জাতীয়

লাগামহীন বাজারে মিনিটে মিনিটে বাড়ছে পেয়াজের দাম

  প্রতিনিধি ৯ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১০:১৭:৩৭

শেয়ার করুন

ভারতের রপ্তানি বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণার পর দেশের বাজারে হু হু করে বাড়ছে পিয়াজের দাম। খুচরা বাজারে ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে বেড়েই চলছে দাম। শুক্রবার দুপুরে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি পিয়াজ শনিবার বাজারভেদে বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। আর আমদানিকৃত পিয়াজ (ইন্ডিয়ান) বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। শনিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, রায়ের বাজার, হাতিরপুল বাজার, পলাশী বাজার, শান্তিনগর বাজার, মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজার, রামপুরা কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজারে ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন রপ্তানি বন্ধের ঘোষণাকে পুঁজি করে পিয়াজ আটকে রেখে মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র।

গত ৮ই ডিসেম্বর পিয়াজ রপ্তানি আগামী ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বন্ধের আদেশ জারি করে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)। এ খবর দেশের বাজারে ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার রাতেই দেশি পিয়াজের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে যায়। শনিবার সকাল থেকে আরেক দফা বাড়ে এই দাম।

 

কাওরান বাজরের বিক্রমপুর ভাণ্ডার, মায়ের দোয়া বাণিজ্যলয়, আল্লাহর দান বাণিজ্যলয়, সোনার বাংলা বাণিজ্যলয়, আরাফাত ট্রেডার্স, মক্কা ট্রেডার্স, মিনহাজ ট্রেডার্সসহ বিভিন্ন পিয়াজের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি পিয়াজ। আড়তদার মো. সালাম বলেন, আমরা যাদের কাছ থেকে পিয়াজ কিনে এনে বিক্রি করি, তারা সকলে মাল আটকে ফেলেছে।

 

বলছে- কারোর কাছে মাল নেই। অন্যদিন ১০ গাড়ি পিয়াজ আসলেও আজকে সকাল থেকে হাতে গোনা দুই-একটি গাড়ি এসেছে। তাও দাম বাড়তি।
তিনি বলেন, আমরা বেশি দিয়ে কিনছি তাই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছি। ‘বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে ভোক্তা অধিকার অভিযান চালাতে পারে’-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোথাও মাল নেই। লাগাতার দাম বেড়েই চলেছে। এরপরও আমরা বেশি দাম দিয়ে পিয়াজ কিনে এনে বিক্রি করছি। এখন অভিযানের নামে আমাদেরকে হয়রানি করা হলে সকল আড়তদার একসঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে বসে থাকবে। তখন দাম আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। নিজের টাকা দিয়ে পণ্য কিনে এনে লসে বিক্রি করতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করেন এই ব্যবসায়ী। এদিকে পাইকারি আড়তের ১’শ গজের মধ্যেই একই পিয়াজ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি)। যা প্রতি কেজিতে দাম পড়ছে ২১০ টাকা। আবার কেজি হিসাবে নিলে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। একদিন আগে একশ’ টাকার কমে বিক্রি হওয়া আমদানিকৃত পিয়াজ শনিবার দুপুর থেকে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা কেজিতে। মো. আনিছুর রহমান নামের একজন ক্রেতা বলেন, গতকাল বাজারের দেশি পিয়াজ ১২০ টাকা দেখে গেছি। আজকে এসে দেখি এক রাতের ব্যবধানে দাম ডাবল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাজারে পিয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত পিয়াজ রয়েছে। এরপরও দাম বেড়েই চলেছে। শুনলাম কালকে দাম আরও বাড়বে।

মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী সোহরাব মিয়া বলেন, ভোরে কাওরান বাজার থেকে বহু কষ্টে সাড়ে ৭ হাজার টাকা মণ দরে ৪ মণ পিয়াজ এনেছি। আনতে খরচ পড়ছে আরও ৫০০ টাকা। এর ওপর আমার দোকান ভাড়া আছে। সবমিলে ২৩০ টাকা কেজির নিচে বিক্রি করলে আমার লোকসান হবে। মিরপুর-৬ নম্বর বাজারে আসা ইকরামুল হক নামে এক ক্রেতা বলেন, কিছুদিন পরপরই পিয়াজ নিয়ে কারসাজি শুরু হয়। কয়েকদিন আগেও পিয়াজ নিয়ে কতো কাণ্ড। সরকার দাম বেঁধে দিলো; কিন্তু তা বাস্তবায়ন হলো না আজও। এখন আবার সেই একইদিকে যাচ্ছে পিয়াজের বাজার। তিনি বলেন, ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে গতকালকে। কিন্তু দেশে যেই পিয়াজ আগে ছিল, তা এখনো আছে। এক রাতে তো আর সকল পিয়াজ উধাও হয়ে যায়নি।

ধানমণ্ডির রায়ের বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজ বলেন, ভোরে পাইকারি আড়তে গিয়ে দেখি কেউ পিয়াজ বিক্রি করতে চাইছে না। বলছে মাল নেই। রসুন, আদা সব আছে, পিয়াজ নেই। বহু কষ্টে দুই মণ পিয়াজ আনতে পেরেছি। আমি পাইকারিতে ৭ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে কিনেছি। আনতে খরচ পড়ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তাই ২৩০ টাকার নিচে বিক্রি করতে পারছি না। তিনি বলেন, আমরা আড়ত থেকে যেই দামে কিনে আনি, তার সঙ্গে দোকান ভাড়া, পরিবহন খরচ যোগ করে বিক্রি করি। আগামীকাল আবার আড়তে যাবো। যেই দাম পাবো, সেই দামে আমাদের বিক্রি করতে হবে। তবে পিয়াজের এই দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে হাতিরপুল বাজারে শনিবার বিকালে কেজিপ্রতি পিয়াজ ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আজিমপুরের পলাশী বাজার, শান্তিনগর, রামপুরা কাঁচাবাজারেরও একই অবস্থা। পলাশী বাজারের মিজান নামের একজন খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, রাতারাতি পিয়াজের এমন দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতারাও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। অনেকেই বাজারে এসে পিয়াজ না কিনে ফিরে যাচ্ছেন। সকলে মনে করছেন আমরা তাদের কাছ থেকে গলাকাটা দাম নিচ্ছি। কিন্তু এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আড়তদাররা মাল ছাড়ছেন না। যা দুই এক মণ পাওয়া যাচ্ছে তারও দাম আকাশ ছোঁয়া। আমরা ব্যবসা ধরে রাখার জন্য দাম বেশি দিয়েই মাল কিনে আনছি। তাই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, পিয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই সারা দেশে আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তার নেতৃত্বে চারটি দল ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারাও দেশের ভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছেন। পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত আমাদের এই অভিযান চলমান থাকবে।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content