প্রতিনিধি ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৫:০৮:২১

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস—বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধু শোকের দিন নয়, এটি একটি জাতির বিরুদ্ধে সংঘটিত সবচেয়ে পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের স্মরণদিবস। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক পূর্বমুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর-আলশামস বাহিনী সুপরিকল্পিতভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে। লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট—স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ মেধাশূন্য, নেতৃত্বহীন ও দিশাহীন হয়ে পড়ে।
শিক্ষক, অধ্যাপক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদদের চোখ বেঁধে অপহরণ করে রায়েরবাজার ও মিরপুরে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড কোনো যুদ্ধাপরাধের দুর্ঘটনা নয়; এটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা প্রমাণ করে, স্বাধীনতার শত্রুরা শুধু অস্ত্র দিয়েই নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক ধ্বংসের মাধ্যমেও জাতিকে পরাধীন রাখতে চেয়েছিল।
দুঃখজনক বাস্তবতা হলো—স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও সেই পরাজিত শক্তির রাজনৈতিক উত্তরাধিকারীরা বিভিন্ন রূপে সক্রিয় রয়েছে। কখনো ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে, কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, আবার কখনো গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে তারা একই ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপস মানেই জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রক্তের ঋণ শুধু ফুল দিয়ে শোধ করা যায় না। এই ঋণ শোধ করতে হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি বৈষম্যহীন, জবাবদিহিমূলক ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থাই হতে পারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।
১৪ ডিসেম্বর আমাদের শপথের দিন। শপথ এই যে, স্বাধীনতার শত্রুদের পুনর্বাসন আমরা মেনে নেব না; ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবো; এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যাব।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করুক—আমরা কি সত্যিই তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পেরেছি?
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
—
লেখক:
মোহাম্মদ আলফাজ দেওয়ান
যুগ্ম-আহবায়ক, কৃষকদল — গাজীপুর মহানগর
সিনিয়র সহ-সভাপতি, জিয়া সাইবার ফোর্স (কেন্দ্রীয় কমিটি)

















