সারাদেশ

মেঘনার ভয়াল ভাঙনে বিলীন হাতিয়ার মাইলের পর মাইল জমি!

  প্রতিনিধি ১১ আগস্ট ২০২৫ , ৩:২৭:২৪

শেয়ার করুন

শাহাদাত হোসেন, হাতিয়া প্রতিনিধি-

নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে মেঘনার ভয়াল ভাঙন প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও অবকাঠামো। বিশেষ করে চানন্দী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের ভয়াবহতা এতটাই যে, কোনো কোনো পরিবারের একাধিকবার গৃহহারা হওয়ার করুণ অভিজ্ঞতা রয়েছে।

চানন্দী ইউনিয়নের প্রশাসক মুশফিকুর রহমান জানান, “যুগ যুগ ধরে হাতিয়া নদীভাঙনের শিকার হয়ে আসছে। কেউ কেউ জীবনে দুই-তিনবার ঘর হারিয়ে নতুন জায়গায় বসতি গড়েছেন। এখন অনেকেই বেড়িবাঁধের উপর কিংবা সরকারি খাস জমিতে অস্থায়ী আশ্রয়ে জীবনযাপন করছেন।”

ভাঙনের কারণে দ্বীপবাসীর দারিদ্র্যের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। জীবিকার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে, কারণ চাষযোগ্য জমি ও মৎস্য খামার নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার শহরমুখী হচ্ছে, কেউ কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও ভাঙনের প্রভাব স্পষ্ট। অনেক গ্রামীণ বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়ছে, অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসার জন্য দূরদূরান্তে যেতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রতি বছর ভাঙন রোধে ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা স্থায়ী সমাধান এনে দিতে পারেনি। তারা দাবি করছেন, স্থায়ী বাঁধ ও নদীশাসন ছাড়া হাতিয়ার মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত কয়েক দশকে হাতিয়ার হাজার হাজার একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনার ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।

এক প্রবীণ বাসিন্দা আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা জন্মেছি এই দ্বীপে, কিন্তু নদী আমাদের গ্রাম গিলে খাচ্ছে। আজ এখানে, কাল ওখানে—এই আতঙ্কে দিন কাটাই।”

ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, হাতিয়ার একটি বড় অংশ আগামী কয়েক দশকের মধ্যে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content