প্রতিনিধি ২৭ জুন ২০২৫ , ১২:২২:১৬
শাহাদাত হোসাইন, হাতিয়া প্রতিনিধি-
নোয়াখালী হাতিয়ায় বিদ্যুৎ অফিসের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থেকে নানা ধরনের দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে অফিসের বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান প্রায় ১১ বছর ধরে একই স্থানে কর্মরত থেকে নানা অনিয়মের সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় জনগণ দাবি করছেন, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে তিনি বিদ্যুৎ অফিসকে দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন। সাধারণ গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত এই দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, দুর্নীতির মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, একটি মিটার সংযোগ পেতেও গ্রাহকদের গুণতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা ঘুষ।
অভিযোগের মূল বিষয়সমূহ নিচে তুলে ধরা হলো:
১. সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে ৩,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হচ্ছে সংযোগপ্রতি।
২. গ্রাহকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোরপূর্বক ১-৩ কিলোওয়াট সংযোগ দিয়ে প্রতি কিলোওয়াটে ১,৭৫০ থেকে ২,২৫০ টাকা পর্যন্ত আদায়।
৩. অটোরিকশা চার্জার মিটারের ক্ষেত্রে ১৪,০০০ থেকে ১,৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ।
৪. বরফ কল, রাইস মিল, স-মিল ও অন্যান্য কারখানার মিটারের ক্ষেত্রে ঘুষের অঙ্ক ১.৭ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
৫. ডিজিটাল বিল মিটার পরিবর্তনের জন্য অতিরিক্ত ৪,০০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে, যা অন্যান্য এলাকায় নেয়া হয় না।
৬. পুরাতন মিটারের কিছু গ্রাহক টাকা ফেরত পেলেও নতুন সংযোগকারীরা এখনো টাকা ফেরত পাননি।
৭. বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তেল চুরি ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে, যার ফলে অপ্রয়োজনে লোডশেডিং বাড়ছে এবং ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
৮. স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী প্রতি মিটার সংযোগে ৯০০ থেকে ১,০০০ টাকা করে কমিশন পেতেন—যা তদন্ত সাপেক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
৯. নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান কখনো নিজেকে আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিয়ে রাজনীতির সুবিধাভোগী হিসেবে দুনীতিকে চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
১০. সাধারণ গ্রাহকরা সরাসরি আবেদন করলে নানা অজুহাতে মিটার সংযোগ না দিলেও, দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিলে সহজেই মিটার সংযোগ পাচ্ছেন।
১১. বারবার লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এলাকাবাসীর জোর দাবি:
এইসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় এবং সাধারণ মানুষের হয়রানি বন্ধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে।