়া, নারী লিপ্সা ও মানসিক নির্যাতনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই সময় তার দুই জামাতা প্রীতিবিন্দু ও প্রধীর তালুকদার কেউই শ্বাশুড়ির পক্ষে দাঁড়াননি।
এ প্রসঙ্গে সুহাস চাকমা প্রশ্ন তোলেন, একজন জামাতা হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে তুমি কি এই ভদ্রমহিলার পক্ষে কথা বলেছো? তুমি সন্তুর দান-খয়রানিতে বেঁচে আছো, নিজের বিবেকও বিকিয়ে দিয়েছো। তুমি কি পারবে শাশুড়ির পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে?
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনাগুলো কেবল ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিবাদের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। এতে জেএসএস-এর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নারী-অধিকার বিষয়ে দ্বিচারিতা এবং নৈতিক সংকটের প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন পাহাড়ের রাজনীতির সাথে জড়িতদের অনেকেই। এমন এক সময়, যখন পাহাড়ে নারী অধিকার, নেতৃত্বের জবাবদিহিতা ও গোষ্ঠীগত ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।

তারা বলছেন, সুহাস চাকমার এই মন্তব্য কোনো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করার জন্য নয়, বরং একটি নৈতিক দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলে ধরে। নেতৃত্ব কেবল বাহ্যিক নয়, তা নিজের পরিবার, সম্পর্ক ও আচরণেও প্রতিফলিত হওয়া উচিত। সন্তু লারমা ও তার ঘনিষ্ঠদের প্রতি এই অভিযোগ গুলো রাজনৈতিক জবাবদিহিতার সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক নৈতিকতার প্রশ্নও সামনে নিয়ে এসেছে। এই অভিযোগ গুলোর যথাযথ অনুসন্ধান ও প্রকাশ একটি স্বাস্থ্যকর গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সুশাসনের দাবিকে আরও শক্তিশালী করবে।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content