উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মরক্কো থেকে স্পেনের সেউটায় পৌঁছেছেন এক মা ও তার ১০ বছরের সন্তান। ভয়াবহ ঢেউয়ের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা লড়াইয়ের পর তারা তীরে ওঠেন — সেই মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম এল ফারো দে সেউটা জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, এক শিশু একটি ভাসমান বোর্ড শক্ত করে ধরে আছে, পাশে তার মা। দুজনের শরীরে কেবল ডাইভিং স্যুট ও পায়ের ফিন ছিল। বালুচরে ওঠার সময় তাদের মুখে ক্লান্তি ও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ছিল।
তীরে উপস্থিত মানুষজন বিস্ময়ে দেখেন এই সাহসিক দৃশ্য। স্পেনের সিভিল গার্ড সদস্যরা দ্রুত মা ও শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের সেউটার শরণার্থী গ্রহণকেন্দ্রে নেওয়া হয়।
মরক্কো-সেউটা সীমান্তে বিপজ্জনক যাত্রা
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মরক্কো ও স্পেনের সেউটা সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার হওয়ায় অনেকেই সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিচ্ছেন। যদিও দুই দেশের মধ্যবর্তী দূরত্ব স্বল্প, তবে তীব্র স্রোত ও পাথুরে সৈকতের কারণে পথটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।
গত বছর ১৯ বছর বয়সী মরক্কোর তরুণী ছাইমা এল গ্রিনি একইভাবে সেউটায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি পরে সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “এই পথটা খুব কঠিন। ভালো সাঁতারু না হলে বেঁচে ফেরা প্রায় অসম্ভব।”
মানবিক সংকটের প্রতিচ্ছবি
চলতি বছর অন্তত ৩০ জন মরক্কোর নাগরিক সেউটায় সাঁতার কেটে প্রবেশের চেষ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনা দেশের গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। মরক্কোতে বেকারত্ব বেড়ে ১৩.৩ শতাংশে পৌঁছেছে, আর ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার ৩৬ শতাংশ।
‘জেন জি ২১২’ নামে তরুণদের একটি সংগঠনের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বড় আকারের বিক্ষোভ হচ্ছে। তাদের দাবি — শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন।
নারীদের নতুন দৃষ্টান্ত
গবেষক আলি জুবাইদি বলেন, “এই নারীরা সমাজের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছেন। সেউটায় পৌঁছাতে যে সাহস ও ধৈর্য লাগে, তা নারীরাও দেখাতে পারছেন। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজের হাতে নেওয়ার এই সাহস মরক্কো সমাজে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।”
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ