রাজনীতি ক্ষমতার খেলা নয়; এটি হলো সময়, পরিস্থিতি, মানুষের অনুভূতি ও নেতৃত্বের গুণের ওপর দাঁড়ানো এক দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রাম। এখানে কেউ একদিনেই নেতা হয়ে ওঠেন না, আবার কেউ একদিনেই শেষ হয়ে যান না। রাজনীতি এমন এক নদী, যার স্রোত কখনো শান্ত, কখনো অস্থির—কিন্তু থেমে থাকে না। তাই রাজনীতিতে ‘শেষ’ শব্দটির অস্তিত্ব নেই; কেবল রূপান্তর, পুনর্গঠন ও প্রত্যাবর্তন আছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বহু নেতার উত্থান–পতন—উভয়ই আমরা দেখেছি। আজ যারা শক্তিশালী, কাল তারা একঘরে হয়ে যেতে পারেন। আবার যারা নিস্তব্ধ, তাদের ভিড় থেকে উঠে এসে নেতৃত্বের কেন্দ্রে দাঁড়াতে সময় লাগে না। এই বাস্তবতাই রাজনীতিকে একদিকে কঠিন করে, অন্যদিকে তা আশাবাদের শিল্পে পরিণত করে।
আমরা দেখেছি বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আব্দুল মান্নান কিংবা বি. চৌধুরীর মতো শক্তিশালী নেতাদের অবস্থান। তারা ছিলেন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের নিয়ামক, দলের মুখপাত্র, নীতি নির্ধারণের অগ্রভাগে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, দলীয় কৌশল ও ক্ষমতার বলয়ের পরিবর্তনের কারণে তাঁদের অবস্থান বদলে যায়।
এই উদাহরণ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—রাজনীতিতে কারও অবস্থান স্থায়ী নয়, স্থায়ী কেবল তাঁর রাজনৈতিক আচরণ ও গ্রহণযোগ্যতা।
আরও কাছে তাকালে আমরা দেখতে পাই কৃষক দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান বাবুলের গল্প। তিনি এক সময় দল থেকে বহিষ্কারের তীব্র বাস্তবতা বরণ করেছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা বুঝি এখানেই শেষ। কিন্তু রাজনীতির মাঠ কখনো একরঙা থাকে না।
বাবুল ভাইয়ের যোগ্যতা, কর্মঠ ভূমিকা, সংগঠনের প্রতি আস্থা এবং উপলব্ধির শক্তি তাঁকে ধীরে ধীরে আবার সামনে নিয়ে আসে।
আজ তিনি শুধু দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেই নেই—ফরিদপুরে ধানের শীষের প্রার্থীও হয়েছেন। এই প্রত্যাবর্তন দেখিয়ে দেয়, রাজনৈতিক শাস্তি সাময়িক হতে পারে, কিন্তু যোগ্যতা কখনো চাপা পড়ে থাকে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি বড় সমস্যা হলো—অনেকেই নিজেকে “বড় নেতা” ভাবতে শুরু করেন। ভাবেন তিনি অপরিহার্য। কিন্তু ইতিহাস বলে—দলে কেউ অপরিহার্য নয়, অপরিহার্য হয় কেবল জনআস্থা, দলীয় আনুগত্য, ত্যাগ এবং সংগঠনের জন্য কাজ করার নৈতিক সক্ষমতা।
নিজেকে বড় ভাবা বা অহংকারে আকাশে উড়া কখনোই রাজনীতিকে শক্তিশালী করে না; বরং দলকে বিভক্ত করে এবং নেতৃত্বকে দুর্বল করে।
রাজনীতি প্রতিহিংসার জায়গা নয়।
রাজনীতি প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার নামে দলকেই ক্ষতিগ্রস্ত করা নয়।
রাজনীতি হলো সৌহার্দ্য, পরস্পরকে জায়গা দেওয়ার সংস্কৃতি, মতভেদ মেনে নেওয়ার পরিপক্বতা, এবং কঠিন সময়ে একে অন্যকে তুলে নেওয়ার মানবিক শক্তি।
কারণ শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক অর্জন একা হয় না—হয় দল, মানুষ এবং আদর্শের সমন্বয়ে।
আজ যারা ভাবেন তারা অপরাজেয়, কাল তারা ইতিহাসের প্রান্তে চলে যেতে পারেন। আর যারা আজ চুপচাপ, কাল তারা সামনে এসে দলকে উদ্ধারে ভূমিকা রাখতে পারেন।
এই অনিশ্চয়তা, এই সম্ভাবনা—এই দুয়ের মিলেই রাজনীতি টিকে আছে।
তাই মনে রাখা জরুরি—
রাজনীতিতে পতন নয়, পতনের পর উঠে দাঁড়ানোর শক্তিই প্রকৃত নেতৃত্বের পরিচয়।
---
মোহাম্মদ আলফাজ দেওয়ান
সিনিয়র সহ-সভাপতি, জিয়া সাইবার ফোর্স—কেন্দ্রীয় কমিটি
ই-মেইল: alfazdewan1985@gmail.com
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ