১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির জীবনে শুধু একটি তারিখ নয়—এটি আত্মপরিচয়, আত্মমর্যাদা ও রাজনৈতিক মুক্তির প্রতীক। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি পরাধীন জাতি বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে। লাখো শহিদের আত্মত্যাগ, অসংখ্য নির্যাতিত মা-বোনের অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে সকল শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
মুক্তিযুদ্ধ কেবল সামরিক সংঘর্ষ ছিল না—এটি ছিল একটি রাজনৈতিক মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘদিনের বৈষম্য, বঞ্চনা ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিরোধই এই যুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়ায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী প্রমাণ করে দেয়, বাঙালির অধিকার আদায় কেবল শান্তিপূর্ণ রাজনীতির মাধ্যমে সম্ভব নয়।
এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ঘোষণা, যা মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণভাবে একটি সুস্পষ্ট রাষ্ট্রিক রূপ দেয়। সেই ঘোষণা মুক্তিকামী জনতার মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করে, যুদ্ধের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধতা প্রতিষ্ঠা করে।
জিয়াউর রহমান কেবল ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তিনি সরাসরি যুদ্ধ পরিচালনা করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন এবং সামরিক কৌশলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাঁর নেতৃত্ব ছিল বাস্তববাদী, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও ফলপ্রসূ—যা মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক গতিপথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা আরও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের পথে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দর্শন প্রবর্তন করেন, যেখানে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দেওয়া হয়। বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করেন, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টি করে।
বিজয় দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি, আর তা রক্ষা করাও সহজ নয়। যখনই গণতন্ত্র সংকুচিত হয়েছে, যখনই একদলীয় বা কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়েছে, তখনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাই বিজয় দিবসের শিক্ষা হলো—স্বাধীনতা মানে শুধু ভূখণ্ড নয়, স্বাধীনতা মানে মত প্রকাশের অধিকার, ভোটাধিকার ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত—শহিদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করা, ইতিহাসকে বিকৃত না করে সত্যকে ধারণ করা এবং একটি গণতান্ত্রিক, সার্বভৌম ও জনগণের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
সকল শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
লেখক-মোহাম্মদ আলফাজ দেওয়ান
যুগ্ম আহবায়ক-কৃষকদল গাজীপুর মহানগর।
সিনিয়র সহ-সভাপতি জিয়া সাইবার ফোর্স(কেন্দ্রীয় কমিটি)
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ