আন্তর্জাতিক

গাজা সিটি ছাড়তে অস্বীকৃতি – “এখানেই বাঁচব, এখানেই মরব”

  প্রতিনিধি ১২ আগস্ট ২০২৫ , ৬:১২:১৪

শেয়ার করুন

শাহাদাত হোসেন, প্রতিনিধি-

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা ও সামরিক তৎপরতা ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে গাজা সিটি থেকে সাধারণ মানুষকে দক্ষিণে সরে যেতে দীর্ঘদিন ধরে হুমকি ও নির্দেশ দিয়ে আসছে ইসরায়েলি সেনারা। তারা বাসিন্দাদের আল-মাওয়াসি অঞ্চলে চলে যেতে বলছে, দাবি করছে সেখানে “নিরাপত্তা” আছে। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, গাজার কোনো প্রান্তই আজ আর নিরাপদ নয়—না উত্তর, না দক্ষিণ, না পূর্ব, না পশ্চিম।

গাজা সিটির এক সাহসী নারী উম্মে ইমরান আল-জাজিরাকে বলেন, “ইসরায়েলি বাহিনী বলে দক্ষিণে চলে যাও, আল-মাওয়াসিতে যাও। কিন্তু আর কোনো দিকই নিরাপদ নয়—উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব কিংবা পশ্চিম। কেউই নিরাপদ নয়, কোথাও নিরাপদ নয়। আমরা এখানেই থাকব।” তার কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা ও এক ধরনের প্রতিজ্ঞা, যা প্রতিফলিত করছে গাজার অসংখ্য মানুষের মানসিকতা।

তার মা উম্মে ইয়াসের আরও স্পষ্টভাবে জানান, “গাজা সিটি ছাড়ব না। এখানেই বাঁচব, এখানেই মরব। আমাদের সব স্মৃতি এখানে। সবাই মরে গেলেও, আমাদের সন্তানেরা মরে গেলেও, আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হলেও আমরা যাব না।”

গাজার বহু পরিবার এমনই সিদ্ধান্তে অটল—তারা জানেন, যুদ্ধের ভেতর থাকা মানে প্রতিদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। তবু তারা ভিটেমাটি, স্মৃতি, শিকড় ও ইতিহাস ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেও চান না। গাজার রাস্তাঘাট, স্কুল, মসজিদ, বাজার—সবকিছুই তাদের জীবনের অংশ।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে, গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। কিন্তু বহু গাজাবাসী মনে করেন, নিজের ঘর ছেড়ে “নিরাপদ” বলে দাবি করা শিবিরে যাওয়া মানে অনিশ্চিত এক বন্দিশিবিরে পা রাখা, যেখানে জীবন আরও অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে।

যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মাঝেও গাজা সিটির মানুষ প্রতিদিনই প্রমাণ করছেন—শুধু অস্ত্র দিয়েই নয়, সাহস, দৃঢ়তা ও শিকড়ে বেঁধে থাকা ভালোবাসা দিয়েও লড়া যায় এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধে। তাদের চোখে, গাজা কেবল একটি শহর নয়—এটি তাদের অস্তিত্ব, তাদের মর্যাদা, তাদের জীবন।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content