জাতীয়

দিবস ছাড়া অযত্নে সাভারের জাতীয় স্মৃতিশৌধ

  প্রতিনিধি ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৫:৫৪:৫৪

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টারঃ বছরে দুটো দিন। ২৬ মার্চ আর ১৬ ডিসেম্বর। এ দুই জাতীয় দিবস এলেই শুরু হয় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ধোয়ামোছা ও মেরামতের এক মহাকর্মযজ্ঞ। বছর বছর চলে একই কাজ। পাস হয় নতুন বিল, খরচ হয় ইচ্ছেমতো। জাতীয় এই স্থাপনার বাকি সময়টা কাটে নীরবতায়, অবহেলায়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বীর বাঙালির লড়াই আর শহীদদের প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতার নিদর্শন জাতীয় এই স্মৃতিসৌধ। রাজধানী থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের নবীনগর এলাকায় ১০৮ একর জমির ওপর এই সৌধের নির্মাণ শুরু ১৯৭২ সালে। শেষ হয় ১৯৮৮ সালে।
এই স্মৃতিসৌধের মূল আকর্ষণ মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভ। স্বাধীনতা-সংগ্রামের সাতটি পর্যায়কে তাৎপর্যমণ্ডিত করে তৈরি করা হয়েছে ১৫০ ফুট উঁচু সাতটি ত্রিভুজ আকৃতির মিনার। এ ছাড়া এই স্থাপনা এলাকায় রয়েছে পায়ে চলার পথ, কৃত্রিম হ্রদ, সাঁকো, অজ্ঞাতনামা শহীদদের কবর, বাগান আর সবুজ বলয়।
প্রতিবারের মতো এবারও গেছে ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। সঙ্গে কয়েক দিন ধরে শুরুও হয়েছিল ধোয়ামোছা, রং-তুলির আঁচড় আর মেরামতের কাজ। বিজয়ের মাস না পেরুতেই বদলে গেছে এর চিত্র। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দর্শনার্থীদের আনাগোনায় পরিপূর্ণ। সেলফি, ছবি তোলায় ব্যস্ত ঘুরতে আসা মানুষদের। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের উপরে উঠে সেলফি, ছবি তুলছে দেদারসে। টিকটকাররা তৈরী করছে ভিডিও। তবুও স্মৃতিশৌধে দায়িত্বরত কর্মকর্তা কর্মচারী ও নিরাপত্তা কর্মীদের কোন মাথাব্যথা নেই।
সাভারের জাতীয় স্মৃতিশৌধে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী স্মৃতিশৌধের মূল স্তম্ভের কাছেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরের উপর উঠে ভিডিও নির্মাণ করছেন। তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের এই গণকবর সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি জানান,গণকবর গুলোতে কোন লেখা বা সাইনবোর্ড নেই যে এটা করব। আমরা কিভাবে জানবো এটা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর? আপনার মাধ্যমে এখন জানলাম এই ভুল আর হবে না।
এমন আরেক দর্শনার্থী তার পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন দুপুরের দিকে। বিশাল জায়গা জুড়ে স্মৃতিশৌধটি ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। এমন সময় জনবাণীর ক্যামেরায় ধরা পরে তার ছবি তোলার দৃশ্য। ছোট মেয়েকে গণকবরের উপরে দাঁড় করিয়ে হাস্যজ্বল ভাবেই ছবি তুলছেন। সেও জানেনা আসলে এখানে কি আছে?
বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মৃতিসৌধের সামনের সব দোকানপাট, গ্যারেজ সাময়িকভাবে তুলে দেওয়া হলেও মূল ফটকের দুপাশে আবারও ভরে উঠেছে ফুটপাতে।

মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরে উঠে ভিডিও তৈরী, ছবি ও সেলফিতে মাতিয়ে থাকার চিত্র প্রতিনিয়ত। জাতীয় স্মৃতিশৌধের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এই দায়িত্বহীনতার বিষয়ে কথা বলতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মিজানুর রহমানের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধের ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ইতিহাস জানতে পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্ভুদ্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

মোঃ আব্দুল কাদের/হক_কথা


শেয়ার করুন